শিরোনাম |
❒ ভেস্তে গেছে ৫০ কোটি টাকা হাতানোর মিশন
৫০ কোটি টাকা হাতাতে কোবরা সাপের বিষের ৬ ডিব্বার নকল চালান নিয়ে যশোরাঞ্চলে অবস্থান করা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি পালিয়েছে। যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরার কয়েকজনের সিন্ডিকেটটি অ্যাডভান্সের নামে ২ কোটি টাকা হাতিয়ে এখন লাপাত্তা। দৈনিক গ্রামের কাগজের সংবাদের পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নড়েচড়ে বসলে তারা সটকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পুরাতন কসবা কাজী পাড়ার মনিরুজ্জামান।
কেমিস্টদের পরীক্ষায় চালান ভুয়া প্রমাণিত হলে হত্যার হুমকি দিয়ে স্থান পাল্টিয়ে অবস্থান নিলেও আটক এড়াতে ইসমাইল মইনুল সিন্ডিকেট নামধারী চক্রের সদস্যরা এখন ভারতে। চক্রের বেনাপোলের ডেরা থেকে প্রাণে বেঁচে ওষুধ কোম্পানির ওই প্রতিনিধি এখন হুমকিতে আছেন বলেও জানিয়েছেন।
একটি প্রতিষ্ঠিত ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি দাবি করে যশোরের কাজীপাড়ার মনিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি কিছু তথ্য প্রমাণ দিয়ে অভিযোগ করেন, তিনি ভারতের বনগাঁ ও কোলকাতাসহ কয়েকটি জায়গায় গিয়ে ইসমাইল হোসেন ও নিতাই নামে দু’জন কোবরা সাপের বিষ ব্যবসায়ীর সাথে পরিচিত হন। একইসাথে পরিচিত হন যশোরের আরো কয়েকজন ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধি। ক্যান্সারের কেমোসহ আরো কয়েকটি গ্রুপের মিডিসিন তৈরিতে কোবরা সাপের বিষ কার্যকর মর্মে বিষ কিনতে বাংলাদেশের কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির দায়িত্বশীলদের সাথে লিংক তৈরির চুক্তি হয়। সেই মোতাবেক যশোরে ফিরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দায়িত্বশীদের সাথে কথা বলেন এবং কোবরার বিষ কিনতে চান। হোয়াটস অ্যাপে কথাবার্তাও হতে থাকে। এক পর্যায়ে ১২ জানুয়ারি যশোরে প্রবেশ করে সিন্ডিকেটের কয়েকজন। বিশেষ করে ইসমাইল চলে আসেন পাসপোর্টের মাধ্যমে ভোমরা হয়ে। আর নিতাই চলে আসেন চোরাই পথে। বেনাপোলে মইনুল নামে একজন ও সাতক্ষীরার মফিজুল ইসলামসহ ৫/৬ জনের চক্রে মিলিত হন অস্ত্রধারীরাও। ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি তারা বিভিন্ন সময় ডেরা পরিবর্তন করেন। আসল কোবরার বিষ দাবি করে প্রদর্শন করেন সিঙ্গেল সাদা ১টি কাচের জার, দাম হাকেন ৬ কোটি টাকা। আরও ৬ ডিব্বার দুটি কালারের সাপের ছবি ঘেরা ৬টি কাচের জারের দাম হাকেন ইসমাইল নিতাই ও বেনাপোলের যৌথ সিন্ডিকেট। ডাকা হয় মধ্যস্থতাকারী ও ওষুধ কোম্পানির নির্দিষ্ট কয়েকজনকে। ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বেনাপোল পর্যটন হোটেলের অদুরে একটি ডেরায় দেখানো হয় সাপের বিষ। ওই সময় ৫৬ কোটি টাকা মূল্যের ৬ ডিব্বার সাপের বিষের (ফ্রান্সের মনে করে) অ্যাডভান্স হিসেবে কোম্পানির প্রতিনিধি নিয়ে যান ২ কোটি টাকা। এরপর সেখানে ঘটে যায় ভয়াবহ প্রতারণার ঘটনা।
২ কোটি টাকা নগদ অ্যাডভ্যান্স নিয়ে বেনাপোলের ডেরায় কোবরা খ্যাত বিষ পরীক্ষা করতে দেয় চক্রটি। কিন্তু কেমিস্ট পরীক্ষা করে দেখা যায় বিষ ভুয়া, সেখানে গ্যাজা জাতীয় অন্য কোনো পদার্থ ভরা রয়েছে। শুধু চাকচিক্যময় জার ও অস্ত্র ও গুলি এবং বক্স। সবই ভুয়া হওয়ায় টাকা ফেরত চাওয়া হয়। ওই সময় অস্ত্র প্রদর্শন করে হত্যার হুমকি দিয়ে একে একে স্থান ত্যাগ করেন চক্রের লোকজন।
এ ঘটনায় ২০ জানুয়ারি একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গ্রামের কাগজে। আর যশোরের দুটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে থাকেন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার খোঁজখবর নেয়ার মুখে ডেরা পাল্টাতে থাকেন ইসমাইল-মইনুল সিন্ডিকেট।
ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর দুটি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা খোঁজ খবর নিতে শুরু করলে তারা প্রথমে একটি ডেরা পাল্টিয়ে তাকে হুমকি দেন মোবাইলে। তথ্য ফাঁস করা উচিৎ হয়নি বলে তিরস্কার করেন মনিরুলকে। সেট ৬ ডিব্বার নকল কোবরার বিষ ছিল। তাদের সাথে ছিল অস্ত্রধারী, বেনাপোলের এক রাজনীতিকসহ কয়েকজন। চক্রের প্রধান ইসমাইল কখনও বেনাপোল, কখনও যশোর শহর ও কখনও সাতক্ষীরায় অবস্থান নিয়ে ৫০ কোটি টাকা হাতানোর নকসা এটেছিলো। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় প্রতারণা থেকে রক্ষা পেয়েছেন অনেকে। তার কোম্পানির দ্’ুকোটি টাকা খোয়া গেলেও ৫০ কোটি টাকা বেচে গেছে আরো কয়েকটি কোম্পানির। কেননা আরো কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির সাথে প্রতারণার টার্গেট ছিল কোবরার নকল বিষ সিন্ডিকেটের।
এ ব্যাপারে পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানিয়েছেন, যশোরাঞ্চলে প্রতারনায় লিপ্ত চক্রকে শনাক্ত করে আটকের আওতায় আনতে চায় পিবিআই যশোর। বিশেষ করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করা চক্রকে আইনের আওতায় আনতে চান। এ ব্যাপারে মাঠে নামছে পিবিআই। প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত আরো তথ্যগত সহায়তা চান তিনি।