gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
লম্বা ছুটি শেষে কর্মস্থলে কর্মজীবীরা দীর্ঘদিন পর স্বস্তির ঈদ উদযাপন
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১২:০৬:০০ এ এম , আপডেট : সোমবার, ২৯ এপ্রিল , ২০২৪, ০৫:০৪:৩৭ পিএম
এম. আইউব:
GK_2024-04-15_661d3ad41a92d.webp

মুসলিমদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এবারের এই ঈদে ছিল বাড়তি আমেজ। এর কারণ হচ্ছে, সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে ছিল একটানা পাঁচদিন ছুটি। আর এই ছুটি পেয়ে যেমন খুশি চাকরিজীবীরা, একইভাবে খুশি হন তাদের পরিবারের লোকজন। খুশি ছিল গণমাধ্যম কর্র্মীদের স্বজনরাও। কারণ প্রথমবারের মতো গণমাধ্যম কর্মীরা একটানা ছয়দিন ছুটি ভোগ করার সুযোগ পান। যা ইতিপূর্বে কখনো হয়নি। এ কারণে ছিল বাড়তি আনন্দও।
যশোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এবার শান্তিপূর্ণভাবেই ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে পেরেছেন। স্বস্তিতে ছিলেন সবাই। এর আগে পরপর দু’বছর করোনা মহামারি মানুষের ঈদ আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছিল। এবার সেই তুলনায় করোনা নেই বললেই চলে। ফলে, ঈদ উদযাপিত হয়েছে ব্যাপক উৎসবের মধ্য দিয়ে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বিপুলসংখ্যক মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যান। এভাবেই মানুষের কাছে প্রকৃত অর্থেই আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে ঈদ। সবমিলিয়ে ঈদের ছুটিতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটেনি।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। ঈদের দিন সকালে যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঈদগাহ ও মসজিদে ঈদুল ফিতরের দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন। নতুন পোশাক পরে আনন্দমুখর পরিবেশে যান ঈদগাহে। নামাজ শেষে একে অপরের সাথে করেন কোলাকুলি। বেড়াতে যান একে অপরের বাড়ি। ঘরে ঘরে সেমাইসহ নানা ধরনের খাবার রান্না হয়। ঈদে নতুন পোশাকে শিশুদের আনন্দ ছিল সবচেয়ে বেশি। ১০ এপ্রিল ঈদের চাঁদ দেখার পরপরই শুরু হয় শুভেচ্ছা বিনিময়। সাক্ষাতে, মোবাইল ফোনে, এসএমএসে, ফেসবুক, ইমেইলে সারাদিন শুভেচ্ছা বিনিময় চলে। অনেকদিন পর প্রিয়জনকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসেন অনেকেই।
মহাসড়কগুলোর উন্নতি হওয়ায় এবার ঈদে ভোগান্তি কমে ঘরমুখো মানুষের। মহাসড়কে এই ঈদে বড় ধরনের কোনো দুর্ভোগের কারণ ঘটেনি। এমনকি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ও দেখা দেয়নি অতীতের মতো। সুখবর হচ্ছে, নৌপথেও ঘটেনি কোনো দুর্ঘটনা। তবে, পরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য ছিল আলোচনায়।
এবারের ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঝড়বৃষ্টি হলেও যশোরসহ আশপাশে বৃষ্টি কিংবা ঝড় কোনোটাই হয়নি। এদিনের আবহাওয়া ছিল স্বস্তিদায়ক। যশোরাঞ্চলে ঈদ উদযাপিত হয়েছে আনন্দ-উৎসাহের মধ্য দিয়ে। ঈদে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষের আনন্দে গ্রামগুলো হয়ে ওঠে উৎসবমুখর।
সোমবার ঈদ ও বাংলা নববর্ষের একটানা পাঁচদিনের ছুটি শেষে কর্মজীবী মানুষ তাদের কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করলেও সংখ্যায় ছিল কম। ছুটি শেষে সোমবার প্রথম কর্মদিবস ঈদের আমেজেই কেটেছে অফিস ও ব্যাংকপাড়ায়। অফিস এবং ব্যাংকে এখনো ফেরেনি প্রাণচাঞ্চল্য ও কর্মব্যস্ততা। লম্বা ছুটির পরে সহকর্মীদের সঙ্গে প্রথম দেখা; এ কারণে কোলাকুলি আর গল্পগুজবেই দিন পার করেন অনেকেই।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, লম্বা ছুটির পর সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা ছিল। আর ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। বাকি সময় দাপ্তরিক কাজের জন্য খোলা রাখা হয়।
রমজানে ব্যাংকে লেনদেন চলে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এবং অন্যান্য অফিসিয়াল কার্যক্রম চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরমধ্যে দুপুর সোয়া একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত নামাজের জন্য বিরতি ছিল। বিরতিতে স্বাভাবিক সময়ের মতো অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের মাধ্যমে লেনদেন কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।
এবার ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল ছিল ঈদুল ফিতরের ছুটি। এরপর ১৩ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি এবং ১৪ এপ্রিল ছিল নববর্ষের ছুটি। অর্থাৎ ১০ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা পাঁচদিন ছুটি কাটিয়েছেন চাকুরেরা। এবারই প্রথম দীর্ঘ ছয়দিনের ছুটি উপভোগ করেন গণমাধ্যম কর্মীরা। ফলে, গণমাধ্যম কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উৎফুল্ল ছিলেন।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলিমরা সামর্থ্য থাকলে ফিতরা দেন গরিব মানুষকে। এরপর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের মাধ্যমে মুসলিমরা ঈদুল ফিতর পালন করেছেন।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে ঐতিহ্যগতভাবে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয় তিনদিন ধরে। ঈদের প্রথম দিন শুরু হয় মূলত জামাতের সঙ্গে দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে। যা ফজরের নামাজের পরপরই মসজিদ, ঈদগাহ বা উন্মুক্ত মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পুরুষের পাশাপাশি পৃথকভাবে ঈদের জামাতে অংশ নেন নারীরাও। নামাজের পরই ইমাম সংক্ষিপ্ত খুতবা পাঠ করেন। খুতবার সময় মুসল্লিরা মহান আল্লাহর প্রশংসায় ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহি ইলা হামদ’ তাকবির পাঠ করেন। নামাজ শেষে মুসল্লিরা শুভেচ্ছা বিনিময়, করমর্দন এবং কোলাকুলি করেন একে অপরের সঙ্গে।
ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মামউল নামে খেজুর ভর্তি একধরনের বিস্কুট খাওয়া হয়। মিষ্টি খাওয়া ও বিতরণ মুসলিম বিশ্বের একটা অভিন্ন রীতি।
মুসলিমরা সাধারণত ঈদের প্রথম দিনটি কাটায় আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখা করে। এ সময় অতিথিদের সাধারণত মিষ্টি, মিষ্টি জাতীয় খাবার ও অন্য সুস্বাদু খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় ঘরে ঘরে।
খাবারের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবার রয়েছে যা ঈদের প্রথম দিনের সকালে প্রস্তুত করা হয়। যেমন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মামউল, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সেমাই, তুরস্কে বাকলাভা, নাইজেরিয়ায় আমালা, বসনিয়ায় তুফাহিজা ও মরক্কোয় বাসতিলা স্বচ্ছন্দে খাওয়া হয়।
ঈদ সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে শিশুরা। নতুন জামাকাপড় পরা, ঈদের সালামি আর ঈদ উপহার তাদের আনন্দের প্রধান অনুসঙ্গ। মেয়েরা মেহেদি দিয়ে তাদের হাত সাজায়। ফলে, তাদের ঈদ উদযাপন শুরু হয় আগের রাতে।
কিছু দেশে ঈদের নামাজের পরপরই পরিবারের সদস্যরা প্রয়াত সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কবরস্থানে যায় এবং তাদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে শহরে শহরে আলোকসজ্জা করা হয়।
এবারের ঈদুল ফিতর এমন সময় উদযাপিত হলো, যখন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইল সামরিক আগ্রাসন ও নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল। ছয় মাসের নিরবচ্ছিন্ন হামলায় পুরো উপত্যকায় এরইমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৩৩ হাজার নিরস্ত্র ও নিরীহ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ২৩ লাখ অধিবাসীর ১৯ লাখই এখন খোলা আকাশের নীচে দিনাতিপাত করছে। ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ জেঁকে বসেছে সেখানে। ধ্বংস ও শোকের মধ্যে ঈদুল ফিতরকে স্বাগত জানায় গাজাবাসী। অথচ গত বছরও গাজায় ঈদ হয়েছিল আতশবাজি, রঙিন জামা আর ঐতিহ্যবাহী খাবারে। এবার সেখানে শুধুই হাহাকার, কবর আর গণকবরে শোকগাঁথা, বাবা-মা হারানো হাজারো এতিমের বুকফাটা চিৎকার। ঈদের দিনটিও তাদের একইরকম কেটেছে। খুশির দিনটি কেটেছে ক্ষুধার যন্ত্রণা, চোখের পানি আর প্রিয়জনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে।

 

 

 

আরও খবর

🔝