শিরোনাম |
❒ সেকেন্ড লিড, উপরে উচ্ছেদের ছবি যাবে
১৬ জুন দুপুরে যশোর শহরের হতদরিদ্রের জীবীকার উপর গর্জে ওঠে স্কেভেটর। যশোর পৌরসভা এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অংশ হিসেবে অভিযান শুরু করে পৌর প্রশাসন। এদিন শহরের কয়েকটি সড়কে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এদিন দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপি অভিযানে ফুটপাত ও সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা দু’শতাধিক দোকানপাট গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এ অভিযান চলমান থাকবে বলে পৌর প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে। তবে পুণর্বাসন না করে হত দরিদ্রদের স্থাপনা ভেঙে দেয়ার ঘটনায় অনেকে দিয়েছেন নানামুখি বক্তব্য।
তাদের দাবি, শহরের অনেক রাঘববোয়াল যে অবৈধ স্থাপনা করে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছে, দ্রুত তাদেরকেও উচ্ছেদ করতে হবে প্রশাসনকে।
১৬ জুন বেশ শক্তিশালী অবয়বে পুলিশসহ হাজির হয়ে পৌর প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। প্রথমে যশোরের জজ কোর্ট মোড় থেকে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। সেখান থেকে সিভিল কোর্ট মোড়, টাউন হল ময়দানের সামনের ফুটপাতের সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেয়া হয়। পরে অভিযানিক টিম কালেক্টরেট চত্বরের সামনের ফুটপাত দখলমুক্ত করেন। স্কেভেটর দিয়ে দোকানপাট গুঁড়িয়ে ফেলা হয়। এরপর দড়াটানা মোড়ে হাজির হয় হন। সেখানে ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বিশেষ করে খেলাধুলা সামগ্রীর দোকান এবং ফুলের দোকানগুলোর আশপাশে যে বাড়তি স্থাপনাগুলো গড়ে উঠেছিল সেগুলোও ভেঙে দেয়া হয়। দড়াটানায় অভিযান শেষে অভিযানিক টিম বকুলতলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। সেখানেও ফুটপাতের দোকানগুলো অপসারণ করা হয়। সব মিলিয়ে গতকাল দুপুরে দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সময় হা হুতাশ করতে দেখা যায় হতদরিদ্র দোকানীদের। তাদের বিকল্প স্থাপনা করার জায়গা না দিয়েই এবং পর্যাপ্ত সময় না দিয়েই ভাংচুর করে তাদের পেটে লাথি মারা হয়েছে বলে তারা আক্ষেপ করেন।
যশোর পৌরসভার নাগরিক শাহিদুর রহমান জানিয়েছেন, গরীবের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে, অথচ বড়লোকদের বড় অবৈধ বিল্ডিংয়ে টাচ করা হচ্ছে না। দোহাই দেয়া হচ্ছে ওটা মহামান্য হাইকোর্টে মামলা চলছে। সরকারি জায়গায় বিল্ডিং করবে তাহলে হাইকোর্ট মামলা নেবে কেনো!। প্রভাবশালীদের অবৈধভাবে গড়ে তোলা ভবনের দিকে চোখ দেয়ার জন্যও দাবি তোলেন তিনি।
শাহিনুর রহমান মিলন নামে অপর একজন জানিয়েছেন, যশোরের হাইকোর্ট মোড়ে অনেকগুলো অবৈধ স্থাপনা ও দোকান ঘর আছে। যেগুলো রাস্তা দখল করে মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এখানে দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান চালানোর দাবিও তোলেন তিনি।
আবু হুরাইরা নামে একজন দাবি তুলেছেন, যশোরের প্যারিস রোডে অনেকে ব্যবসা করছেন। তারা কি উচ্ছেদ হবেন? নাকি তারা সরকারি সব ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করছেন?
তবে অন্য কথাও বলেছেন কেউ কেউ। পৌর নাগরিক আশিকুজ্জামান পৌরসভার এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, সুন্দর একটি কাজ। তবে তার সাথে আরো একটি কাজ করলে অনেক ভালো হবে। এখানে ওখানে যেখানে সেখানে বিভিন্ন বড় বড় ব্যানার পোস্টার লাগানো আছে এবং সেখানে বড় বড় মানুষের শুভেচ্ছা বার্তা দেয়া আছে। এসব পোস্টারও উচ্ছেদ করা দরকার।
এদিকে একটি সূত্রের দাবি, ভৈরবের দু’পাড়ে এখনও অনেক কাঁচা পাকা অবৈধ স্থাপনা বহাল রয়েছে। ডজনখানেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, গোডাউন, বাড়িও রয়েছে। কোনোটি নদের সীমানায়, কোনোটি পৌরসভার জায়গায়, আবার কোনোটি সড়কের জায়গায়। এর আগে অবৈধ দখলদারদের একটি অংশ ভাঙা হলেও নানামুখি দৌড়ঝাঁপ ও মামলার কারণে জেলা প্রশাসনও কার্যকর ব্যবসা নিতে পারেনি। এ ব্যাপারে নতুন করে অভিযানের দাবিও তুলেছেন অনেকে।
গতকাল পৌর প্রশাসন পরিচালিত অভিযানের ব্যাপারে প্রকৌশলী কামাল আহম্মেদ জানিয়েছেন, এ অভিযানে ফুটপাতের অন্তত ২শ’৫০টি দোকান ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। যশোর শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত ও জনসাধারণের চলাচলের জন্য উপযুক্ত করতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। জনস্বার্থে শহরকে শৃঙ্খলিত রাখতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে, থাকবে।