শুক্রবার ২ জুন ২০২৩ ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
                
                
☗ হোম ➤ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল
মণিহার-মুড়লি ফোরলেনে ধীরগতি, মেয়াদ তিন দফা বৃদ্ধি
সড়ক উন্নয়ন কাজে নয়-ছয়
জাহিদ আহমেদ লিটন :
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩, ১২:৪১ এএম |
যশোরের মুড়লি থেকে পুরাতন খুলনা বাসস্ট্যান্ড অংশের সড়ক উন্নয়নে ধীরগতি ও নয়-ছয় চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কাজে সিডিউলের নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। প্রকাশ্যে হাজারো মানুষের সামনে এ অনিয়ম চললেও দেখার কেউ নেই। দেখা মেলে না সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের। ফলে শহরবাসীর অনেক প্রত্যাশিত উন্নয়নের এ কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।   
২০১৯ সাল থেকে এ সড়কে শুরু হয়েছে খোঁড়াখুঁড়ি। গত প্রায় চার বছরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঠিকাদারকে তিন দফা সময় বাড়ালেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। অথচ তারা উন্নয়ন কাজের জন্য বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে যশোর শহরবাসীর চলাচলে যন্ত্রণার অন্যতম নাম পুরাতন খুলনা বাসস্ট্যান্ড ও বকচর সড়ক। এখানকার সড়ক দিয়ে চলাচল ছিল মানুষের অত্যন্ত কষ্টের। ভাঙাচুরা সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে মানুষের নাভিশ্বাস উঠতো। এছাড়া বকচর হুশতলা এলাকার সড়কের একটি অংশ সারাবছরই ভেঙে মরণ ফাঁদ হয়ে থাকতো। এ অবস্থা বিবেচনায় এনে যশোর সড়ক বিভাগ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে পালবাড়ীমোড় থেকে মুড়লি পর্যন্ত সড়কটি ফোরলেনে উন্নীত করা হচ্ছে। একইসাথে গ্রহণ করা হয়েছে আধুনিক সব পরিকল্পনা। এ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে পুরাতন খুলনা বাসস্ট্যান্ড মনির উদ্দীন পেট্রোল পাম্প থেকে মুড়লিমোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কটির ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলছে। এ খাতে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৩১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। যার মাধ্যমে আমূল পরিবর্তন হচ্ছে সড়কের এই অংশটির। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে পালবাড়ীমোড় পর্যন্ত বাকি অংশের কাজ শুরু হবে।
যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মণিহার থেকে মুড়লি পর্যন্ত প্যাকেজ-১ এর আওতায় এক কোটি ৩১ লাখ ১৭ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর। সড়ক উন্নয়নের এ কাজটি শেষ হওয়ার তারিখ ছিল ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু গত প্রায় চার বছরেও এ কাজ শেষ হয়নি। আজো চলছে ঢিমেতালে। আর এতে স্থানীয়দের কষ্টের শেষ নেই। তারা বছরের পর বছর ধরে ধূলিঝড়ের দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, মণিহার থেকে মুড়লিমোড় পর্যন্ত ২ দশমিক ৯১ কিলোমিটার সড়কটি ২৪ ফুট করে মোট ৪৮ ফুটের ফোরলেনে উন্নিত করা হচ্ছে। এ সড়কের মাঝখানে থাকবে ডিভাইডার, পাশে থাকবে ছোট যানবাহন চলাচলের রাস্তা ও ফুটপাথ। নতুন করে নির্মাণ করা হবে ড্রেন। ঢাকা, খুলনা, নড়াইলসহ বিভিন্ন রুটের বাস ও ছোট যানবাহনের যাত্রী উঠানো নামানোর জন্য বাস মালিক সমিতির পাশে ও সড়কের বিপরীত দিকে দুটি বাস-বে থাকবে। বিভিন্ন রুটের গাড়ি সড়কের ওপর থেমে যানবাহন চলাচলে যাতে প্রতিবন্ধকতা না করে, এ জন্য বাস-বে’তে দাঁড়িয়ে গাড়িগুলো যাত্রী উঠাবে নামাবে।
ইতিমধ্যে এসব নকশা ও অ্যানিমেশন চুড়ান্ত হয়েছে এবং বকচর এলাকার সড়কের দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এরপর সড়কের বকচর কোল্ড স্টোরের সামনে থেকে মাটি খুঁড়ে গর্ত করে নতুন ভিতের মাধ্যমে এ কাজ শুরু হয়। যা চলমান রয়েছে ঢাকারোড মনির উদ্দীন পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত। সড়ক নির্মাণের প্যাকেজ-১ এর কাজ করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেড ও মাহবুব ব্রাদারস প্রাইভেট লিমিটেড। প্রথম দফায় কাজ শেষের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর, দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর, এরপর সর্বশেষ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত। এ সময়েও কাজ শেষ হবে না বলে এলাকাবাসী সংশয় প্রকাশ করেছেন। কারণ হচ্ছে সড়কের পাশে আজো খোঁড়াখুঁড়ির কাজ অব্যাহত রয়েছে। যদিও বর্তমানে মুড়লি এলাকায় সড়কে পিচ দেয়ার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। খোঁড়াখুঁড়ি চলছে পুরাতন খুলনা বাসস্ট্যান্ডের বিজয়স্তম্ভ এলাকায়।
এখানে কাজে অনিয়ম হচ্ছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, সড়ক উন্নয়ন কাজে সিডিউলের নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। ইচ্ছামত সড়কের কাজ চলছে। তাদের অভিযোগ, সিডিউল অনুযায়ী সড়কটি কমপক্ষে ৫ ফুট গর্ত খুড়ে নতুন করে ভিত তৈরি করতে হবে। কিন্তু ঠিকাদার সড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশের কোথাও ৫ ফুট খোড়েননি। বর্তমানে সড়কের ব্যস্ততম মণিহার এলাকার বিজয়স্তম্ভের পাশে শনিবার রাস্তা খোড়ার সময় এ চিত্র দেখা গেছে। ঠিকাদারের লোকজন সড়কটি ৩ থেকে ৪ ফুট খুঁড়েই বালি ফেলে অর্ধেক ভরাট করে দিয়েছেন। যাতে এটা কারো চোখে না পড়ে। এছাড়া নিয়মানুযায়ী বালিও দেয়া হচ্ছে না। ভৈরব নদ ও ফতেপুরের পুকুর থেকে তোলা মাটিযুক্ত বালি ঢালা হচ্ছে সড়কের ওই গর্তে। মুড়লি অংশের সড়কে পিচ ঢালাইয়েও উচ্চতা কমবেশি করা হয়েছে। কোথাও পিচ দেয়ার উচ্চতা ঠিক রাখা হয়েছে, আবার কোথাও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কারণে সড়কটি কোথাও উঁচু নিচু হয়ে রয়েছে। একইসাথে সড়কের মাঝখানে পাথরের খোয়া ভরাট ও পিচ দেয়া হয়নি। ডিভাইডার করার অজুহাতে মাঝখানে তিন ফুট অংশ ফাঁকা রাখা হয়েছে। অথচ এটি পিচ ঢালাই দেয়ার কথা বলে সূত্রটি জানিয়েছে।  
এদিকে, সড়কে চালাচলকারী হাজারো মানুষের সামনে এ জাতীয় অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটলেও কেউ প্রতিবাদ করতে পারছেন না। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলেছেন, কাজের সাইটে দেখভাল করার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন উপ সহকারী প্রকৌশলী থাকার নিয়ম হলেও তার দেখা পাওয়া যায় না। এ কারণে ইচ্ছামত এ কাজ চলছে।
এ বিষয়ে যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, মুড়লি থেকে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড মনির উদ্দীন পাম্প পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের কাজ করোনাসহ নানা কারণে বিলম্বিত হয়েছে। এ কারণে সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ২০২৩ সালের ২৩ জুনের পর সময় বৃদ্ধি করা হবে না। এরমধ্যেই ঠিকাদারকে সড়কের কাজ শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, সড়কের উন্নয়ন কাজে কোন অনিয়ম তিনি মেনে নেবেন না। সিডিউল অনুযায়ী কাজের যথার্থতা যাচাইয়ে একজন উপ সহকারী প্রকৌশলী দেখভাল করছেন। এছাড়া, তিনি নিজেও কাজটি তদারকি করছেন। এ সড়কটির কাজে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ জাতীয় কোন অনিয়ম ঘটলে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, সড়কের সবস্থানে ৫ ফুট খোঁড়ার বিষয়টি সিডিউলে বলা হয়নি। গড়ে আড়াই থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত খোঁড়ার কথা বলা হয়েছে। তবে গুরুত্ব বুঝে এটি কোথাও কোথাও ৫ ফুট করা হয়েছে। তিনি সড়কটির উন্নয়নের কাজ গুরুত্বের সাথে দেখভাল করছেন। শুক্রবারও তিনি কাজের স্থলে গেছেন বলে জানান।



গ্রামের কাগজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন


সর্বশেষ সংবাদ
চার দিন পর জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন কাদের গাজী
দলিল থেকেও জমির দখল পাচ্ছেন না চুড়ামনকাটির এক দিনমজুর
মোরেলগঞ্জে জমি দখলে মরিয়া প্রভাবশালীরা
মেধাবী জাতি তৈরিতে দুধের চেয়ে ভালো খাবার আর নেই : ডিসি
কালীগঞ্জের মৃৎশিল্পীরা সরকারি সহযোগিতা চান
হেরোইন মামলায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড
যশোরে বার্মিজ চাকুসহ ৩ কিশোর আটক
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ঘূর্ণিঝড় ‘বিপর্যয়’ ১৪ জুনের মধ্যেই আঘাত হানতে পারে
লালদীঘির পাড়ে চাঁদার বিনিময়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান
১০ বছর চাঁদা দিলে মিলবে আজীবন পেনশন
দেশের ইতিহাসে সরকার সবচেয়ে বড় নির্বাচনী বাজেট ঘোষণা করবে আজ
দাম কমল এলপিজির
গাওঘরা সরকারি বড় পুকুর নিয়ে উত্তেজনা, তদন্ত দাবি
বারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের উন্মুক্ত বাজেট ঘোষণা
আমাদের পথচলা | কাগজ পরিবার | প্রতিনিধিদের তথ্য | অন-লাইন প্রতিনিধিদের তথ্য | স্মৃতির এ্যালবাম
সম্পাদক ও প্রকাশক : মবিনুল ইসলাম মবিন | সহযোগী সম্পাদক : আঞ্জুমানারা
পোস্ট অফিসপাড়া, যশোর, বাংলাদেশ।
ফোনঃ ০২৪৭৭৭৬২১৮০, ০২৪৭৭৭৬২১৮১, ০২৪৭৭৭৬২১৮৩ বিজ্ঞাপন : ০২৪৭৭৭৬২১৮৪, ই-মেইল : [email protected], [email protected]
কপিরাইট © গ্রামের কাগজ সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft