শিরোনাম |
❒ চৌগাছায় শামীম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত
আর মাত্র একদিন পর ২১ মে চৌগাছা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। শেষ সময়ে নির্বাচনের ডামাডোল বেজে উঠেছে উপজেলাব্যাপী। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে হাট-বাজার, গ্রাম, মহল্লা। প্রচার মাইকও তুঙ্গে। তীব্র গরম উপেক্ষা করে প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোটারদের অনুকুলে আনতে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে এগুচ্ছেন সকল প্রার্থী। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঘরানা ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নেই। ফলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা ভোটারদের মাঝে নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা না গেলেও ভিতরে ভিতরে কষছেন রাজনীতির অংক। উপজেলা নির্বাচন এবার ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চৌগাছার বীর বাঙ্গালী পিতাম্বর বিশ্বাস ও তার ভাই দিগম্বর বিশ্বাস কৃষকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ব্রিটিশদের রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এই আন্দোলনে তারা জীবন উৎসর্গ করেন। মূলত এখান থেকে শুরু হয় এই অঞ্চলের রাজনীতির পথচলা। এরপর ভাষা আন্দোলন এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরচিত অধ্যায় রচিত হয় চৌগাছায়। রাজনীতি এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গ করে ইতিহাসে নাম লেখান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সহযোগী সিংহঝুলী গ্রামের শহীদ মশিয়ূর রহমান। তারপরও দলীয় সংঘাত, হানাহানি, নৈরাজ্যের মাধ্যমে অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। ফলে থমকে গেছে পিছিয়ে পড়া চৌগাছার বহু উন্নয়ন। স্থানীয় নির্বাচনে এর প্রভাব সে কারণে বরাবরই দেখা যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ভারতঘেঁষা চৌগাছা উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা রয়েছে। ১৯৭৭ সালে ঝিকরগাছা, কালীগঞ্জ ও মহেশপুর থানার কিছু অংশ নিয়ে চৌগাছা থানা গঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে উপজেলায় উন্নীত হয়। প্রায় চার লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই উপজেলায় ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪শ’ ২৮। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১ হাজার ৬৫ ও মহিলা ভোটার ৯৮ হাজার ৩শ’ ৬৮। মোট ভোট কেন্দ্র ৮১ ও বুথের সংখ্যা ৫’শ ৭৮টি।
উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান ও মৃধাপাড়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. এম মোস্তানিছুর রহমান (মোটরসাইকেল) ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান (আনারস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম রেজা। তিনি বৈদ্যুতিক বাল্ব প্রতীকের প্রার্থী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী পৌর কাউন্সিলর সিদ্দিকুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার প্রেক্ষিতে আদালত এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শাহীন। প্রার্থী বাছাইয়ের দিন পৌর কাউন্সিলর থেকে পদত্যাগ না করায় প্রাথমিকভাবে সিদ্দিকুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল হয়। পরবর্তীতে হাইকোর্টে রিট করলে চতুর্থ সপ্তাহের জন্য প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। তবে প্রার্থী শামীম রেজা ওই রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে সুপ্রিমকোর্টের এপিলেট ডিভিশনে পিটিশন করেন। গত ১৫ মে পিটিশনের শুনানিও শেষে আদালত সিদ্দিকুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করেন। যার কপি স্থানীয় নির্বাচন অফিসে আসার পর শামীমকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। শামীম রেজার বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি সত্যতা স্বীকার করেছেন উপজেলা সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহাও।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটযুদ্ধে মাঠে আছেন সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও নিহত যুবলীগ নেতা ইমামুল হাসান টুটুলের স্ত্রী আকলিমা খাতুন লাকি (কলস), যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা খাতুন (হাঁস), বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজনিন নাহার (বৈদ্যুতিক পাখা), যুব মহিলালীগ নেত্রী কামরুন্নাহার শাহিন (ফুটবল) ও রিপা ইসলাম (প্রজাপতি)।
চেয়ারম্যান পদে ড. মোস্তানিছুর রহমান ২০১৯ সালের নির্বাচনে সকলকে তাক লাগিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএম হাবিবকে পরাজিত করেন। এবারও এসএম হাবিব তার প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে, এবার কোনো প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন বা প্রতীক দেয়নি দেশের প্রাচীনতম এই রাজনৈতিক দল। সে কারণে ভোট নিয়ে দলের প্রতি দায়-দায়িত্ব পালনেরও কোনো অজুহাত কেউ দেখাতে পারবেন না বলে মনে করছেন ভোটাররা। যার প্রভাব এবারের নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে। এসএম হাবিব ও ড. মোস্তানিছুর রহমান তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন। তরুণ নেতা হিসেবে মোস্তানিছুর রহমানের আর্বিভাব হলেও এসএম হাবিবের দলের প্রতি নিবেদন এবং ত্যাগ মলিন হয়নি। তিনি ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে পরপর দুইবার এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০২ সালে ক্লিনহার্ট অপারেশনে গ্রেপ্তার হন তিনি। এছাড়া রাজনৈতিক মামলা, অত্যাচার, নির্যাতন ও নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যেও তিনি আওয়ামী লীগের কান্ডারি হয়ে ভূমিকা পালন করছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও নিহত যুবলীগ নেতা ইমামুল হাসান টুটুলের স্ত্রী আকলিমা খাতুন লাকি, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা খাতুন এবং বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজনিন নাহারের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি।