gramerkagoj
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
gramerkagoj
নারীদের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে তৈরি করতে হবে
প্রকাশ : বুধবার, ১৫ মে , ২০২৪, ১২:৫৫:০০ পিএম , আপডেট : শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ১১:৩১:৩৬ এএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2024-05-15_6644599f6cdda.jpg

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারী ও পুরুষের মধ্যে অসমতা দূরীকরণ, নারী শিক্ষার বিস্তার ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রেও আমাদের আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের মেয়েদের কেবল ভুক্তভোগী হিসেবে না দেখে তাদের পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে তৈরি করতে হবে।
বুধবার (১৫ মে) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘আইসিপিডি থার্টি গ্লোবাল ডায়ালগ অন ডেমোগ্রাফিক ডাইভার্সিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে লন্ডন গার্লস সামিটে আমি বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সে লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। বাল্যবিবাহ আইন সংশোধন, জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং নারী ও কন্যাশিশুদের কল্যাণে বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের ফলে বাল্যবিবাহের হার বহুলাংশে কমেছে। আমরা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি’ গড়ে তুলেছি। এছাড়াও সমাজের বিভিন্ন স্তরের কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে ৮ হাজারেরও বেশি কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে। ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য এক কোটি নারীকে তথ্যসেবা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্প লাইন ‘১০৯’ চালুর মাধ্যমে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আমরা প্রতিটি থানায় নারী পুলিশের দায়িত্বে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সাপোর্ট ডেস্ক স্থাপন করেছি।
তিনি বলেন, আমরা জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্য বিষয়ক কৌশলপত্র (২০১৭-২০৩০) এবং এর বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে আমরা ১ হাজার ২৫৩টি ইউনিয়ন পর্যায়ের সেবা কেন্দ্রে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য সেবা কর্নার প্রতিষ্ঠা করেছি। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত প্রায় ৫০ লাখ কিশোরীকে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে আমরা দেশব্যাপী ‘স্কুল মিল’ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচি চালু করেছি। ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ৪৬৪ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত উপবৃত্তি ব্যবস্থা চালু করেছি। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে। আমরা জাতীয় বাজেটের মোট ৩০ শতাংশ নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ রেখেছি। বেইজিং ঘোষণা ও কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ও জাতীয় কর্মসূচি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের শ্রমশক্তির ৪২.৬ শতাংশ নারী, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আইসিটি খাতে ২০২৬ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-২০২৩ অনুযায়ী রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম এবং এ অঞ্চলে প্রথম। এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারী প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ আগের সাধারণ নির্বাচনের তুলনায় ৩৮.২৪ শতাংশ বেশি ছিল। আমাদের সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সুফল হিসেবে ২০২৩ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২.৩ বছর। বর্তমানে আমাদের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশই কর্মক্ষম।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৯.২৯ শতাংশ ষাটোর্ধ্ব বয়সী। প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। ২০২৩ সালে আমরা ৫৮ লাখের বেশি প্রবীণ নাগরিকের জন্য বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করেছি। এর পাশাপাশি আমরা অসহায় নারী, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং সমাজের অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারিত করেছি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪ কোটি মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়াও আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যেকোনো নাগরিক এই পেনশন সুবিধা নিতে পারবেন।
২০২১ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন’ বাস্তবায়ন করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য আমরা চারটি পিলার নির্ধারণ করেছি: স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি। এ লক্ষ্যে আমরা আমাদের জনগোষ্ঠীকে বিশেষ করে তরুণ সমাজকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনগোষ্ঠীতে পরিণত করার জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছি। অতি সম্প্রতি আমরা জনসংখ্যানীতি ২০১২ যুগোপযোগী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নতুন নীতিতে ২০৪১ থেকে ২০৬১ পর্যন্ত যে ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ড অব্যাহত থাকবে তা কাজে লাগিয়ে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরে কর্মদক্ষতা সৃষ্টি ও উন্নয়ন এবং কর্মমুখী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সংঘাত ও রাজনৈতিক কারণে উপদ্রুত ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর দিকে মনোযোগ দেওয়াও অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং ইসরায়েলের গণহত্যা ও আগ্রাসনের ফলে নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের কথা, বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশু ফিলিস্তিনে আজ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। প্রতিনিয়ত জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে তারা লড়াই করছে। আমি আশা করি, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা সেখানে সবার জন্য, বিশেষ করে নারী ও শিশুর, জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, জনসংখ্যার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। বিশ্বের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদের জনসম্পদে রূপান্তর করতে হবে। যার মাধ্যমে আমরা একটি সমৃদ্ধশালী বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব। এ লক্ষ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা বিশেষ করে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা খাতে আন্তর্জাতিক অর্থায়নের পরিমাণ ও সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও আন্তরিক হতে হবে।

আরও খবর

🔝