gramerkagoj
শুক্রবার ● ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
স্বর্ণালংকার লুণ্ঠন করতেই খালা রোশনীকে খুন করে ভাগ্নে হৃদয়

❒ লুন্ঠিত মালামাল, হত্যায় ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার

প্রকাশ : বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর , ২০২২, ০৯:১৪:১১ পিএম
বিশেষ প্রতিনিধি:
1663168607.jpg
স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুণ্ঠন করতেই খালা রওশন আরা রোশনীকে খুন করে আপন ভাগ্নে। যশোর শহরের আশ্রম রোড এলাকার ধনাঢ্য নারী রওশনারা রোশনী (৫২) হত্যাকান্ডের ঘটনায় সন্দেভাজনভাবে আটক ভাগ্নে উপশহরের রিয়াজুল আলম চৌধুরী হৃদয় পিবিআইকে এই তথ্য জানিয়েছে। আটকের পর তার দেখিয়ে দেয়া স্থান থেকে লুণ্ঠন করা স্বর্ণালংকার মোবাইল ও হত্যায় ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে বুরহান নামে হৃদয়ের এক বন্ধুকেও। এই হত্যকান্ড তদন্ত ও আটক অভিযান নিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর বিস্তারিত জানিয়েছেন পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন। হত্যাকান্ডে যে দু’জনকে আটক করা হয়েছে তারা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এবং আদালতে হত্যার দ্বায় স্বীকার করেছে।গত ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় আশ্রম মোড় এলাকার বাসিন্দা সাবেক প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মৃত মুস্তাফিজুর রহমান মনুর স্ত্রী রওশনারা রোশনির গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তার নিজ বাসার বক্সখাটের জাজিম ও তোষক মোড়ানো অবস্থায় রক্তাক্ত লাশটি উদ্ধার হয়। লাশ উদ্ধার ঘটনার পর পুলিশের কয়েকটি ইউনিট ছাড়াও জেলা ডিবি, র‌্যাব ও সিআইডির টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হত্যারহস্য উন্মোচনে কাজ শুরু করে। ঘটনায় কে বা কারা জড়িত এবং এই হত্যাকান্ড এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পুলিশের উর্ধ্বতনদের নির্দেশনায় ওই এলাকায় তদন্ত অভিযান চলে। তবে থানা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই খান মাইদুল ইসলাম দুই সপ্তাহেও হত্যাকান্ড ঘটনার ক্লু উদ্ধারে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে মামলাটি তদন্তে এগিয়ে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই যশোর। পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন পিপিএম সেবা এর নেতৃত্বে এসআই ¯েœহাশীস দাস, এসআই ডিএম নুর জামাল হোসেন সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ যশোর জেলার চৌকস দল কর্তৃক পুলিশি অভিযান পরিচালনা শুরু করেন। তদন্তে সামনে আসে নিহতের বোনের ছেলে হদয় ও তার এক বন্ধু এলাকা ছাড়া। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। প্রাথমিক এই ক্লু নিয়ে তদন্ত এগুতে থাকে। হত্যা মিশনে যুক্ত থাকতে পারে এমন সন্দেহে ১৩ সেপ্টেম্বর ভাগ্নে হৃদয়ের বন্ধু বুরহানকে (২০) বাগেরহাটের রামপালের ঝনঝনিয়া গ্রামে তার মামা হরমুজ আলীর বাড়ী থেকে আটক করে পিবিআই। একই দিন রাতে নিহতের বোনের ছেলে ভাগ্নে রিয়াজুল আলম চৌধুরী হৃদয়কে (১৯) ডিএমপি ঢাকা ভাষানটেক ক্যান্টনমেন্ট গ্যারিসন এলাকা থেকে আটক করা হয়। গ্যারিসন রোড নং ১০, বাড়ি নং-৩২/৩, ফ্লাট নং-৫ বি, তার খালু ইঞ্জিনিয়র মোক্তার হোসেনের ভাড়া বাড়িতে আত্মগোপনে ছিল সে। ্্্্্্্্্আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাবাসাদে এবং আদালতে হত্যার দ্বায় স্বীকার করে। ১৪ সেপ্টেম্বর পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, নিহত রওশন আরা রোশনী আটক রিয়াজুল আলম চৌধুরী হৃদয়ের সম্পর্কে আপন খালা। হৃদয় মাঝে মধ্যে তার খালা রোশনীর বাড়িতে যাওয়া আসা করত। তার খালা বাড়িতে একা থাকার বিষয়টি সে ভালভাবে জানত। রোশনীর বাড়িতে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা পয়সা কোথায় রাখে হৃদয় তাও জানত। ঘটনার কয়েকদিন আগে হৃদয় তার বন্ধু বুরহানকে সাথে নিয়ে খালা রওশন আরা রোশনীকে হত্যা করে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা পয়সা লুন্ঠনের পরিকল্পনা করে। ২৯ আগস্ট সকালে হৃদয় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার বন্ধু বুরহানকে সাথে নিয়ে খালা রোশনীর বাড়িতে যায়। এরপর খালা রোশনীর সাথে বিভিন্ন কথাবার্তা বলত থাকে। কথাবার্তার একপর্যায়ে তারা অতর্কিত ধারালো চাকু দিয়ে রোশনীর পেটে বুকে ও গলায় উপর্যুপরী আঘাত করে হত্যা নিশ্চিত করে। এরপর মৃতদেহ ঘরে থাকা বক্সখাটের কাঠের চালার নিচে লুকিয়ে রাখে। হত্যার পর রোশনীর ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন ও আলমারীতে থাকা স্বর্ণের ও ইমিটেশনের গহনা বের করে নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর তারা রওশন আরা রোশনীর আত্মীয়স্বজনের সাথে মিলে চলা ফেরা করে, যাতে কেউ তাদের সন্দেহ না করে। ওই ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে তারা আটক এড়াতে যশোর থেকে তাদের নিজ নিজ আত্মীয়ের বাড়িতে কৌশলে আত্মগোপনে যায়। আটকের পর তাদের দেখানো মতে লুন্ঠিত মালামাল, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু ও হত্যার সময় তাদের পরনে থাকা ফেলে দেয়া কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযুক্ত বোরহান ও রিয়াজুল আলম চৌধুরী হৃদয়কে গতকাল বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যশোর আদালতে সোপর্দ করা হলে অভিযুক্তরা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদান করে। রেশমা শারমিন আরো জানান, মামলার তদন্ত এখন অব্যাহত রয়েছে। পেছনে অন্য কোনো কারণ বা কারো ইন্ধন আছে কিনা খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, রোশনী হত্যাকান্ডে তার নিকটজনই জড়িত থাকতে পারে এমন তথ্য দিয়ে দৈনিক গ্রামের কাগজে পরপর ৩টি সংবাদ প্রকাশিত হয়। আত্মীয় ও আপনজনদের উপর নজরদারি রাখার ব্যাপারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় ওই ৩টি সংবাদে। এরপর  সেই অ্যাঙ্গেলেই হত্যারহস্য উন্মোচিত হল। 

আরও খবর

🔝