প্রকাশ : শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২১, ১০:০৮:০১ পিএম
কেউ গাঁজাসহ আটক হওয়া চা দোকানী, কেউ গ্যাস চুরি করে ধড়া পড়া নাইট গার্ড। আবার কেউ চিহ্নিত প্রতারক। হঠাৎ করে তারা মোটরসাইকেলে প্রেস বা সাংবাদিক লিখে যশোর চষছে। এদের সংখ্যা শতাধিক। এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় কার্ড কিনে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে এরা। অসাধু চক্রের কাছ থেকে অখ্যাত পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা ও অনলাইন টিভির কার্ড নিয়ে যথেচ্ছা করছে এসব বিতর্কিতরা। তারা সাংবাদিক সেজে বোকা বানাচ্ছে প্রশাসনকেও। তাদের অনেকে রীতিমত মাদক বহনের কাজও করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একাধিক ভুক্তভোগী ও সূত্র জানিয়েছে, সাংবাদিক পরিচয়দানকারী এসব ব্যক্তি বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপরাধ সংক্রান্ত সংবাদ পড়ে ছুটে যায় অভিযুক্তদের কাছে। নানা উছিলায় তারা এসব মানুষের কাছ থেকে আদায় করে মোটা অংকের টাকা। সম্প্রতি যশোর শহরের পালবাড়ি এলাকায় হাফডজন বিতর্কিত ও দাগী লোকের মোটরসাইকেলে সাংবাদিক লেখা দেখে রীতিমত অবাক হয়েছেন ওই এলাকার মানুষ। তারা ছাড়া যশোর শহর ও শহরতলীতে চোখে পড়ছে প্রেস ও সাংবাদিক লেখা আরো অনেক মোটরসাইকেল। অনেকের গলা ও কোমরে বাহারি রঙের পরিচয়পত্রও ঝুলছে। তারা বেশিরভাগই নতুন মোটরসাইকেল চালায়। বেশ ভুষা দেখে দাপুটে সাংবাদিক মনে হলেও পরিচয়পত্র চেক করলে চোখ ছানাবড়া হওয়ার অবস্থা।সম্প্রতি পালবাড়ি এলাকায় একটি হিরো মোটরসাইকেলে প্রেস লিখে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে শাহাদত হোসেন পাতাকে। তিনি পেশায় বাজারের নাইটগার্ড। এক সময় একটি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস চুরি করে ধরা পড়েন। একই এলাকায় ইয়ামাহা গাড়িতে প্রেস লিখে ঘুরছেন ফরহাদ হোসেন নামে একজন। তিনি পেশায় চা দোকানী। মাস কয়েক আগে পুরাতন কসবা ফাঁড়ি পুলিশ তাকে গাঁজাসহ আটক করে। এলাকার জামে মসজিদের পাশে তার অবস্থান। মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক সেজে মাঠ চষছেন একই এলাকার আশরাফুল ইসলাম রনি। মাস ছয় আগে এই রনি তার পরিচিত জন পান্নার মোটরসাইকেল চুরি করে ধরা পড়েন। এই ৩ বিতর্কিতের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে তথ্য মিলেছে, তারা একটি স্বঘোষিত অন লাইন টিভি ও একটি অখ্যাত সাপ্তাহিকের কার্ড কিনে সাংবাদিক সেজেছেন। এদের মতই শতাধিক দাগী প্রতারক মাদক সংশ্লিষ্ট বিতর্কিত লোক এখন সাংবাদিক সেজে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ কিংবা চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এরা পুরো জেলা চষে বেড়াচ্ছে। পুলিশ এদের গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না, গাড়ি চোরাই কিংবা টানা কিনা চেক করতে পারছেন না সাংবাদিক ভেবে। নানা অপরাধে জড়িত তারা। একাধিক মামলার আসামি এমন অনেকে অখ্যাত অনলাইন ও অখ্যাত দৈনিক বা অনলাইন টিভির নাম ভাঙিয়ে অপতৎপরতা চালাচ্ছে।যশোরাঞ্চল চষে বেড়ানো শতাধিক ভুয়া সাংবাদিককে একটি অসাধু চক্র এক থেকে দশ হাজার টাকায় এসব কার্ড দিয়েছে। এদের অর্থলিপ্সতায় যশোর শহরেও বেড়ে চলেছে ভুয়া সাংবাদিকের সংখ্যা। সাংবাদিক সেজে শহর দাপিয়ে বেড়ানো চক্রের মধ্যে এক সময়ের অনেক সন্ত্রাসীও রয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে এসব ব্যক্তি সাংবাদিক পরিচয়ে অভিযুক্তদের কাছে ছুটে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পত্রিকা অফিস না জানলেও সংবাদ বন্ধ করার কথা বলে তারা অর্থ হাতাচ্ছেন। এমনকি, তাদের অখ্যাত অনলাইন ও পত্রিকায় সংবাদ ছেপে দেয়ার হুমকি দিয়েও ব্লাকমেইল করছে।এদের অনেকের পকেটেই রয়েছে একাধিক কেনা পরিচয়পত্র। মোটরসাইকেল ছাড়াও এরা প্রাইভেটকারে সাংবাদিক ও প্রেস লিখে হম্বিতম্বি করে পথ চলছে। সম্প্রতি স্বঘোষিত একটি অন লাইন টিভি সাংবাদিক ও সম্পাদক পরিচয় দিয়ে প্রাইভেটে মাঠ চষতে দেখা যাচ্ছে একটি চক্রকে। চক্রটি থানা বা বিভিন্ন পুলিশ স্টেশনের সামনে ওই অন লাইনের স্টিকার লাগানো প্রাইভেট পার্কিং করে ক্যামেরা হাতে হম্মি তম্বি করে নেমে আসছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেক সময় এরা অবৈধ কারবার করছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি সৌমেন দাশ, কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান এবং ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সুভেন্দু গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যে তথ্য মিলছে অনেক প্রতারক ও লেবাসধারী সাংবাদিক সেজে মাঠ চষছে। সাংবাদিক না হয়েও মনগড়া অনলাইনের কার্ড বানিয়ে শহরে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরছে। আর সংবাদের নামে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করছে স্মার্টফোন পুঁজি করে। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নামেও আপত্তিকর তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে এরকম একটি চক্র। এছাড়া, প্রতিনিয়ত শহরের নানা ভার্সনের মোটরসাইকেলে প্রেস বা সাংবদিক লিখে দাপটে পথ চলছে তারা। প্রথমে দেখে বোঝার উপায় থাকে না। এদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।