gramerkagoj
শনিবার ● ৪ মে ২০২৪ ২০ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিচ্ছে শতাধিক ধুরন্ধর

সাংবাদিক সেজে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে ব্লাকমেইল
প্রকাশ : বুধবার, ২৪ এপ্রিল , ২০২৪, ১২:২১:০০ এ এম , আপডেট : শনিবার, ৪ মে , ২০২৪, ১২:২৩:১২ এ এম
বিশেষ প্রতিনিধি:
GK_2024-04-23_6627d20528df1.jpg

যশোরে কয়েকটি অসাধু চক্র অখ্যাত পত্রিকা, অখ্যাত অনলাইন ও অখ্যাত চানেলের কার্ড ঝুলিয়ে রীতিমত ব্লাক মেইল করে বেড়াছে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অতংকের মধ্যে পড়েছেন ওই চক্রের অশালীন আচরণ ও চাঁদাবাজিতে।
১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় সাংবাদিক কার্ড কিনে পুলিশের চোখ ফঁাকি দিয়ে চলছে ওই সব চক্রের শতাধিক ধুরন্ধর। চক্রটি সাংবাদিক সেজে মোটরসাইকেলে ও প্রাইভেটে প্রেস ও সাংবাদিক লিখে বোকা বানাচ্ছে বিভিন্ন মহলকে। এদের অনেকে রীতিমত মাদক বহনের কাজও করে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত অনিয়ম দুর্নীতি ও অপরাধ সংক্রান্ত সংবাদ পড়ে তারা ছুটে যাচ্ছে অভিযুক্তদের কাছে। আর করে চলেছে নানামুখি দর কসাকসি।
অখ্যাত অনলাইন, পত্রিকা ও চানেলের পরিচয়পত্র কিনে বুম হাতে গোটা যশোর দাপিয়ে বেড়ানো ধুরন্ধরদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠেছে।
সম্প্রতি যশোর শহর ও শহরতলীতে প্রেস ও সাংবাদিক লেখা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আর বেশির ভাগই নতুন মোটরসাইকেল। ট্রাফিক পুলিশ কিংবা চেকপোস্ট দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এরা চষে বেড়াচ্ছে শহর ও শহরতলী। পুলিশ এদের গাড়ির কাগজপত্র আছে কিনা, ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কিনা, গাড়ি চোরাই কিংবা টানা কিনা চেক করতে পারছে না সাংবাদিক ভেবে। নানা অপরাধে জড়িত, একাধিক মামলার আসামি এমন অনেকে অখ্যাত অনলাইন ও অখ্যাত দৈনিক ও চ্যানেলের নাম ভাঙিয়ে যশোর জেলা জুড়ে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা চলছে ঠাঁটেবাটে মোটরসাইকেলে আবার প্রাইভেটেও।
তথ্য মিলেছে, যশোরাঞ্চলের শতাধিক ধুরন্ধরের পকেটে রয়েছে নাম সর্বস্ব অনলাইন, পত্রিকা ও অখ্যাত টিভি ও আইপি টিভি চ্যানেলের কার্ড। মিডিয়া সংশ্লিষ্ট অসাধু চক্রের মাধ্যমে ১ থেকে দশ হাজার টাকা দিয়ে সাংবাদিক কার্ড কিনে সাংবাদিক সেজেছে তারা। ওই সব ধুরন্ধরেরা সাংবাদিক সেজে শহর দাপিয়ে বেড়ানো চক্রের মধ্যে এক সময়ের অনেক সন্ত্রাসীও রয়েছে। অনেক পত্রিকার অস্তিত্ব না থাকলেও ওই পত্রিকার নামে সাংবাদিক কার্ড ঝুলিয়ে বেড়াচ্ছে, যাতে সহজে শহরে মোটরসাইকেল চালিয়ে যেতে পারে। তারা দৈনিক গ্রামের কাগজসহ দায়িত্বশীল পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেই অভিযুক্তদের কাছে ছুটে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট পত্রিকা অফিস না জানলেও সংবাদ বন্ধ করার কথা বলে অর্থ হাতাচ্ছে। এমনকি তাদের অখ্যাত অনলাইন, পত্রিকা ও চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশ করে দেয়ার হুমকি দিয়েও ব্লাক মেইল করছে। গত সংসদ নির্বাচনের আগে কয়েকজন প্রার্থীকেও ব্লাকমেইল করে চক্রটির কেউ কেউ। আর গত কয়েক মাসে কখনও বুম হাতে, আবার কখনও পত্রিকা ও অনলাইনের কার্ড ঝুলিয়ে গিয়ে সরকারি ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে দল বেঁধে গিয়ে ভীতকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আর অনৈতিকভাবে হাতিয়ে নিয়েছে টাকা। এ ধরণের কার্ড ধারী অনেক ধুরন্ধরের তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থারও হাতে গেছে। সম্প্রতি চক্রের সংঘবদ্ধ কয়েকজন অনেকগুলো ব্লাক মেইলিংয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন।
অনলাইন টিভির সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নিজ গাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা এক প্রতারক। আবার এক প্রতারক নিজেকে একটি অস্তিত্বহীন পত্রিকার ব্যুরোচিফ পরিচয় দিয়ে যশোরে অপর একজনকে নিয়োগ দিয়েছে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে। ভুইফোঁড় পত্রিকার প্যাডে ভুয়া নিয়োগ পাওয়া ওই যুবক পরে জানতে পারেন, মূলত বাংলাদেশে ওই নামে কোনো পত্রিকাই নেই। তথ্য মিলেছে, সাংবাদিক সেজে চলা ওই চক্রটি পদস্থ শিক্ষিত সম্মানী ব্যক্তির সাথে অশালীন ভাষায় কথা বলছে, মারমুখি আচরণ করছে।
আবার ওই চক্রটির অনেকে মোটরসাইকেল-প্রাইভেটে সাংবাদিক বা প্রেস লিখে প্রায়ই বেনাপোল ছুটিপুর আসা যাওয়া করে। ওই সব ধুরন্ধর সাংবাদিক সেজে মাদক সেবন ও মাদক বহনের কাজে সাংবাদিক ও প্রেস লেখা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট ব্যহার করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে চলমান নিরাপদ সড়ক বিনির্মানে ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা কয়েক অফিসারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে এসব চক্রের অপতৎপরতা। চক্রের অধিকাংশের পকেটেই কেনা পরিচয় পত্র। মোটরসাইকেল এমনকি প্রাইভেটে সাংবাদিক ও প্রেস লিখে হম্বি তম্বি করে পথ চলছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেক সময় অবৈধ মালামাল বহন করছে।
এদিকে, তথ্য মিলেছে সাংবাদিক কার্ড বিক্রি করা চক্র ও ওই কার্ড কেনা চক্রকে খুঁজছে একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। দৈনিক গ্রামের কাগজসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে অভিযুক্ত অসাধুদের কাছে চলে যাওয়া একটি চক্রের খোঁজ মিলেছে। তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এ ব্যাপোরে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা সূত্র জানিয়েছে, মাঝে মধ্যে তথ্য মিলছে অনেক প্রতারক ও লেবাসধারী সাংবাদিক সেজে মাঠ চষছে। সাংবাদিক না হয়েও মনগড়া অনলাইনের কার্ড বানিয়ে শহরে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট নিয়ে ঘুরছে। লোকজনকে ব্লাক মেইল করছে। এদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। চক্রের কেউ কেউ সম্পাদক কিংবা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সেজে সাংবাদিক কার্ড বিক্রি করছে এসব বিষয়েও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। দ্রুত এসব প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনা হবে।

আরও খবর

🔝