gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ৪ মাঘ ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒ গ্রামের কাগজের রজতজয়ন্তী

স্মৃতির অ্যালবামে প্রিয়জনসহ নিজেকে খুঁজেছেন তারা
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ , ২০২৪, ১০:১৫:০০ পিএম , আপডেট : শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি , ২০২৫, ১২:৪৬:৪২ পিএম
সরোয়ার হোসেন:
GK_2024-03-28_66059980201cf.jpg

আবুল হোসেন ছিলেন দৈনিক গ্রামের কাগজের গাড়িচালক। পোস্ট অফিস পাড়ায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে অফিসের দায়িত্ব পালনের বাইরেও তিনি দিনের অধিকাংশ সময় পত্রিকা অফিসে থাকতেন। পত্রিকার সাথে তার সম্পর্ক ছিল আত্মিক। এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আবুল হোসেন নিহত হলে শোকাহত হয়ে পড়ে পুরো কাগজ পরিবার। গ্রামের কাগজে আবুল হোসেনের স্মৃতি আজও অমলিন। পত্রিকার রজতজয়ন্তী উৎসবে নিবেদিতপ্রাণ এই কর্মীকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছে দৈনিক গ্রামের কাগজ। অনুষ্ঠানস্থলে স্থাপিত ছবির অ্যালবামে (স্ট্যান্ডে) ‘আমরা যাদের হারিয়েছি!’ শিরোনামে উল্লেখিত ছবির মধ্যে আবুলের ছবি দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তার পরিবারের সদস্যরা। তারা অ্যালবাম থেকে আবুলের ছবি মোবাইলে ধারণ করার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেইসাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন গ্রামের কাগজের প্রতি।
আবুলের মতো গ্রামের কাগজের আরও যেসব কর্মী বিভিন্ন সময় প্রয়াত হয়েছেন গ্রামের কাগজ তাদের সবাইকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছে। তাদের সবার ছবিই স্থান পেয়েছে স্মৃতির অ্যালবামে। প্রয়াত এসব সহকর্মীদের মধ্যে যেমন আছে সদ্য প্রয়াত বিজ্ঞাপন ম্যানেজার মামুন মুস্তাহিদের ছবি, তেমনি রয়েছে অনেক বছর আগে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জুয়েছের ছবিও। গ্রামের কাগজের সম্পাদকসহ তার পরিবারের স্নেহধন্য জুয়েলের মৃত্যু এই পরিবারকে শোকাবহ করে তোলে। আজও তার কথা বলতে যেয়ে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন। ভারাক্রান্ত হন পত্রিকার সাবেক যুগ্ম বার্তা সম্পাদক কামরুজ্জামান শাওনের কথা উঠলেও।
গ্রামের কাগজ পরিবারের সিনিয়র সদস্য আশরাফ আলী। কাগজের যে কোনো প্রয়োজনে তার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রথম থেকে ২২তম-একটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন না। এমন একজন সুহৃদকে কেড়ে নিয়েছে মহামারি করোনা। স্মৃতির অ্যালবামে পরিবারের সাথে তার ছবিটিও স্থান দেয়া হয়েছে। পত্রিকার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অফিস প্রধান মিঠু শিকদার, প্রুফ রিডার লিয়াকত আলী, বিপণনকর্মী আব্দুল গনিকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে স্মৃতির অ্যালবামে তাদের ছবি উপস্থাপনের মাধ্যমে।
রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে গ্রামের কাগজ শুধু নিজেদের প্রয়াত কর্মীদের স্মরণ করেনি, যশোরে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের বিশিষ্ঠজন-যারা নানা সময়ে প্রয়াত হয়েছেন তাদেরকেও গ্রামের কাগজ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছে। এসব ব্যক্তিত্বরা ছিলেন গ্রামের কাগজের সুহৃদ। তারা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ যে কোনো আয়োজনেই গ্রামের কাগজে ছুটে এসেছেন। জানিয়েছেন প্রাণখোলা শুভেচ্ছা। দুঃসময়ে পাশে থেকে দিয়েছেন শান্তনা, এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। তাদের মধ্যে যশোরের রাজনীতির তিন মহারথি তরিকুল ইসলাম, খালেদুর রহমান টিটো এবং আলী রেজা রাজু বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই তিন বন্ধু রাজনৈতিক কারণে একটা সময়ে একে অপরের সাথে দূরত্ব রেখে চলতেন। অথচ, গ্রামের কাগজে তারা একসাথে এসেছেন, কেক কেটেছেন। তাদের সেই সময়কার একটা ছবি যশোরের রাজনীতিতে বিখ্যাত হয়ে আছে। রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের অ্যালবামে তাদের সেই ছবিসহ আরও যাদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে সেই প্রয়াত নেতাদের মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, বিমল রায় চৌধুরী, এম এ বারী, অ্যাডভোকেট শরীফ আব্দুর রাকিব, চৌধুরী শহিদুল ইসলাম নয়ন, শহিদুল আলম সদু, নূর উন নবী।
যশোরের নামকরা সাংবাদিকদের গুরু, স্বাধীন বাংলাদেশে যশোরের প্রথম দৈনিক মিয়া আব্দুস সাত্তার, প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সভাপতি জমির আহমেদ টুন ও মিজানুর রহমান তোতা, সাংবাদিক নেতা সাহা কিরণ কচি, মহিদুল ইসলাম মন্টু, মোহাম্মদ সেলিমÑতুলে ধরা হয়েছে গ্রামের কাগজের সাথে তাদের স্মৃতিকেও। বাদ যাননি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবু সালেহ তোতা, অধ্যাপক সুকুমার দাস, ডিএম শাহিদুজ্জামান, যশোর বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আলী আকবর, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ সুলতান আহমেদ, লেখক ফজলুল হক, সামাজিক ব্যক্তিত্ব হাসিব নওয়াজ, শ্রমিক নেতা ইউনুচ আলী, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আব্দুল মান্নান, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদ্য প্রয়াত সম্পাদক শাহানুর আলম শাহীন, তসবির সিনেমা হলের স্বত্বাধিকারী জাফর আহমেদ নোমানী মুন্না, পোস্ট অফিসপাড়াবাসী ফজলে এলাহী মনি।
এই অ্যালবামে তুলে ধরা হয়েছে গ্রামের কাগজের প্রেসে আগুন লাগার সেই দুঃসহ স্মৃতিকেও। সেসময় ক্ষতিগ্রস্ত সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিনকে শান্তনা দিতে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, তরিকুল ইসলাম, অধ্যাপক রফিকুল ইসলামসহ অনেক নেতা। দুঃসময়ে সেইসব নেতাদের পাশে পাওয়ার স্মৃতিকেই শুধু তুলে ধরেনি গ্রামের কাগজ, প্রকাশ পেয়েছে তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও।
‘স্মৃতির পাতা’ অ্যালবামে ফুটিয়ে তোলা হয় প্রথম থেকে ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নানা আয়োজনের ছবিগুলো। এসব ছবিতেও তুলে ধরা হয়েছে ঐতিহ্যের ধারায় লালিত গ্রামের কাগজের সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের নানা স্মৃতি। নানা সময়ে দেশি-বিদেশি প্রখ্যাত সাংবাদিক থেকে রাজনীতিক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের গ্রামের কাগজ পরিদর্শনের ছবিও আছে এই অ্যালবামে। আছে পাঠকের আস্থা ভালোবাসা অর্জনের পথে গ্রামের কাগজ দেশি-বিদেশি যত পুরস্কার অর্জন করেছে তার ছবিও।
রজতজয়ন্তীর উৎসবের আরও একটি আকর্ষণ ছিল ফটো স্ট্যান্ড। সকাল থেকে নানা বয়সী শুভান্যুধায়ী একা বা দল বেধে এই স্ট্যান্ডে ফটো তুলে পাঠকের সেরা পত্রিকা গ্রামের কাগজের প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে ছাড়েননি। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারসহ অন্যান্য অতিথিরা খুটিয়ে খুটিয়ে অ্যালবামের ছবিগুলো দেখেন। রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আগতরাও খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছেন এই অ্যালবাম। খুঁজেছেন নিজেকে এবং প্রিয়জনকেও।





আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝