gramerkagoj
শনিবার ● ১৮ মে ২০২৪ ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
gramerkagoj
তিউনিসিয়া থেকে দেশের নিজ গ্রামে এসেছে রাজৈরের ৫ যুবকের মরদেহ
প্রকাশ : শনিবার, ৪ মে , ২০২৪, ১০:৫১:০০ এ এম , আপডেট : শুক্রবার, ১৭ মে , ২০২৪, ১১:৫৬:৩৩ এ এম
মাদারীপুর প্রতিনিধি:
GK_2024-05-04_6635bc0056bc4.jpg

তিউনিসিয়া থেকে আড়াই মাস পর দেশে এসেছে মাদারীপুরের ৫ যুবকের মরদেহ। এই ঘটনায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাকী ৩ জনের মরদেহও এসেছে।
শুক্রবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যায় নিজ নিজ বাড়িতে কফিন পৌছলে পরিবার, প্রতিবেশী ও স্বজনদের মধ্যে শুরু হয় শোকের মাতম।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে সৌদি এয়ারলাইনসের মাধ্যমে লাশবাহী কফিন ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছে। পরে লাশগুলো ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে রাজৈরের ৫টিসহ ৮টি লাশবাহী কফিন স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মাদারীপুর জেলার রাজৈর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার নিজ নিজ বাড়িতে কফিন পৌছলে পরিবার, প্রতিবেশী ও স্বজনদের মধ্যে শুরু হয় শোকের মাতম। পরে মরদেহগুলো যার যার ধর্মমতে দাফন হয়।
নিহতরা হলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান কাজীর ছেলে সজীব কাজী (১৯), পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২২), সেনদিয়ার গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২২), উত্তরপাড়া গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে নয়ন বিশ্বাস (২৪), কবিরাজপুরের কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার হোসেন (২২)।
এছাড়াও আরো তিনজনের মরদেহও দেশে এসেছে। তিনজনের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। তারা হলেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন মিয়ার ছেলে রিফাদ (২১), ফতেয়পট্টি এলাকার মো. রাসেল (২০) ও গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইসরুল কায়েস আপন (২২)।
স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বেশ কয়েকজন যুবক ইতালীর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। প্রথমে তারা বিমানযোগে লিবিয়া পৌঁছান। পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে দালালদের মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। মাঝপথে তিউনিসিয়ার ভুমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিনে আগুন ধরে নৌকার তলা ফেটে যায়। পরে ভুমধ্যসাগরেই নৌকাটি ডুবে যায়। এতে রাজৈরের কোদালিয়ার সজীব কাজী, পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামে মামুন শেখ, সেনদিয়ার সজল বৈরাগী, কদমবাড়ির নয়ন বিশ^াস ও কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের রিফাদ, রাসেল ও আপনের মৃত্যু হয়।
পরে দীর্ঘ আড়াই মাস পর তিউনিসিয়া থেকে দেশে এসেছে রাজৈরের ৫ যুবকের মরদেহ। এই ঘটনায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাকী ৩ জনের মরদেহও নিজ গ্রামে এসেছে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের গজারিয়া গ্রামের রহিম শেখ ও সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা নেয়া হয়। পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মামুন শেখের বড়ভাই সজীব শেখ বলেন, আমার ভাইসহ ৮ যুবকের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্তর শেষে নিজ নিজ বাড়িতে এসেছে। একবার তিউনিসিয়ায় ময়না তদন্ত হয়েছে দ্বিতীয়বার দেশে হলো। আমার ভাই এভাবে লাশ হয়ে দেশে ফিরবে, তা কখনও কল্পনাও করিনি। তবুও শেষ দেখাটা দেখতে পেলাম, এটাই আমাদের শান্তনা।
নিহত সজীবের বাবা মিজানুর রহমান কাজী বলেন, ছেলে মারা গেছে ফেব্রুয়ারি মাসে, এখন মে মাস। লাশ দেশে আসলো দেরি করে, তারপরও ভোগান্তি। একবার তিউনিসিয়ায় আবার দেশে দুইবার ময়না তদন্ত হলো। তবুও শেষ দেখাটা দেখতে পেলাম। ছেলের এই মৃত্যু মেনে নিতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
নিহত মামুন শেখের মা হাফিজা বেগম কেদে কেদে বলেন, কত স্বপ্ন নিয়ে আমার ছেলে ইতালী যেতে চেয়েছিলো। আমাদের সুখে রাখবে, বাড়িতে নতুন ঘর দিবে আরো কত স্বপ্ন ছিলো মামুনের। কোন স্বপ্ন তো পূরণ হলো না। উল্টো বাবা আমার লাশ হয়ে দেশে আসলো। এই কষ্ট আমি কিভাবে সইবো। আমার ছেলের এই অকাল মৃত্যুর কোনভাবেই সইতে পারছিনা।
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, তিউনিসিয়ায় দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে কোন আইনগত সহযোগিতা চাইলে করা হবে। এরইমধ্যে সরকারিভাবে মরদেহ দেশে পৌঁছেছে।

আরও খবর

🔝