gramerkagoj
শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
gramerkagoj
নার্সিং একটি মহৎ পেশা
প্রকাশ : সোমবার, ২৭ মে , ২০২৪, ০৯:৪৫:০০ পিএম
মাহমুদা রিনি:
GK_2024-05-27_6654ac52066c7.jpg

মহৎ পেশা বলতে যে কাজগুলি বোঝায় অসুস্থ মানুষের সেবা বা নার্সিং তার মধ্যে অন্যতম। 'সেবা পরম ধর্ম' এ কথা সকল ধর্মের মর্মবাণী। মানুষ সবচেয়ে বেশি অসহায় বোধ করে যখন সে বা তার পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়। একটা পর্যায়ে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা ছাড়া পরিবারের আর কোনো উপায় থাকে না তখন চিকিৎসক এবং নার্সের উপর মানুষ সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। চিকিৎসক রোগ নির্ণয় করে ব্যবস্থাপত্র দেন। রুটিনমাফিক চেক-আপও করেন কিন্তু রোগীর সার্বক্ষণিক দেখাশোনার দায়িত্বে থাকেন নার্স, আয়া বা অন্যান্য দায়িত্ব প্রাপ্য লোকজন। সময় মতো ঔষধ, ইনজেকশন, খাবার সহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সবই নির্ভর করে তাদের উপর। অসুস্থ অবস্থা থেকে একজন মানুষ যখন সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরে তখন তার মন ডাক্তার এবং নার্স সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতায় পূর্ণ থাকে যদি সে যথাযথ সেবা পায়। এর বিপরীত চিত্রও আছে। যদি এদের অবহেলায় রোগীর কোনো ক্ষতি হয় তাহলে সেই দুঃখও সারাজীবন রোগীর স্বজনদের বয়ে বেড়াতে হয়।
সেবার জন্য নিবেদিতপ্রাণ এই পেশার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশ্বব্যাপী মহৎ পেশার স্বীকৃতি স্বরূপ ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল এর জন্মদিন ১২ মে 'বিশ্ব নার্স দিবস' হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। যার মধ্যেমে সম্মান জানানো হয় বিশ্বের সকল সেবিকা এবং এমন এক নারীকে যিনি তার কর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন- নার্সিং শুধু পেশা নয় সেবা। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল মানুষের সেবায় উৎসর্গকৃত এক মহাপ্রাণ সেবিকা যিনি শৈশব থেকেই স্বপ্ন দেখতেন তিনি সেবিকা হবেন। মানুষের সেবা করবেন। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল নার্সিং প্রশিক্ষণ স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে অসংখ্য কাজ করে গেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় নার্সিংয়ের উপর বইও লিখেছেন। অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পদক এবং খেতাবে ভূষিত হয়েছেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। যুগ যুগ ধরে মানুষের সেবায় তাঁর নামটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বর্তমানে চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার এসেছে। সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, ছোটো বড়ো ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র যেমন বেড়েছে ডাক্তারের পাশাপাশি নার্সের চাহিদাও তেমনই বেড়েছে। যদিও আনুপাতিক হারে নার্সের সংখ্যা তেমন বাড়েনি। কিন্তু সংখ্যা যা-ই থাকুক তাদের সেবার মান কোনভাবেই উচ্চমানের বলা যায় না। ব্যতিক্রম হয়তো আছে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের আচরণ, রোগীর শারীরিক মানসিক অবস্থা বুঝে তাকে সামলানোর ধৈর্য ও মানসিকতার অভাব দেখা যায়। নার্স অর্থাৎ সেবিকা যা শুধু পেশা নয়, সেবার মনোভাব এবং ধৈর্য তাদের অবশ্যই থাকতে হবে। যার কোনোটাই এখনকার নার্সদের মধ্যে নাই বললে চলে। কথায় বলে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত, তেমনি নার্সের চেয়ে আয়াদের ব্যবহার আরও এককাঠি উপরে। তাই বলে সবাই হয়তো নয়, সবজায়গায় ভালো মন্দ আছে কিন্তু লিমিট ক্রস করলে যে ক্ষতি হয় তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে। এটা সত্যি যে তারা হাজারটা রোগী সামলায়, তাদের আবেগ কম থাকতেই পারে কিন্তু প্রতিটি রোগী তার পরিবারের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াই তাদের পেশাদারিত্ব এবং মানবিক দায়বদ্ধতা এটা মনে রাখা উচিত।
এত কথা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বলা, মনগড়া মন্তব্য নয়। আমার মা তিন বছর অসুস্থ ছিলেন। নির্দিষ্ট খুব কঠিন কোনো রোগ নয়, তবু হাঁটাচলা করতে পারতেন না। খেতে পারতেন না। শেষ দিকে একটা স্ট্রোকও হয়েছিল। মাকে নিয়ে যশোর এবং ঢাকা বড়ো নামকরা হাসপাতালে ঘুরতে হয়েছে অনেক বার। ঢাকার খুব ব্যয়বহুল, উন্নতমানের হাসপাতালেও দেখেছি রোগীকে ওঠানামা বা চেঞ্জ করাতে শরীরের চামড়া উঠিয়ে ফেলেছে। মায়ের হাত ঈষৎ ফোলা ছিল, সম্ভবত ধরে ওঠাতে যেয়ে নখ বসে এমন ক্ষত হলো যে হাত ফুলে ঢোল। টানা ১৫ দিন এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো লাগলো শুধু সেই হাত সারার জন্য। আইসিইউতে মোছাতে যেয়ে চামড়া উঠে গেছে এমন সব ঘটনা নিত্য ঘটে চলেছে। ভাবা যায় কথা বলতে পারে না এমন একজন রোগী যখন এমন ব্যথা পায় তখন কেমন লাগে! অথচ আমি তিন বছর একা যখন একই কাজ করেছি, সামান্য আঁচড়ও লাগেনি। আমরা এত ব্যয়বহুল চিকিৎসা করিয়েও যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে হতদরিদ্র বা সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা কেমন হয় তা সহজেই অনুমান করতে পারা যায়।
এই কথাগুলো কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়। চিকিৎসাসেবা সবারই প্রয়োজন। আমার ধারণা অনেকেরই কিছু না কিছু এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু সত্যি এ ব্যাপারে মানুষ বড়ো অসহায়। তাৎক্ষণিক ভাবে কাকে বলবে বা বলে কী উপায় হবে জানা নেই। যেহেতু রোগী তাদের দায়িত্বে থাকে কিছু বললে হয়তো আরও অবহেলার কারণ হতে পারে এই ভয়ে রোগীর লোকজন কোনো কথা বলে না। সরকারি বেসরকারি সকল প্রকার স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি ভেবে দেখা অবশ্যকরণীয় বলে মনে হয়।
আজকাল দেখা যায় অনেক প্রতিষ্ঠানে রেটিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। হোটেল ম্যানেজমেন্টে, উবার পরিবহন সহ অনেক জায়গায় রেটিং সিস্টেম আছে। ভোক্তাগণ তাদের প্রাপ্ত সেবার মান অনুযায়ী মার্ক দেন। তাদের ব্যবহার, সেবার ডিটেইলস্ মনিটর করা হয়। তেমনি হাসপাতালগুলোতে সেবার জন্য নার্স, আয়াদের কর্মদক্ষতার রেটিং যদি তাদের ক্যারিয়ারে যোগ হয়, তাদেরকেও ভালো মানের সেবার জন্য পুরস্কৃত করা হয় তাহলে নিশ্চয় তাদের সেবার মান ভালো হবে। নিম্নমুখী রেটিংয়ে যদি তাদের ক্যারিয়ারে দাগ পড়ে, উন্নতির আশা কমে যায় তাহলে তারা অনেক সচেতন হবে এটুকু আশা করা যায়।
সত্যি বলতে আমি হয়তো সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনুযায়ী পরিপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরতে পারলাম না। তবু দেশের সর্বোচ্চ থেকে সাধারণ পর্যন্ত আমার চোখে দেখা বা অনুভব করার দায়বদ্ধতা থেকে যেটুকু আমার সাধ্য বা প্রকাশযোগ্য আমি তাই প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। সবশেষে হাজারবার কৃতজ্ঞতা জানাই দেশের সকল দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স, আয়া সহ সেবাকার্যে জড়িত সবাইকে। তারা ভালো থাকলে মানুষ ভালো থাকবে।
চিকিৎসা সেবা হোক ভরসার আশ্রয়স্থল এমনই শুভকামনা সবসময়।

 

আরও খবর

🔝