gramerkagoj
রবিবার ● ১১ মে ২০২৫ ২৮ বৈশাখ ১৪৩২
gramerkagoj

❒ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত রেমাল, ৬ জেলাকে বিশেষ প্রস্তুতির নির্দেশ

খুলনা সাতক্ষীরা মোংলায় প্রস্তুত ৮৬৬ সাইক্লোন শেল্টার
প্রকাশ : শনিবার, ২৫ মে , ২০২৪, ১০:৩৪:০০ পিএম , আপডেট : রবিবার, ১১ মে , ২০২৫, ১১:১৫:৫৯ এএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2024-05-25_665215040d179.jpg

পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরো ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবীর।
সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপের তালিকা অনুযায়ী এ অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রেমাল’; এটা ওমানের দেওয়া নাম।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল থাকায় মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ৭ নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাত ৮টায় বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি রাত ৮টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪০৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
গত ২২ মে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ দশা পেরিয়ে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে।
সাগরে কোনো ঘূর্ণিবায়ুর চক্র তৈরি হলে এবং এর কেন্দ্রের কাছে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬২ কিলোমিটারের বেশি হলে তখন তাকে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলাকে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।
দুপুরে সভা শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। উপকূলবর্তী সব জেলাকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত পূর্বাভাস ও সম্ভাব্য ভূমি অতিক্রম এলাকার ভিত্তিতে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা জেলাসমূহকে অধিকতর প্রস্তুত থাকার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি শনিবার মধ্যরাতেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন। গভীর নিম্নচাপটি ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম হবে ‘রেমাল’। এ নাম প্রস্তাব করেছে ওমান। আরবিতে এর অর্থ ‘বালি’।
দুপুর ১টায় বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
প্রতিমন্ত্রী মহিববুর বলেন, “বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, ভারতের আবহাওয়া অফিস, চীনের আবহাওয়া অফিস, জাপানের আবহাওয়া অফিস এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমরা বুঝতে পেরেছি, ঘূর্ণিঝড়টি আসন্ন। এখন চলছে সংকেত ৩। এটা (সতর্ক সংকেত) সন্ধ্যা নাগাদ বা রাতে ৪-এর উপরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, গ্রামের কাগজের খুলনা ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় খুলনায় বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে উপকূলের তিন লাখ ১৫ হাজার মানুষের সহায়তায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়া ৬০৪টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ তিনটি মুজিব কিল্লা প্রস্তত রয়েছে।
শনিবার সকালে খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যেককে নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে। একইসঙ্গে সব উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিপদ সংকেত জারি হলে এলাকায় মাইকিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঘূর্ণিঝড়ে জরুরি প্রয়োজনে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য শুকনো খাবার, ওষুধ, ঢেউটিন ও নগদ টাকা প্রস্তত রাখা হয়েছে। প্রস্তত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে উপকূলের ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব শেল্টারে তিন লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ আশ্রয় ও ৫৬০টি গবাদি পশু রাখা যাবে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় পাঁচ হাজার ২৮০ স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরায় প্রস্তুত করা হয়েছে ১৬৯টি সাইক্লোন শেল্টার। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে ৮৮৭টি। এর মধ্যে স্থায়ী সাইক্লোন শেল্টার ১৬৯টি ও অস্থায়ী ৭১৮টি। এসব কেন্দ্রে চার লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন।
শনিবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্টেশন ত্যাগ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ মৌসুমে একটি সাধারণ প্রস্তুতি আমাদের থাকেই। তারপরও আসন্ন ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে আমাদের উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনিসহ কালিগঞ্জ দেবহাটা এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত, শুকনো খাবার মজুত, প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুত করতে ও পর্যাপ্ত খাবার-পানি মজুত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ, নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ডও প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এ (মোবাইল-০১৭৭৫৯১৭০৭১, টেলিফোন-০২-৪৭৭৭৪২৩৪৪) নম্বরগুলোতে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা যাবে।
সাতক্ষীরা জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের যে গতিপথ আছে সেটি ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত বরারব সুন্দরবন উপকূলের দিকে। ঝড়ের দিক পরিবর্তন হলে সাতক্ষীরা থেকে পটুয়াখালী জেলার উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা আছে।
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের মোংলায় জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকেলে এ সভা করেছে উপজেলা প্রশাসন। এর আগে দুপুরে ৩ নম্বর স্থানীয়ভাবে সতর্ক সংকেত জারি করা হয়।
সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়কে ঘিরে এখানে ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৩২০জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া মজুত করা হয়েছে প্রয়োজনীয় শুকনা খাবার ও ওষুধ।
স্থানীয়রা জানান, তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারির পর থেকে মোংলার উপকূলে আবহাওয়া দিনভর স্বাভাবিক আবহাওয়া ছিল। সন্ধ্যায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেও রিমালের প্রভাব দেখা যায়নি।
এদিকে আসন্ন দুর্যোগকে ঘিরে দুপুরে জরুরি বৈঠক করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে এখনও বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড উপকূলে মাইকিং করে সতর্ক বার্তা প্রচার করছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে খোলা হয়েছে পৃথক কন্ট্রোল রুম।
প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরার উপকূল অঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ৭ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। এজন্য পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সব প্রস্তুতি রয়েছে। ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও উপকূলে ৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকায় ইফেক্ট হওয়ার ঝুঁকি আছে। এখন ৫০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থান করছে। বিশেষ করে পায়রা ও মোংলা বন্দরের সরাসরি দক্ষিণে।’
এর আগে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় পাল্টে দেওয়া হয়েছে সতর্ক সংকেত। ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেতের পরিবর্তে চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
নিম্নচাপটি শনিবার মধ্যরাতেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন।
এর আগে দুপুর ১টায় বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।

আরও খবর

🔝