প্রকাশ : শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল , ২০২২, ০৯:৩৮:২৭ পিএম
ঈদকে সামনে রেখে যশোরের কয়েকটি এলাকায় ব্যাপকভাবে চুরি হচ্ছে। শহরতলী কাশিমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে ও নরেন্দ্রপুরে চুরির ঘটনা ঘটছে। সংঘবদ্ধ চোর সিন্ডিকেট অব্যাহত চুরি সংঘটিত করে দিশেহারা করে ফেলছে মানুষকে। চোর ধরে ফেললে কিংবা সন্দেহ করে থানায় অভিযোগ করলে উল্টো ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ স্টাইলে নানা হুমকি ধামকি দিচ্ছে খোদ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে। কাশিমপুর ইউনিয়নে অব্যাহত চুরির ঘটনায় স্থানীয়রা সংঘবদ্ধ রবিউল চোর সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছে। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে চোরাই ইজিবাইক, ব্যাটারি ও ভ্যানসহ কয়েক দফা আটক হওয়া রবিউল সিন্ডিকেটের সদস্যদের আবার আটক দাবি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে র্যাব ও পুলিশের কাছে অভিযোগও করা হয়েছে।যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ডাকাতিয়া গ্রামের আব্দুল মালেক পালোয়ানের বাড়িতে চুরি হয় গত ১১ এপ্রিল। ১২ এপ্রিল ডাকাতিয়ার সৈনিক বেলাল হোসেনের বাড়ি চুরি হয়। এদিন দিন-দুপুরে ৪টি ঘরের তালা ভেঙে চুরি হয়েছে ৩ লক্ষ টাকারও বেশি মালামাল। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। ১৩ এপ্রিল রাতে একই গ্রামের সংবাদকর্মী মোজাম্মেল হোসেন সোহাগের বাড়িতে চুরি হয়েছে। তার একটি ছাগল চুরি করে নিয়ে গেছে চক্র। এছাড়া একই গ্রামের নুর আলীর বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে চুরি হয়েছে। চোরেরা নিয়ে গেছে এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন। এছাড়া একই গ্রামের এক বিধবা নারীর বাড়িতে গ্রিল কেটে দুই লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল ডাকাতিয়া দক্ষিণপাড়া কাঁঠালতলা জামে মসজিদের মোটর দুটি চুরি হয়েছে। এছাড়া সামনে রাখা দানবাক্সের তালা ভেঙে নগদ অর্থ চুরি হয়েছে। এদিকে, যশোরের নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের একটি বাড়ি থেকে ৫টি গরু নিয়ে গেছে চোরেরা। ১৫এপ্রিল দিবাগত রাতে অত্র ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপদ্দি ঘোড়াগাছা গ্রামের রফিকুল ইসলামের বাড়ি থেকে গরুগুলো চুরি যায়। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান উদ্দিন যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগও করেন।পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রতিদিনের ন্যায় ঘটনার দিন রাতে বাড়ির উত্তর ও দক্ষিণ পাশের ২টি গোয়াল ঘরের একটি টিনের দরজা ও একটি লোহার দরজায় তালা দিয়ে যার যার মত ঘুমিয়ে পড়েন। ১৬ এপ্রিল আনুমানিক সকাল ৬ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান গোয়াল ঘরের তালা গুলো কাটা ও গোয়ালের মধ্যে কোনো গরু নেই। এ সময় ডাক-চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে সকলে আশপাশে খোঁজাখুঁজি করেও ৫ লক্ষাধিক টাকার গরুর কোনো সন্ধান মেলেনি। এর আগে চাঁনপাড়া হায়দার আলীর বাড়ির গরু চুরি হয়েছে। তিনি থানায় অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি। থানা থেকে তদন্ত চাঁনপাড়া ফাঁড়িতে দিলে পুলিশ অভিযুক্ত পক্ষ নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীকে হয়রানী করেছে বলে অভিযোগ করেছেন হায়দার আলী। হালের গরু হারিয়ে এখন দিশেহারা তিনি।যশোরের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক গরু চুরির ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারগুলো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে না কার্যকরি পদক্ষেপ। স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন এটি সংঘবদ্ধ চোর রবিউল চক্রের কর্মকান্ড। এলাকার লোকজন বলছেন, ওই গ্রামের সংঘবদ্ধ চোরাই মাল বিক্রি সিন্ডিকেটের প্রধান রবিউল ইসলাম ও তার ভাই বিল্লাল চক্র এই চুরির সাথে জড়িত। এর আগেও কয়েক দফা রবিউল জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবির হাতে চোরাই মালামালসহ আটক হয়। চোরাই ভ্যান, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক চুরি ও বিকিকিনি এই রবিউল চক্রের ব্যবসা। আগাম টাকা দিয়ে চোরদের চুরি করতে বলে। রাতের আঁধারে ওই ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও চুরি করা মালামাল অন্য জেলায় পাঠিয়ে দেয়। যন্ত্রপাতি খুলে একটি মালামাল অন্যটিতে লাগিয়ে আমূল পরিবর্তন আনে রিক্সা-ভ্যান ইজিবাইকে। অনেক সময় যাত্রী সেজে চালককে কিছু কিনতে পাঠায়। আর দোকানে গেলে চুরি করে সটকে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, রবিউল সংঘবদ্ধ চোর সিন্ডিকেট পরিচালনা করার পাশাপাশি ডাকাতিয়া দক্ষিণপাড়ায় চালাচ্ছে রমরমা গাঁজা ফেনসিডিল ইয়াবা ব্যবসা। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এবং এসব এলাকার উঠতি নেশাখোর ও বিতর্কিত লোকজন ভিড় জমাচ্ছে রবিউল বিল্লালের আস্তানায়। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন এসবের প্রতিবাদ জানালে তারা হুংকার দিয়ে বলছে প্রশাসন তাদের ম্যানেজ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম ও জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, চুরির ব্যাপারে যে অভিযোগগুলো আসছে তার তদন্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে চুরি যাওয়া মাল উদ্ধারও করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া অনেকগুলো অভিযোগ ও ঘটনা তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে পুলিশ আন্তরিক। চোর চক্রের ব্যাপারে তথ্যগত সহায়তা চায় পুলিশ।