gramerkagoj
সোমবার ● ২০ মে ২০২৪ ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলায় নির্বাচন আজ

হেভিওয়েটদের প্রেস্টিজ লড়াই!
প্রকাশ : বুধবার, ৮ মে , ২০২৪, ১২:০৩:০০ এ এম , আপডেট : রবিবার, ১৯ মে , ২০২৪, ০৪:৩৩:৩৮ পিএম
সরোয়ার হোসেন:
GK_2024-05-07_663a5269d454e.jpg

আজ শুরু হচ্ছে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণপর্ব। প্রথম ধাপে আজ দেশের যে ১৫২টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে তার মধ্যে রয়েছে যশোরের মণিরামপুর এবং কেশবপুর। এই দুই উপজেলায় ভোট নেয়া হবে ইলেক্ট্রনিক্স ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে। ইতিমধ্যে দুই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বলা চলে যশোরের আটটি উপজেলার মধ্যে এ দু’উপজেলার নির্বাচনই বেশি আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, আজ সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে একটানা ভোট গ্রহণ করা হবে। অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণ পর্ব সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও। প্রতিটি কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হবে। কেন্দ্রগুলোতে থাকবেন আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা। ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সর্বক্ষণিক কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করবেন।
মণিরামপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-৫ সংসদীয় আসন। গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে তৎকালীন এমপি ও প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এসএম ইয়াকুব আলী। অন্যদিকে, যশোর-৬ সংসদীয় আসনটি কেশবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে গত নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন এমপি শাহীন চাকলাদারকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আজিজুর রহমান। দু’জন হেভিওয়েট প্রার্থীকে পরাজিত করে তুলনামূলক কম রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দুইজন নেতা এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মণিরামপুর এবং কেশবপুর উপজেলা যশোরের রাজনৈতিক অঙ্গণে ব্যাপক আলোচিত হয়ে ওঠে।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফলিশ ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই সেই আলোচনা বেশ ডালপালা মেলে। যদিও এবারের উপজেলা নির্বাচনে থাকছে না কোনো দলীয় প্রতীক বা দলীয় কোনো প্রার্থী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এ কারণে যেমন বেড়েছে প্রার্থীর সংখ্যা, তেমনি নির্বাচন স্থানীয়ভাবেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় হয়ে ওঠারও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই সুযোগটি নিচ্ছেন স্থানীয় নেতারা। কোনো একক বলয়ে আটকে না থেকে যে যার মতো নির্বাচনে প্রার্থী হলেও ভেতরে ভেতরে প্রভাবশালী নেতাদের সমর্থন বা আশির্বাদ নিয়েই কোনো না কোনো প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন বলেই সাধারণের বিশ্বাস। সে জায়গা থেকে ধারণা করা হচ্ছে মণিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মর্যাদার লড়াই হয়ে উঠেছে।
মণিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আমজাদ হোসেন লাভলু। তার প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন। আমজাদ হোসেন লাভলু সাবেক এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যরে পক্ষের এবং প্রভাষক ফারুক হোসেন এমপি এসএম ইয়াকুব আলীর পক্ষের নেতা হিসেবে পরিচিত। তাদের প্রার্থিতার বিষয়ে সাবেক ও বর্তমান দুই এমপির দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে কোনো ঘোষণাও তারা দেননি। তবে, মণিরামপুর উপজেলার মানুষের বদ্ধমূল ধারণা আমজাদ হোসেন লাভলু স্বপন ভট্টাচার্য্যরে এবং ফারুক হোসেন এসএম ইয়াকুব আলীর সমর্থন নিয়েই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। ফলে, শীর্ষস্থানীয় দুই নেতা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে নেতাকর্মীদেরকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন। যার মধ্য দিয়ে এই ভোট হয়ে উঠেছে তাদের মর্যাদার লড়াইও। আজকের নির্বাচনে সে কারণে মণিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে শুধু এই উপজেলাতেই নয়, যশোরের রাজনীতি সচেতন সকল মানুষেরই সমান আগ্রহ রয়েছে।
পার্শ্ববর্তী কেশবপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন। তারা হলেন উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ-নূর-আল আহসান বাচ্চু, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলামের ছেলে ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না, বর্তমান পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নাসিমা আক্তার সাদেক, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মফিজুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহপ্রচার সম্পাদক এসএম মাহবুবুর রহমান, ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগনেতা ওবায়দুর রহমান ও ব্যবসায়ী ইমদাদুল হক।
স্থানীয় ভোটাররা জানান, গত সংসদ নির্বাচনে হারানো জমিন ফিরে পেতে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্নার প্রতি আশির্বাদ রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের। অন্যদিকে, নাসিমা আক্তার সাদেক প্রচার করছেন বর্তমান এমপি আজিজুর রহমান তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। যদিও এসব ব্যাপারে সাবেক ও বর্তমান এমপি প্রকাশ্যে কোনো ঘোষণা দেননি। তারপরও উপজেলাব্যাপী বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারণায় রয়েছে। সে কারণে পান্না এবং নাসিমার মধ্যে কে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন তা নিয়ে রয়েছে জোর আলোচনা। তবে, সাধারণ ভোটারদের সাথে আলোচনা করে চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নাম শোনা গেছে আব্দুল্লাহ-নূর-আল আহসান বাচ্চু ও মফিজুর রহমানের। বাচ্চু সাবেক এমপি আব্দুল হালিমের সন্তান এবং ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, আজিজুর রহমান দীর্ঘদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের একাধিক নেতা তার সাথে রয়েছেন।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলার মোট ১৬৫টি কেন্দ্রে তিন লাখ ৬০ হাজার সাতশ’ ৩৫ জন ভোটার রয়েছেন। ভোটারদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৮২ হাজার চারশ’ ১১ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭৮ হাজার তিনশ’ ২২জন। এই উপজেলায় মোট ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে চারজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন। চেয়ারম্যান পদের অপর প্রার্থী মিকাইল হোসেন ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
কেশবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ১৪জন প্রার্থীর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী রয়েছেন। এই উপজেলায় মোট ভোটার দুই লাখ ২০ হাজার নয়শ’ ৫৪জন। তাদের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ১১ হাজার সাতশ’ ৭৫, নারী এক লাখ নয় হাজার একশ’ ৭৭ এবং হিজড়া ভোটার দুইজন। উপজেলায় ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে ৯৫টি।
এদিকে, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্যে জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে দুই উপজেলায়। মঙ্গলবার জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মাইক প্রচার চালিয়ে ভোটারদেরকে কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানানো হয়। এতে ভোটারদেরকে সার্বিক নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে বলা হয় নির্বাচনে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ১২জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সর্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েনের কথাও জানানো হয় ওই প্রচারণায়।

আরও খবর

🔝