শিরোনাম |
❒ জুনের মধ্যে কাজ শেষ না হলে ফেরত যাবে অর্থ
‘সরকারি সম্পত্তি কি শেষ পর্যন্ত অরক্ষিত থেকে যাবে। স্কুল ক্যাম্পাসে কি মাদকের আড্ডা অব্যাহত থাকবে। সুবিধাবাদীদের বিরোধিতায় কি সরকারি কাজ বন্ধ থাকবে।’ এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যশোর শহরের বকচর এলাকার মানুষের মধ্যে। বকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাচীর নির্মাণ কাজ মাসের পর মাস বন্ধ থাকায় এসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আগামী জুন মাসের মধ্যে এই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হলে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। একইসাথে বিদ্যালয়ের প্রাচীর নির্মাণে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার-টিইও ইসমাইল হোসেনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার লোকজন। তাদের বক্তব্য, টিইও’র আন্তরিকতার অভাবে নির্মাণ কাজ এগুচ্ছে না। টিইও’র ভূমিকায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন ইউএনও রিপন বিশ্বাসও।
দীর্ঘদিন ধরে যশোর শহরের বকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাচীর নির্মাণে বাধা দিচ্ছে চিহ্নিত একটি মহল। এ কারণে হাইওয়ের পাশে অবস্থিত স্কুলটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। সরকারি এই সম্পত্তি সুরক্ষিত করতে যতদ্রুত সম্ভব প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দাবি অভিভাবকসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্বার্থান্বেষী একটি মহল অসৎ উদ্দেশ্যে পাশে ঈদগাহে নামাজ পড়ার অজুহাত তুলে সরকারি সম্পত্তি বেহাত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। একইসাথে তারা ওই এলাকার মাদকসেবীদের স্কুল ক্যাম্পাসে সন্ধ্যার পর মাদকের আড্ডা বসানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে দিনের পর দিন বিভিন্ন দপ্তরে ধর্না দিলেও তেমন কোনো সাড়া পাচ্ছে না। বিশেষ করে সরকারি এই সম্পত্তি রক্ষা করার দায়িত্ব যে কর্মকর্তার সেই টিইও দায়সারা আচরণ করছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। টিইও’র দায়িত্বহীনতার কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অরক্ষিতই থেকে যাচ্ছে বলে দাবি তাদের।
টিইও’র এ ধরনের আচরণে ক্ষুব্ধ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও। ইউএনও গত রাতে এ প্রতিবেদককে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি টিইওকে সরেজমিনে যেতে বলেছিলাম। তিনি ফিরে যা বলেছেন সেটি অস্পষ্ট। তিনি এসে বললেন, প্রাচীর দিলে ঈদগাহের জায়গা কম হয়ে যাবে। ঈদগাহের জায়গা কমবেশি দেখার দায়িত্ব তার না। তার কাজ সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করা। আমি তাকে বলেছি, প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রাচীরের কাজ করতে। তখন যদি কেউ বাধা দিতে আসে তাহলে বিষয়টি আমি দেখবো। প্রয়োজনে ওসি সাহেবের সহযোগিতা নেবো। কিন্তু তিনি তা না করে একবার আমার ওপর একবার ইঞ্জিনিয়ারের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। তিনি আসলে কী চাচ্ছেন সেটিই বুঝতেছি না।’
বকচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশে প্রাচীর ও গেট নির্মাণের জন্য গত বছরের জুন মাসে ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। এই কাজ করতে ঠিকাদারও নিয়োগ দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কাজ পায় ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং হাউজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এরপর সেখানে কাজ করতে গেলে চিহ্নিত ওই মহলটি বাধা দেয়। এমনকি ঠিকাদার ও তার লোকজন, প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতিকে লাঞ্ছিত করে তারা। এ কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ বছরের ২৮ জানুয়ারি স্কুল কর্তৃপক্ষ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসমাইল হোসেন বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাসকে অবগত করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতে তাৎক্ষণিক কোতোয়ালি থানার ওসির হস্তক্ষেপ চেয়ে কাগজপত্র পাঠান। এরপর ইউএনও’র উদ্যোগে পুলিশের সহযোগিতায় স্কুলের তিনপাশে প্রাচীর ও গেট নির্মাণ করা হয়। এরপর পুলিশি তৎপরতা থেমে গেলে ওই মহলটি ঈদগাহের সীমানা দিয়ে প্রাচীর নির্র্মাণে বাধা দিচ্ছে। ফলে, স্কুল ক্যাম্পাস অরক্ষিতই রয়ে গেছে। এখানে আগের মতো প্রতিদিন সন্ধ্যায় মাদকের আড্ডা বসছে।
ম্যানেজিং কমিটি জানিয়েছে, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হলে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যাবে। তখন অসমাপ্ত থেকে যাবে কাজটি। আর স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি কাজ শেষ করতে খুবই আন্তরিক। যদিও এই কমিটির মেয়াদ আছে মাত্র কয়েক মাস। এ কারণে চিহ্নিত ওই মহলটি টিইওকে ব্যবহার করছে। তারা টিইওকে দিয়ে যেকোনোভাবে এই কমিটির মেয়াদ পার করার চেষ্টা করছে। নতুন কমিটি এলে এইভাবে তৎপরতা চালাতে পারবে না বলে মনে করছে ওই মহলটি। স্কুলের সভাপতি এলতাজ উদ্দীন রানা বলেন, ‘সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের। আমরা কাজকর্ম বাদ দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করলেও সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের কোনো সাড়া মিলছে না।’
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে ইউএনও স্যারের সাথে কথা হয়েছে। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ঠিকাদার ডেকে কাজ করার উদ্যোগ নেবেন।’
উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল হক বলেন, ‘জায়গা শিক্ষা বিভাগের। আমরা নির্ভেজাল জায়গা পেলে কাজ করবো। তা না হলে যেটুকু কাজ হয়েছে তার বিল করে পাঠিয়ে দেবো। আমরা কেন মারামারি মামলা মোকদ্দমার মধ্যে যাবো। এতো সময় আমাদের নেই।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম বুধবার রাত আটটায় বলেন, ‘ম্যানেজিং কমিটির লোকজন আজ (বুধবার) আমার কাছে এসেছিল। তারা খুবই আন্তরিক। আমি এখনই টিইওকে বলে দিচ্ছি, যাতে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ সম্পন্ন করে।’