এম. আইউব

একেবারেই কোনোকিছু না জানিয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের হঠাৎ সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছেন প্রাথমিকের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। কেবল হতবাক হননি। এই সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তাদের মধ্যে। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা বৃত্তি পরীক্ষা হয় বন্ধ করা,আর না হয় পিছিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। তা না হলে অতি অল্প সময়ে বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের নামে তামাশা হবে-এমন মন্তব্য অভিভাবকদের। বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের খবর শোনার পর চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন যশোরের ৪৩ হাজার অভিভাবক।
আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। চলবে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। করোনার পর এই প্রথম বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যশোরের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবক, আট হাজার শিক্ষক এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যখন বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের চিঠি পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। চিঠিতে কেন্দ্র ও ১০ শতাংশ হারে শিক্ষার্থীদের তালিকা আগামীকালের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠি পাওয়ার পর কমপক্ষে দশজন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার-ডিপিইও সিদ্ধান্তটিকে হঠকারী বলে উল্লেখ করেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সহকারী শিক্ষা অফিসাররা। তাদের পাশাপাশি অভিভাবকদের ক্ষোভতো রয়েছেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ডিপিইও বলেন, আগে বৃত্তি পরীক্ষা বিভাগীয় উপপরিচালকের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হতো। সর্বশেষ, বৃত্তি পরীক্ষাও একই পদ্ধতিতে নেওয়া হয়। কিন্তু এবার কাদের অধীনে বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে তার কোনো নির্দেশনা নেই। সিলেবাস কী হবে, প্রশ্ন ফি নেওয়া হবে কিনা সেই বিষয়েও দেওয়া হয়নি কোনো নির্দেশনা। এ কারণে চরম বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ডিপিইওরা বলছেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে যদি বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় তাহলে প্রশ্ন করবেন কারা, কারা মডারেশন করবেন। আবার মডারেশনের পর বিজি প্রেসে কবে পাঠানো হবে, আর কবে ছাপা হবে।
শিক্ষকরা বলছেন, এখনই যদি সিলেবাস দেওয়া না হয় তাহলে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নেবে। বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে ১০ শতাংশ হারে শিক্ষার্থী বাছাই করা নিয়ে। শিক্ষকরা বলছেন, কোন প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী করা হবে সেই বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ফলে, তাদের পক্ষে শিক্ষার্থী বাছাই করা কঠিন হচ্ছে।
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, তাদের স্কুলে অনেক বেশি শিক্ষার্থী। তারা সেখান থেকে ১০ শতাংশ চূড়ান্ত করবেন কীভাবে। কারণ আগ্রহী কোনো শিক্ষার্থীকে যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে স্থানীয়ভাবে অভিভাবকদের রোষানলে পড়বেন শিক্ষকরা।
ক্ষোভ ঝাড়ছেন অভিভাবকরা। অনেক অভিভাবকের বক্তব্য, কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বার্ষিক পরীক্ষার মধ্যে এক মাসের কম সময়ের মধ্যে বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা দায়িত্বহীনতার শামিল। তারা সময় বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষাবোর্ডগুলো গোছালো সিস্টেমের মধ্যেও যেখানে জেএসসি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সেখানে অকস্মাৎ বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা হঠকারিতা ছাড়া কিছুই না। তারা এই হঠকারী সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। তবে, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউই প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাচ্ছেন না।
এদিকে, যশোরের আট উপজেলায় এ বছর পঞ্চম শ্রেণি পড়–য়া ৪২ হাজার ৯৪৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে অভয়নগরে ৩ হাজার ৯১৫, কেশবপুরে ৩ হাজার ৮৬৫, চৌগাছায় ৪ হাজার ৩৬৯, ঝিকরগাছায় ৪ হাজার ৭৬৫, বাঘারপাড়ায় ৩ হাজার ৪২, মণিরামপুরে ৭ হাজার ৪২, শার্শায় ৬ হাজার ৭৫৫ ও সদর উপজেলার ৯ হাজার ১৯২ জন অধ্যয়নরত।
অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, এসব শিক্ষার্থীর ১০ শতাংশ বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে, ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃত্তি পরীক্ষা যদি নিতেই হয় তাহলে সময় বৃদ্ধি করা হোক।
এ বিষয়ে যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম বলেন, তারা কেবল চিঠি পেয়েছেন। তাদেরকে শিক্ষার্থী এবং কেন্দ্রের সংখ্যা জানাতে বলা হয়েছে। এর বাইরে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।
বিস্তারিত জানতে ফোন করা হয় ময়মনসিংহে প্রশ্ন প্রণয়ন করা প্রতিষ্ঠান নেপের মহাপরিচালক শাহআলম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) উত্তম কুমার ও নেপের উপপরিচালক (মনিটরিং) মনিরুল হাসানকে। এমনকি মহাপরিচালককে এসএমএসও করা হয়। কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেননি।