gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৮ জুলাই ২০২৫ ৩ শ্রাবণ ১৪৩২
gramerkagoj
শিরোনাম
শিরোনাম পাশাপাশি দাফন করা হলো হামলায় নিহত পিতা-পুত্রকে আবারও গণতন্ত্র রুদ্ধ করার অপচেষ্টা চলছে: অমিত অতিবৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট, আমন চারা সংকটের শংকায় কৃষক কেশবপুরে জলাবদ্ধতায় বাধ্য হয়েই কাটা হচ্ছে অপরিপক্ক পাট জামায়াতের মহাসমাবেশ সফল করতে মোরেলগঞ্জে লঞ্চযোগে কর্মীদের ঢল সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনে বাবু সভাপতি ও রাজ্জাক সম্পাদক নির্বাচিত ঢাকায় জামায়াতের সমাবেশে অংশ নিতে রাজশাহীতে বিশেষ ট্রেন গাইবান্ধায় ইপিজেড স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন: সাঁকোয়া ব্রিজ এলাকায় বাস্তবায়নের আহ্বান আনোয়ারায় র‌্যাবের অভিযানে ৩ কোটি টাকার ইয়াবাসহ নারী আটক রাজাপুরে ছাত্রদল নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল, সমালোচনার ঝড়

❒ মোসাদের এক ‘গুপ্তচরকে’ ফাঁসিতে ঝোলাল ইরান

ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলা
প্রকাশ : সোমবার, ১৬ জুন , ২০২৫, ১০:০১:০০ পিএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2025-06-16_68504007a7ec5.jpg

ইসরায়েলে আবার হামলা চালিয়েছে ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি জানিয়েছে, ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব, হাইফা ও অন্যান্য নগরীতে আঘাত হেনেছে একের পর এক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন।
এদিকে, পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেই ইরান ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে।
শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স সোমবার এ খবর দিয়েছে বলে জানিয়েছে দুবাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল অ্যারাবিয়া। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া ব্যক্তির নাম ইসমাইল ফকরি।
এ নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইরান ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার দায়ে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল।
ইরানের বিচারবিভাগ সংশ্লিষ্ট বার্তা সংস্থা মিজান অনলাইন বলছে, ইরানের সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের দণ্ড বহাল রাখায় ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থার এক ‘ছদ্মবেশী এজেন্টের’ ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসমাইল ফকরির সঙ্গে মোসাদের দুই কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল এবং তিনি ইরানের ‘শত্রুদের’ কাছে গোপনীয় ও সংবেদনশীল তথ্য পাচার করেছিলেন বলে ভাষ্য তেহরানের।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইরানি কর্তৃপক্ষ ফকরিকে গ্রেপ্তার করে ও তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনে।
ইরানের বিচার বিভাগ তার ফাঁসিকে ইসরায়েলি গুপ্তচর নেটওয়ার্কের জন্য ‘বড় ধরনের আঘাত’ হিসেবে অভিহিত করেছে বলে জানিয়েছে মিজান অনলাইন।
ইসরায়েলে আবার হামলা চালিয়েছে ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি জানিয়েছে, ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব, হাইফা ও অন্যান্য নগরীতে আঘাত হেনেছে একের পর এক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন।
ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন স্তর ভেদ করে গেছে বলে খবরে দাবি করা হয়েছে। তবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
ইরানের এই হামলার মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান ইরানে শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে।
রোববার ইরানের হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের পুলিশ জানায়, জরুরি সেবা বিভাগ তেল আবিবের উত্তরাঞ্চলীয় বন্দর নগরী হাইফার একটি বসতিতে অস্ত্র আঘাত হানার খবর পেয়েছে।
এতে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তবে সম্পত্তির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
হাইফা থেকে পাওয়া ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে রাতের আকাশে ঘন ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স হাইফায় একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়া এবং বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাওয়ার খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী ইরান থেকে নতুন করে আরও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করার পর ইসরায়েলি নাগরিকদের দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানায়। হামলায় আহত দুইজনকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা জানিয়েছে ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।
এদিকে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গভীর রাতে ইসরায়েলের একটি আবাসিক ভবনে আঘাত হানার পর সকালজুড়ে ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করছেন উদ্ধারকর্মীরা। ২০ তলা ভবনের মাঝখানে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্ত। এই হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে দুইজন আশ্রয়কেন্দ্রেও অবস্থান করছিলেন।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি দুটি বোমা আশ্রয়কেন্দ্রের মাঝের দেয়ালে আঘাত করে। দেয়ালটি সরাসরি বিস্ফোরণের ধাক্কা সহ্য করতে পারেনি। তৃতীয় এক বাসিন্দা উপরের তলায় ছিলেন। হামলায় আশপাশের আরও তিনটি ভবনও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মোট প্রায় ৩০০টি ফ্ল্যাট এখন খালি। বাসিন্দারা তাদের মালপত্র সংগ্রহ করতে এলেও কেউ জানেন না কবে ফিরতে পারবেন। সকাল ৪টার দিকে এ হামলা ঘটে। এলাকাটি আবাসিক, আশপাশে কোনও কৌশলগত স্থাপনাও নেই।
ইসরায়েল বলছে, ইরান ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। দেশটির সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ইরানি পাল্টা-হামলা ইসরায়েলের বড় পরিসরের সামরিক অভিযানের জবাব।
এ ঘটনায় ইসরায়েলজুড়ে মনোভাবের পরিবর্তন স্পষ্ট। বহু ইসরায়েলি বিশ্বাস করতেন, তাদের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। কিন্তু ইরানের পাল্টা হামলার পর সেই আস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখনও শক্তিশালী, তবে ‘শতভাগ নিখুঁত’ নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই হামলা ইসরায়েলিদের মনস্তত্ত্বে বড় ধাক্কা দিয়েছে—কেবল ক্ষয়ক্ষতির জন্য নয়, নিরাপত্তাবোধেরও অবসানের জন্য।
সূত্র: বিবিসি
ওদিকে, ইসরায়েলের হামলাও থেমে নেই। ইরানের বিভিন্ন নিশানায় লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলও।
দুই দেশের এই পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফক্স নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন,“ইসরায়েলের অস্তিত্বে হুমকি দূর করতে তার সরকার প্রয়োজনীয় সব কিছুই করবে।”
ইরানে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর অভিযান দেশটির শাসনক্ষমতা পরিবর্তনেরই চেষ্টা কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, “শাসক পরিবর্তন অবশ্যই এই অভিযানের ফল হতে পারে। কারণ ইরানের শাসনব্যবস্থা এখন অত্যন্ত দুর্বল।”
ইরানের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীতে লোকজন তেমন নেই এবং দেশটির জনগণের ৮০ শতাংশই সরকারকে উৎখাত করতে চায় বলেও নেতানিয়াহু দাবি করেন।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এর আগে বলেছিল, ইরানে তাদের অভিযানের লক্ষ্য শাসন পরিবর্তন করা নয়, বরং ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নির্মূল করা।
তবে ফক্স নিউজের ‘স্পেশাল রিপোর্ট’ প্রোগ্রামে নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা দুটি লক্ষ্য হাসিল করতে যা কিছু করা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত। আর তা হল: অস্তিত্বে হুমকি দূর করা এবং পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি দূর করা।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা নিজেদেরকে বাঁচাতে অভিযান শুরু করেছি। কিন্তু আমি মনে করি কেবল আমাদের নিজেদেরকেই বাঁচানো নয়, বরং বিশ্বকে এই অগ্নিগর্ভ শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক শাসকগোষ্ঠীর হাতে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্র থাকতে দিতে পারি না,” বলেন নোতানিয়াহু।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আগেই জানিয়েছিলেন, তাদের সামরিক অভিযান কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। তিনি একইসঙ্গে ইরানি জনগণকেও দেশটির ‘ইসলামি শাসকদের’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
অপরদিকে, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকে বেরিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে ইরানের পার্লামেন্টের সদস্যরা একটি বিল তৈরি করছেন।
সোমবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ খবর জানিয়েছে। তবে একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় ইরান সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে, তারা ধ্বংসের জন্য পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর বিরোধী।
ইরানের এনপিটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাঈ বলেন, “সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি যথাযথ সিদ্ধান্ত নেব।
“সরকার পার্লামেন্টের বিল বাস্তবায়ন করতে বাধ্য, তবে এই প্রস্তাব এখন কেবল প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে আমরা এটি পার্লামেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করব।”
১৯৭০ সালে এনপিটি চুক্তি অনুমোদন করেছিল ইরান। এই চুক্তি অনুযায়ী, দেশগুলো বেসামরিক পরমাণু শক্তি কাজে লাগাতে পারে। বিনিময়ে তাদেরকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত থাকতে হয় এবং আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা করতে হয়।
গত সপ্তাহে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালায়। তারা দাবি করে, তেহরান পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তবে ইরান বরাবরই বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। যদিও আইএইএ গত সপ্তাহে এক ঘোষণায় জানিয়েছে যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) শর্ত লঙ্ঘন করছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান কয়েকদিন আগেই জানিয়েছিলেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাতে চায় না। তারপরই তেহরানের এনপিটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির খবর এল।
তবে সোমবার পেজেশকিয়ান আবারও তার আগের অবস্থান জানান দিয়ে বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ধর্মীয় ফরমানের বিরুদ্ধে যায়।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, এনপিটি থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি পার্লামেন্ট। প্রস্তাবটি আইনি প্রক্রিয়ার কেবল প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
ইরানের এপথে পা বাড়ানোর কারণ হিসাবে ইসরায়েলের হামলার মতো প্রেক্ষাপটই তুলে ধরেছেন ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাঘাঈ। তিনি বলেন, “এ ধরনের ঘটনা (ইসরায়েলের হামলা) স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রের কৌশলগত সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।”
ইরানের চুক্তির বাধ্যবধকতা না মানা নিয়ে আইএইএ যে প্রস্তাবনা এনেছে সেই পদক্ষেপকে দোষারোপ করে বাঘাঈ বলেন, ওই প্রস্তাবনার পরেই ইরানে ইসরায়েলের হামলা হয়েছে।
“যারা আইএইএ-র প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তারাই এই হামলার পথ প্রশস্ত করেছেন”, বলেন তিনি।
রয়টার্স লিখেছে, ইসরায়েল কখনও এনপিটি চুক্তিতে সই করেনি। তবে আঞ্চলিক দেশগুলোর ধারণা, ইসরায়েলের হাতে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। তবে ইসরায়েল এই বিষয়টি কখন নিশ্চিত কিংবা অস্বীকার কোনোটিই করেনি।
ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাঘাঈ বলেন, “এ অঞ্চলে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের একমাত্র ধারক হচ্ছে দখলদার ইহুদি শাসকগোষ্ঠী।”

 

 

আরও খবর

🔝