প্রকাশ: সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩, ১০:২৫ পিএম |

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা ইউনিয়নের খলসী গ্রামের ছুটু মনি। বয়স ৮০ ছুঁইছুঁই। অধরা সুখ তাকে ধরা দিলো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ছুটুমনি খুঁজে পেয়েছেন স্বপ্ন ঠিকানা। ফেলে আসা জীবনের সেই গল্প বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হন তিনি। না পাওয়ার বেদনা যেন জন্মসূত্রেই পেয়েছিলেন তিনি। বাপের বাড়ি জমি জিরেত যা ছিল বাবা তার ছেলেদের নামে লিখে দেন। এ কারণে ছুটুমনি হন পৈত্রিক সূত্রে ভূমিহীন। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি আসলেও দুঃখ যেন তার পিছু ছাড়েনি। হতদরিদ্র স্বামীর দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে ছিল অন্যের বাড়িতে আশ্রিতের মতো। জলে ভাসা কচুরিপানার মতো ভেসে বেড়িয়েছেন এখানে সেখানে। বর্তমানে মেয়েকে নিয়ে সুখে আছেন নিজের বাড়িতে। নিজের নামের যে বাড়ি, সেটি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর, সেই ঘর পাওয়ার অনুভূতি অশ্রসজল চোখে ছুটুমনি জানালেন ‘বাপ ঠকালিও শেখ হাসিনা তা পুষায় দেছেন’। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দু’হাতে ‘আঁচল’ পেতে দোয়া বৃদ্ধা ছুটুমনির।
দোহাকুলার খলসী গ্রামের শেখ এনায়েত আলী। অন্যের দ্বারে হাত পেতে কষ্টের সংসারের ঘানি টেনে চলছিলেন। ৭০ বছর বয়সেও স্ত্রী রিজিয়া বেগম, ছেলে সাকিবুর আর মেয়ে শাহিনুরকে নিয়ে অন্যের বাড়ি চালা ঘরে থাকতেন মালিকের মর্জিতে। এ রকম কত জায়গা যে তার বদল করতে হয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। সেই শেখ এনায়েত আলীর চোখে এখন খুশির ঝিলিক। বাঘারপাড়ায় ২২ মার্চ তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে যে ৪৯ টি ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের হাতে তুলে দেয়া হবে তার মধ্যে একটি ঘরের মালিক তিনি। শুধু কী ঘর! দু’ শতক জমির কবুলিয়াত দলিলসহ দু’ কক্ষ বিশিষ্ট টিনের পাকা বাড়ি পাচ্ছেন শেখ এনায়েত আলী। ঘর প্রাপ্তির সাথে অবসান ঘটছে তার যাযাবর জীবনেরও।
শেখ এনায়েত আলীর মতো যশোর জেলার ৩৩৩টি পরিবারে রোজার আগেই ঈদের আনন্দ বইছে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থ পর্যায়ে ২২ মার্চ সারাদেশে ৩৯ হাজার ৩৬৫ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর বরাদ্দ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন, তার মধ্যে আছে যশোরের ৩৩৩টি ঘর। এসবের চাইতেও আশা জাগানিয়া খবর হচ্ছে ঘরের সাথে শার্শা, কেশবপুর ও বাঘারপাড়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে। ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেবেন।
সোমবার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ভূমিহীন গৃহহীনদের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর প্রদান বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান এসব কথা জানিয়েছেন। বেলা ১২টায় কালেক্টরেট সভাকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তুষার কুমার পাল, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুপ দাশ, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ডাক্তার কাজী নাজিব হাসান, সিনিয়র সহকারী কমিশনার কেএম আবু নওশাদ, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২২ মার্চ যশোর সদর উপজেলার ৫৫, বাঘারপাড়ায় ৪৯, অভয়নগরে ১৯, মণিরামপুরে ৪৫, কেশবপুরে ৪৫, ঝিকরগাছায় ৬০, চৌগাছায় ৩০ এবং শার্শায় ৩০টি করে সর্বমোট ৩৩৩ ঘর হস্তান্তর করা হবে। এর আগে যশোর জেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১৮১, তৃতীয় পর্যায়ে (প্রথম ধাপ) ৩১৮ এবং তৃতীয় পর্যায়ে (প্রথম ধাপ) ২৬২ মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৭৬১ টি ঘর আট উপজেলায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এর সাথে ২২ মার্চ যুক্ত হচ্ছে আরও ৩৩৩টি।