শিরোনাম |
বলিউডের অন্যতম বর্ষীয়ান অভিনেতা দিলীপ কুমার। বলিউডের ‘ট্রাজেডি কিং’ বলা হত তাকে। ৬ দশক ধরে বলিউড দাপানো এই অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
অভিনয়ের কোন প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না দিলীপ কুমারের। কিন্তু অভিনয় ছিল তার সহজাত। তার অভিনয় জীবনে যে ভূমিকায়ই অভিনয় করেছেন, সেখানে চরিত্রের মধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দিয়েছেন।
অভিনয়ের জন্য দিলীপ কুমার যত পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন, ভারতের আর কোন অভিনেতা এখনও তা পাননি। সবচেয়ে বেশি অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড রয়েছে দিলীপ কুমারের। ২০০০ সালে ভারতের রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন তিনি।
১৯৬০ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা ‘মুঘল-এ-আজম’ দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ‘পদ্মবিভূষণ’-এ সম্মানিত অভিনেতা ‘দেবদাস’, ‘ক্রান্তি’, ‘মোগল-ই-আজম’-এর মতো একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৯৪ সালে ‘দাদা সাহেব ফালকে’ পুরস্কার পান দিলীপ।
দিলীপ কুমার পাকিস্তানের পেশোয়ারের কিস্সা খাওয়ানি বাজার এলাকায় মোহম্মদ ইউসুফ খান নাম নিয়ে ১১ ডিসেম্বর ১৯২২ সালে একটি মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩০ সালের শেষের দিকে, ১২ সদস্যের পরিবার নিয়ে মুম্বাইয়ে পাড়ি জমান দিলীপ কুমারের বাবা। ইউসুফ খান ১৯৪৩ সালে যখন ‘বোম্বে টকিজ’-এ চাকরি খুঁজতে গিয়েছিলেন, তখন সেখানকার স্বত্বাধিকারী দেবিকা রানী তাকে অভিনেতার হওয়ার প্রস্তাব দেন। তখনই নাম বদলে সিনেমার পর্দায় তার নাম দিলীপ কুমার রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর ১৯৪৪ সালে মুক্তি পায়। দিলীপ কুমারের প্রথম ছবি ‘জোয়ার ভাটা’ ১৯৪৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল। বম্বে টকিস-এর এই ছবিটির পরিচালক ছিলেন অমিয় চক্রবর্তী। ছবিতে দিলীপ কুমারের সাথে অভিনয় করেছিলেন মৃদুলা রানী, শামীম বানু, রুমা গুহঠাকুরতা প্রমুখ।
১৯৬৬ সালে অভিনেত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন কিংবদন্তী এই অভিনেতা। ছয় দশকের অভিনয় জীবনে ৬৫টিরও বেশি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। বলিউডে তিনি পরিচিত ছিলেন ‘ট্র্যাজেডি কিং’ নামে। তার অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে ‘দেবদাস’, ‘নয়া দওর’, ‘মুঘল-এ-আজম’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘ক্রান্তি’, ‘কর্মা’ উল্লেখযোগ্য। তাকে শেষ পর্দায় দেখা গিয়েছিল ১৯৯৮ সালে ‘কিলা’ ছবিতে।
১৯৭৬ সালে, দিলীপ কুমার ছবিতে অভিনয় থেকে পাঁচ বছর বিরতি নেন এবং ছায়াছবি ক্রান্তি প্রধান চরিত্রে অভিয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হন এবং প্রধান চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় চালিয়ে যান। যেমন: "শক্তি" (১৯৮২), "কর্ম" (১৯৮৬) এবং "সওদাগর" (১৯৯১)। তার সর্বশেষ অভিনীত চলচ্চিত্র ছিল "কিলা" (১৯৯৮)। দিলীপ কুমার অভিনেত্রী "বৈজয়ন্তীমালার" সাথে সবচেয়ে বেশীসংখ্যক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, যেখানে তারা উভয়েই একসাথে নিজেদের প্রযোজিত প্রতিষ্ঠান থেকে "গঙ্গা যমুনা" সহ সাতটি ছায়াছবিতে অভিনয় করেন। তাদের দুজনের মধ্যে সবসময়ের জন্য বোঝাপড়া খুবই ভাল ছিল।
ভারত সরকার ১৯৯১ সালে তাকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে পদক দিয়ে সম্মানিত করেন এবং ১৯৯৪ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রতি তার অবদানসমূহের জন্য দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পদকে ভূষিত করেন এবং রাজ্যসভায় তাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনীত করা হয়। তিনি ১৯৫৪ সালে ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার প্রথম পদক গ্রহণ করা ব্যক্তি এবং এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পাওয়ার ইতিহাস তার ঝুলিতে যিনি এখনও পর্যন্ত মোট আটটি বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন। সমালোচকরা হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে তাকে প্রশংসিত করেন।
বর্ষীয়ান ভারতীয় এই অভিনেতা ৭ জুলাই ২০২১, সকালে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।