gramerkagoj
বুধবার ● ১ মে ২০২৪ ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
কর্মচারীদের নামে বিল করে কর্মকর্তাদের টাকা উত্তোলনের অভিযোগ

❒ করোনাকালে যশোর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস

প্রকাশ : শনিবার, ৩০ অক্টোবর , ২০২১, ০৯:৫৩:৪২ পিএম
এম. আইউব:
1635609286.jpg
যশোর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অধস্তন কর্মচারীদের নামে পরিদর্শন বিল করে তাতে ভাগ বসানোর গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া পরিদর্শন কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের জ্বালানি ও মেরামত বাবদ ভুয়া বিল করে অর্থ উত্তোলনের খোঁজ মিলেছে। এবিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা ও জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে নানা বিরোধের জেরে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। যার খারাপ প্রভাব পড়ছে যশোরের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে। প্রাপ্ত নথি থেকে জানা যায়, সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের করোনাকালীন ভ্রমণ ব্যয় বাবদ প্রথম দফায় উপজেলা এডুকেশন অফিসার বা ইউইও-এর নামে ভ্রমণ ব্যয় খাতে ৪৮ হাজার পাঁচশ’, এইউইওদের নামে ১৫ হাজার ও কর্মচারী খাতে ২০ হাজার মিলিয়ে গতবছর জুলাই মাসে সর্বমোট ৮৩ হাজার পাঁচশ’ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার স্মারক নম্বর ৩৮.০১.০০০০.১৫২.০২০.৭৮.২০১৯-১৬/৫১০। এরপর ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি করোনার কারণ দেখিয়ে তা কমিয়ে বরাদ্দ ৬৮ হাজার একশ’ টাকা দেওয়া হয়। যার স্মারক নম্বর - ৩৮.০১.০০০০. ১৫২.০২০.৭৮.২০১৯-৭৭৭। বরাদ্দপত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আনুপাতিক হারে ব্যয় করার নির্দেশনা দেওয়া হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে। এর আগে এ ধরনের বরাদ্দ সংশ্লিষ্টদের নামে আলাদা আলাদাভাবে দেওয়া হতো। বিধি অনুযায়ী, সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার-এইউইও এবং কর্মচারীদের বিলের অনুমোদন দেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। আর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের (ইউইও) বিলের অনুমোদন দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। দু’দপ্তরের কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ ওয়াহিদুল আলমের সাথে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিরাজুল ইসলামের দীর্ঘদিন ধরে কিছু বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কয়েকজন কর্মচারী জানান, সিরাজুল ইসলাম অনেক সময় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। তার বড় নমুনা হলো করোনাকালীন ভ্রমণ ব্যয় সব উপজেলা অফিসের কর্মচারীদের নামে করা হয়েছে। কারণ ইউইও’র নামে বিল করলে তা উত্তোলনে জেলা অফিসের অনুমোদন লাগতো। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভুত কাজের নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।  উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার করোনাকালীন কতটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। কোথায় কোথায় ভ্রমণ করেছেন সে বিষয়ে কিছুই জানেন না জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে সমন্বয় না থাকায় সদর উপজেলায় শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের। এতে সরকারি অর্থ ব্যয় হলেও জেলা শিক্ষা খাতে কাক্সিক্ষত সুফল আসছে না। শিক্ষক-কর্মচারীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন কিনা তার সঠিক চিত্র উঠে আসছে না বলে মনে করেন অনেক অভিভাবকরা।   সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত রয়েছেন তিনজন কর্মচারী। এরা হচ্ছেন, উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পার্বতী রানি দে, হিসাব সহকারী রেক্সোনা খাতুন ও অফিস সহায়ক আনছার আলী। নথি থেকে জানা যায়, এই তিনজনের নামে ১৯ হাজার পাঁচশ’ টাকা করে ভ্রমণ ব্যয়ের বিল করে উত্তোলন করা হয়েছে। এর বাইরে অফিস সহায়ক আনছার আলীর নামে করা হয়েছে আরও দু’টি বিল। তার একটি দু’ হাজার চারশ’ ১০ ও আরেকটি সাত হাজার একশ’ ১৯ টাকা।অথচ ২০২১ সালের ৪ জুলাইয়ের ৩৮.০১.৪১৪৭.০০০.০১.০০১.১৯-৬৭০ নম্বর স্মারকে ইউইও খাতে ৩৯ হাজার পাঁচশ’ ৫০ টাকা, এইউইও খাতে ১২ হাজার দুশ’৪০ টাকা ও কর্মচারী খাতে ১৬ হাজার তিনশ’ ১০ টাকা খরচ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের রেকর্ডপত্রে। অনুসন্ধানে জানা যায়, কর্মকর্তাদের নামে বিল করার সুযোগ থাকার পরও তিনজন কর্মচারীর ঘাড়ে সকল বিলের দায় চাপানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কর্মচারীদের নামে বিলের অর্থ উত্তোলন করে বেশিরভাগ নিয়েছেন কর্মকর্তারা। সেখানে, তিন কর্মচারী পেয়েছেন মাত্র ১৮ হাজার চারশ’ টাকা। একটি সূত্র জানায়, এরমধ্যে পার্বতী রানি দেকে পাঁচ হাজার আটশ’, রেক্সোনাকে তিন হাজার ও আনছার আলীকে নয় হাজার ছয়শ’ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৯ হাজার সাতশ’ টাকা ইউইও এবং এইউইওরা ভাগাভাগি করেছেন। এটি আইন বহির্ভূত। উপজেলা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জেলা কর্মকর্তা শেখ ওয়াহিদুল আলমের কাছে না যাওয়ার কৌশল হিসেবে এটি করেন তিনি।  এই শিক্ষা অফিসে মোটর সাইকেলের জ্বালানি এবং মেরামতের অর্থ নিয়েও অনিয়মের খবর মিলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে জ্বালানি বাবদ ১০ হাজার দুশ’ ও মেরামত বাবদ ছয় হাজার দুশ’ এবং ২০২০-২১ অর্থ বছরে জ্বালানি বাবদ ১০ হাজার সাতশ’ ও মেরামত বাবদ ছয় হাজার পাঁচশ’ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ ইউইও সিরাজুল ইসলাম তার নামে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ঢাকা মেট্রো-হ-৩৪-৬৩০০ নম্বরের মোটরসাইকেলটি যশোর সদর উপজেলায় একদিনের জন্যেও আনেননি। সেটি রয়েছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায়। এসব বিষয়ে সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, জুন মাসে কাজের চাপের কারণে কর্মচারীদের নামে একসাথে বিল করতে হয়েছে। আর মোটর সাইকেলের বিষয়ে তিনি বলেন, আগের কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি নতুন কর্মস্থলে মোটর সাইকেলটি আনেননি। এসব বিল ইউইও-এইউও মিলে করা হয়েছে বলে দাবি সিরাজুল ইসলামের।তিন কর্মচারীর দু’জন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব কর্মকান্ডে তারা কেবলমাত্র ‘হুকুমের গোলাম’। কর্মকর্তা যেভাবে নির্দেশ দেন সেইভাবে তাদের কাজ করতে হয়।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখ ওয়াহিদুল আলম বলেন, পরিদর্শন যথাযথ হয়েছে কিনা খোঁজখবর না নিয়ে বলতে পারবো না। তাছাড়া, ভ্রমণ ভাতা ও জ্বালানি ব্যয় নিয়ে অভিযোগ আসায় তদন্ত করে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের যশোর জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালেহা খাতুন বলেন,এ বিষয়ে আগে প্রয়োজন অভিযোগের সঠিক তদন্ত করা।

আরও খবর

🔝