gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ৯ মে ২০২৪ ২৬ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ জিকের সব পাম্প বন্ধ

বোরো রোপণে কুষ্টিয়াসহ ৪ জেলার চাষিরা বিপাকে
প্রকাশ : শুক্রবার, ১ মার্চ , ২০২৪, ১১:৩৩:০০ এ এম
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
GK_2024-03-01_65e165dea4e82.jpg

দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের একমাত্র চালু সেচ পাম্পটিও অচল হয়ে গেছে। তিনটি পাম্পের মধ্যে দুটি অচল হয়ে রয়েছে প্রায় দুই বছর ধরে। বাকি পাম্পটি দিয়ে কোনোমতে কার্যক্রম চলছিল। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই পাম্পটিও অকেজো হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়াসহ ৪ জেলার কৃষকরা।
জিকের পানির ওপর নির্ভরশীল কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার কয়েক লাখ কৃষক। বোরো চারা রোপণ করতে না পারায় নষ্ট হচ্ছে বীজতলা। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে বোরোর উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
সরেজমিন কুষ্টিয়া সদরের বটতৈল এলাকায় জিকের প্রধান খাল পানিশূন্য দেখা যায়। পানির স্তর একেবারে নিচে নেমে গেছে।
কুষ্টিয়া শহরের কাছে বটতৈল চারমাইল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরিষা তোলার পর মাঠে জিকের পানি আসে। ২০ থেকে ২৫ দিন আগে সরিষা তুললেও পানি আসার লক্ষণ নেই। কয়েক বিঘা জমি চাষ দিয়ে ফেলে রেখেছি, জমি পাকাতে পারছি না। বোরো আবাদের কী হবে, বুঝতে পারছি না।
জেলার অপর কৃষক মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছর এ সময় মাঠে ধান রোপণ শেষ হয়ে যায়। এবার রোপণই শুরু করতে পারিনি। দু-একজন শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি তুলে চারা রোপণ করেছেন। জিকের পানি দিয়ে এক বিঘা আবাদে খরচ যেখানে বছরে ৩০০ টাকা লাগে, সেখানে শ্যালোতে প্রায় ৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। লোকসানের ভয়ে অনেকেই আবাদ শুরু করছেন না।
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার বাগচুয়া গ্রামের কৃষক হেকমত আলী বলেন, দুই বছর ধরে জিকের পানি পাচ্ছি না। সামর্থ্যবানরা শ্যালোর পানি ব্যবহার করছেন। বাকিরা পিছিয়ে পড়ছেন।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাদেমাজু গ্রামের কৃষক আশাদুল হক বলেন, হঠাৎ করে খাল পানিশূন্য, জমিতে দেখা দিয়েছে ফাটল। বিকল্প হিসেবে ডিজেল চালিত শ্যালো ইঞ্জিনের মাধ্যমে পানি দিতে গিয়ে খরচ বাড়ছে।
জিকে পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সভাপতি সাফায়েত হোসেন পল্টু বলেন, পাম্প নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে বোরো আবাদে ব্যাঘাত ঘটবে।
জিকে সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় প্রধান পাম্প হাউসের দুটির মধ্যে ২০২২ সাল থেকে একটি নষ্ট। অন্যটি দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছিল। জানুয়ারির শুরুতে চুয়াডাঙ্গায় পানি দিলে চাষিরা বোরো রোপণ করেন। কিন্তু, কুষ্টিয়া এলাকায় জানুয়ারিতে সরিষা থাকায় কর্তৃপক্ষ ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পানি ছাড়া শুরু করে। দু’দিন চলার পর পাম্পে ত্রুটি দেখা দিলে পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এখন পাম্প হাউসের তিনটি যন্ত্রই বিকল।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামাড়ায় অবস্থিত জিকে পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, একমাত্র পাম্পও হঠাৎ করে বিকল হয়ে গেছে। দুই বছর আগে নষ্ট পাম্পটি মেরামতে জাপানের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। আপাতত পানি সরবরাহ বন্ধ। আমরা দ্রুত পাম্প সচলের চেষ্টা করছি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। জিকের অধীনে সেচের জমি আছে ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে বোরো ৩৫ থেকে ৪০ হাজার; আমন ৫০ থেকে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়।
পানি দিতে না পারায় বিকল্প উপায়ে ধান রোপণের অনুরোধ জানিয়েছেন জিকের মরফোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন।
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ বলেন, পদ্মা নদীর পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ভেড়ামারায় তিনটির মধ্যে সচল একমাত্র পাম্পও হঠাৎ বিকল হয়ে গেছে। পানি সরবরাহ কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, তা বলা সম্ভব হচ্ছে না।

আরও খবর

🔝