gramerkagoj
শনিবার ● ১০ মে ২০২৫ ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
gramerkagoj
স্বর্ণকুমারী দেবীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ
প্রকাশ : বুধবার, ৩ জুলাই , ২০২৪, ১০:৩৯:০০ এএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2024-07-03_6684d60f8646e.jpg

স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম উল্লেখযোগ্য নারী সাহিত্যিক। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকী।
স্বর্ণকুমারী দেবী ১৮৫৫ সালের ২৮ আগস্ট কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দ্বারকানাথ ঠাকুরের নাতনি ও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ মেয়ে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে পাঁচ বছরের বড় ছিলেন স্বর্ণকুমারী।
স্বর্ণকুমারী দেবীর বিয়ে হয় ১৮৬৮ সালে জানকীনাথ ঘোষালের সঙ্গে। জানকীনাথ ছিলেন নদিয়া জেলার এক জমিদার পরিবারের শিক্ষিত সন্তান। ঠাকুর পরিবার ছিল পিরালী থাকভুক্ত ব্রাহ্মণ। পিরালী ব্রাহ্মণ বংশের কন্যাকে বিয়ে করার জন্য জানকীনাথকে পরিবারচ্যুত হয়েছিলেন। কিন্তু দৃঢ়চেতা জানকীনাথ ব্যবসা করে সাফল্য অর্জন করেন এবং নিজস্ব এক জমিদারি গড়ে তুলে ‘রাজা’ উপাধি অর্জন করেন।
সঙ্গীত, নাটক ও সাহিত্যে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পুরুষ সদস্যদের সৃষ্টিশীলতা স্বর্ণকুমারী দেবীকেও স্পর্শ করেছিল। এই সময় জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর এই তিন ক্ষেত্রে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন। তাকে সাহায্য করছিলেন অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী ও রবীন্দ্রনাথ। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবন-স্মৃতি থেকে জানা যায়, জানকীনাথ ইংল্যান্ডে গেলে স্বর্ণকুমারী দেবী জোড়াসাঁকোয় এসে থাকতে শুরু করেন। এই সময় তিনিও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মেতে ওঠেন।
১৮৭৬ সালে স্বর্ণকুমারী দেবীর প্রথম উপন্যাস ‘দীপনির্বাণ’ প্রকাশিত হয়। এর আগে ১৮৫২ সালে হানা ক্যাথরিন মুলেনস ‘ফুলমণি ও করুণার বৃত্তান্ত’ প্রকাশ করে বাংলা ভাষার প্রথম ঔপন্যাসিকের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। অন্যদিকে স্বর্ণকুমারী ছিলেন প্রথম বাঙালি নারী ঔপন্যাসিক। ‘দীপনির্বাণ’ ছিল জাতীয়তাবাদী উপন্যাস। এর পর তিনি একাধিক উপন্যাস, নাটক, কবিতা, গান ও বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ রচনা করেন। ১৮৭৯ সালে স্বর্ণকুমারী দেবী প্রথম বাংলা গীতিনাট্য (অপেরা) ‘বসন্ত উৎসব’ রচনা করেন। পরবর্তীকালে এ ধারা অনুসরণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১৮৭৭ সালে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পারিবারিক পত্রিকা ‘ভারতী’ চালু করেন। এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাত বছর এই পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। এর পর ১১ বছর ওই পত্রিকা সম্পাদনা করেন স্বর্ণকুমারী দেবী। তিনি এই পত্রিকার স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টি করতে কঠোর পরিশ্রম করেন। সমালোচকরা এই পত্রিকার উচ্চ প্রশংসা করেন। পরে বিভিন্ন মেয়াদে স্বর্ণকুমারী পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন। ভারতী যখন প্রথম প্রকাশিত হয় তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স মাত্র ষোলো। প্রথম সংখ্যা থেকেই এই পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। আসলে এই পত্রিকার চাহিদাই রবীন্দ্রনাথকে নিয়মিত লিখতে বাধ্য করত এবং বহু বছর তিনি এক নাগাড়ে এই পত্রিকায় নিজের লেখা পাঠিয়ে এসেছিলেন।
স্বর্ণকুমারী দেবীর স্বামী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি নিজেও সামাজিক সংস্কার ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৮৮৯ ও ১৮৯০ সালে প-িত রামাবাই, রামাবাই রানাডে ও কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনিও জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নেন। তিনিই ছিলেন প্রথম নারী যিনি জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অনাথ ও বিধবাদের সাহায্যার্থে ১৮৯৬ সালে ঠাকুরবাড়ির অন্য সদস্যদের নিয়ে স্বর্ণকুমারী দেবী ‘সখীসমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠন পরিচালনা কেবলমাত্র সদস্যদের চাঁদায় সম্ভব নয় অনুভব করে বেথুন কলেজে একটি বার্ষিক মেলার আয়োজন করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল ভারতের দেশজ পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রির ব্যবস্থা করা। ওই মেলা কলকাতার সমাজে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে।
১৯০৬ সাল পর্যন্ত সখীসমিতি সক্রিয় ছিল। তারপর হিরন্ময়ী বিধবা আশ্রয় এর দায়িত্বভার গ্রহণ করে। স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যা হিরন্ময়ী দেবীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শশিপদ বন্দ্যোপাধ্যায় বরানগরে একটি বিধবা আশ্রম চালু করেন। এই আশ্রমের নাম ছিল ‘মহিলা বিধবা আশ্রম’। হিরন্ময়ী দেবীর মৃত্যুর পর এই আশ্রমটিরই নতুন নামকরণ হয় ‘হিরন্ময়ী বিধবা আশ্রম’। মহিলা বিধবা আশ্রমের প্রতিষ্ঠাকালীন কার্যনির্বাহী সমিতিতে ছিলেন স্বর্ণকুমারী, ময়ূূরভঞ্জের মহারানি সুচারু দেবী, কোচবিহারের মহারানি সুনীতি দেবী, লেডি হ্যামিলটন, প্রিয়ংবদা দেবী, শ্রীমতী চ্যাপম্যান ও শ্রীমতী সিংহ। হিরন্ময়ী দেবী ছিলেন আশ্রমের সচিব। হিরন্ময়ী দেবীর কন্যা তথা আশ্রমের পরিচালিকা কল্যাণী মল্লিকের লেখা থেকে জানা যায়, ১৯৪৯ সালেও এই আশ্রম সফলভাবে চালু ছিল। ‘সখীসমিতি’ নামটি রবীন্দ্রনাথের দেয়া। সরলা রায়ের অনুরোধে সখীসমিতির অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ ‘মায়ার খেলা’ নৃত্যনাট্যটি লিখে মঞ্চস্থ করেছিলেন।
স্বর্ণকুমারী দেবীর লেখনির মধ্যে রয়েছে- ( উপন্যাস ) : দীপনির্বাণ (১৮৭৬), মিবার-রাজ (১৮৭৭), ছিন্নমুকুল (১৮৭৯), মালতী (১৮৭৯), হুগলীর ইমামবাড়ি (১৮৮৭), বিদ্রোহ (১৮৯০), স্নেহলতা (১৮৯২), কাহাকে (১৮৯৮), ফুলের মালা (১৮৯৫), বিচিত্রা (১৯২০), স্বপ্নবাণী (১৯২১), মিলনরাতি (১৯২৫) ও সাব্বিরের দিন রাত (১৯১২)।
(নাটক): বিবাহ-উৎসব (১৮৯২), রাজকন্যা ও দিব্যকমল।
১৯২৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণকুমারী দেবীকে জগত্তারিণী স্বর্ণপদকে সম্মানিত করে। ১৯২৯ সালে তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন।
১৯৩২ সালের ৩ জুলাই স্বর্ণকুমারী দেবী মৃত্যুবরণ করেন।

আরও খবর

🔝