শিরোনাম |
কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ‘কোন এক মাকে’ কবিতায় লিখেছেন, ‘কুমড়ো ফুলে ফুলে/নুয়ে পড়েছে লতাটা/সজনে ডাঁটায়/আর, আমি ডালের বড়ি/শুকিয়ে রেখেছি/ খোকা, তুই কবে আসবি/কবে ছুটি? চিঠিটা তার পকেটে ছিল/ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।’ একুশের আবেগ বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে দেশের বুদ্ধিজীবী, শিল্পী-সাহ্যিতিকরা ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ভাষা অন্দোলনের পটভূমি, ঘটনাপঞ্জি ও বাঙালীর চেতনা নিয়ে রচিত হয়েছে বিভিন্ন প্রকার দেশাত্মবোধক গান, নাটক, গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও চলচ্চিত্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী রচিত ও আলতাফ মাহমুদ সুরারোপিু আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর থেকেই বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব সূচিত হয়ে আসছে। রচনাগুলোর মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী রচিত নাটক কবর, কবি শামসুর রাহমান রচিত কবিতা বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা এবং ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, জহির রায়হান রচিত উপন্যাস একুশে ফেব্রুয়ারি, কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান রচিত আর্তনাদ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে জহির রায়হান পরিচালিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অনেক বাঙালী মনে করেন, বাংলাভাষা আন্দোলন জাতিগত জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয়েছিল। এ আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের দুই অংশের সংস্কৃতির পার্থক্যগুলো সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানে এ আন্দোলনটি পাকিস্তানী জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে বিভাগীয় উত্থান বলে মনে করা হয়। দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে ‘একমাত্র উর্দু’ নীতি প্রত্যাখ্যান করাকে মুসলমানদের পারসিক-আরবী সংস্কৃতি এবং পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার মূল মতাদর্শের গুরুত্বর লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের কয়েক শক্তিশালী রাজনীতিবিদ মনে করেন, ‘উর্দু’ হলো ভারতীয় ইসলামী সংস্কৃতির অংশ, আর বাংলাকে তারা হিন্দু সংস্কৃতির সংমিশ্রণে তৈরি বাংলা সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচনা করতেন।