gramerkagoj
বুধবার ● ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
gramerkagoj
অভিনেত্রী মীনা কুমারীর জন্মদিন আজ
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট , ২০২৪, ১০:১৮:০০ এএম
বিনোদন ডেস্ক:
GK_2024-08-01_66ab0bfbc494d.jpg

ভারতের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ও কবি মিনা কুমারীর জন্মদিন আজ। মাত্র আটত্রিশ বছরের জীবনে কবি ও অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনেক উচ্চতায়। স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। মাত্র সাত বছর বয়সেই পরিবারের জন্য অর্থ জোগাতে অভিনয়ের জগতে পা রাখতে হয়। তিনি নায়িকা হিসেবে তিনি প্রতিষ্ঠা পান ‘বায়জু বাওড়া’ সিনেমা দিয়ে। এ সিনেমা দিয়েই প্রথম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান এই অভিনেত্রী।
মিনা কুমারী ১ আগস্ট, ১৯৩৩ সালে ভারতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম মাহজাবিন। পরবর্তীতে এই মাহজাবিনই হয়ে ওঠেন বলিউড অভিনেত্রী। তার পিতা আলি বক্স ছিলেন শিয়া মুসলমান। মায়ের নাম ইকবাল বেগম। আলি বকশ থিয়েটারে হারমোনিয়াম বাজাতেন, গান শেখাতেন এবং উর্দু কবিতা লিখতেন। চলচ্চিত্রে জুনিয়র আর্টিস্ট ছিলেন তিনি। ইকবাল বেগম বিয়ের আগে থিয়েটার অভিনেত্রী এবং নৃত্যশিল্পী ছিলেন। মঞ্চে তার নাম ছিল কামিনী। মিনা কুমারী শুধু অভিনয়ই নয়, তিনি নিয়মিত কবিতাও লিখতেন।
অভিনেত্রী হিসেবে মিনা কুমারীর পথ চলা শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে সাত বছর বয়সে ‘ফারজানদ-এ-ওয়াতন’ সিনেমায় বেবি মিনা নামে। এরপর মিনা ১৯৪৯ সালে ‘বীর ঘাতক’ সিনেমায় প্রথম নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি অভিনেত্রীকে। ১৯৩৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তার অভিনয় জীবনে তিনি ৯০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
এই অভিনেত্রীর সামনে দাঁড়ালে দীলিপ কুমার তাঁর মনোযোগ ধরে রাখতে হিমশিম খেতেন, রাজ কুমার সংলাপই ভুলে যেতেন। তাঁর কণ্ঠ আর অভিনয়ের ভক্ত ছিলেন খোদ মধুবালা। নিজের রচিত শায়েরির মতো ব্যক্তিজীবনেও বয়ে বেড়িয়েছেন নিঃসঙ্গতা আর একাকিত্ব। নিজের সময়ে বলিউডের কিংবদন্তি হয়েও এবং তাঁর সময়ের একবেরেই অন্যরকম অভিনেত্রী হয়েও তিনি ছিলেন একজন কবি। লিখেছিলেন একাধিক কবিতা, গজল, শায়েরি।
তবে তার এই পথ চলা মোটেই সহজ ছিল না। দ্বিতীয় সন্তানও কন্যা হওয়ায় হতাশ হয়েছিলেন পিতা আলি বক্স। তার মনের মধ্যে শুধু একটাই প্রশ্ন ছিল, দরিদ্র পরিবারে কে রোজগার করবে? শিশুর জন্মের পর ডাক্তারকে পর্যন্ত দেওয়ার মতো টাকা ছিল না। ঠিক করলেন মেয়েকে অনাথ আশ্রমে রেখে আসবেন। করলেনও তাই। কোথাও বোধহয় মানবিকতা বেঁচে ছিল। কিছুক্ষণ পরেই কন্যাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এভাবেই জীবন যাত্রা শুরু হয়েছিল ভারতীয় সিনেমার ট্র্যাজেডি কুইনের।
১৯৫২ সালেই তার সঙ্গে খ্যাতনামা পরিচালক কামাল আমরোহির পরিচয় হয়। মীনা কুমারির বয়স তখন মাত্র ২০ বছর। কামাল আমরোহি ছিলেন তার চেয়ে ১৫ বছরের বড়। তিন সন্তানের জনক বিবাহিত কামাল আমরোহির প্রেমে পড়েন মীনা এবং সে বছরই বিয়ে হয় তাদের। দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে কোনো সন্তান হোক তা চাননি কামাল এবং ভালোবাসার জন্য নয়, উঠতি নায়িকা মীনাকে তিনি বিয়ে করেছিলেন নিত্য নতুন সিনেমা বানাবেন বলে। অন্যদিকে মীনা কুমারীর পরিবারের লোকেরা এ বিয়েতে দারুণ অখুশি হয় রোজগেরে মেয়েটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে। অবশ্য বিয়ের পরও পরিবারকে নিয়মিত টাকা দিতেন মীনা। স্বামীর কাছ থেকে যে ভালোবাসা চেয়েছিলেন তা পাননি বলে মীনা কুমারীর মনে ক্ষোভ জমা হতে থাকে। তবে এ সময় তার অভিনীত ছবিগুলো দারুণ ব্যবসায়িক সাফল্য পায়। তার অভিনয়ও প্রশংসিত হয়।‘পরিণীতা’(১৯৫৩) ছবিতে ললিতার ভূমিকায় তার অভিনয় ছিল অসাধারণ। এ জন্য ফিল্ম ফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি। ‘দায়রা’, ‘এক হি রাস্তা’, ‘সারদা’, ‘দিল আপনা অউর প্রীত পারায়া’, ‘আজাদ’, ‘কোহিনূর’ সহ অনেক হিট ছবি উপহার দেন তিনি। নির্মাতাদের পছন্দের তালিকায় পহেলা নম্বরেই ছিলেন মীনা কুমারী।
১৯৬২ সালে ‘সাহেব বিবি আউর গোলাম’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। বিমল মিত্রের ‘সাহেব বিবি গোলাম’ উপন্যাস অবলম্বনে গুরু দত্ত প্রযোজিত এ ছবিতে ছোট বৌঠানের ভূমিকায় তার অভিনয় এখনও হিন্দি ছবির ইতিহাসে ক্ল্যাসিক বলে ধরা হয়। এ ছবিতে স্বামীর মন জোগানোর জন্য মদ্যপানে আসক্ত জমিদারবাড়ির কূলবধূর চরিত্রে তিনি অনন্য অভিনয় করেন।আবার ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। সে বছর ‘আরতি’ সিনেমাতেও অসাধারণ অভিনয় করেন তিনি। ১৯৬২ সালে তিনটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার আসরে তিনটি মনোনয়ন পেয়ে রেকর্ড গড়েন তিনি। মীনা কুমারী চার বার সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং আটবার মনোনয়ন পান।
ক্যারিয়ারে সাফল্যের শিখরে পৌছালেও দাম্পত্য জীবনে কামাল আমরোহির সাথে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। ১৯৫৬ সালে কামাল আমরোহি মীনা কুমারীকে প্রধান চরিত্রে রেখে একটি সিনেমার পরিকল্পনা করেন। ‘পাকিজা’ নামের এ ছবিটি কামাল আমরোহির সেরা কাজ বলে মনে করা হয়। অশোক কুমারকে নায়ক করে ছবির কাজ শুরুও হয়ে যায়। কিন্তু
১৯৬৪ সালে কমল আমরোহীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পর গভীর হতাশায় ডুবে যান মীনা কুমারী। এ সময় একজন সম্ভাবনাময় কবি হিসেবেও তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। যদিও স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাননি তিনি, কিন্তু নিজের উদ্যোগে শিখেছিলেন লেখাপড়া। কবিতা লিখতেন। তার কবিতা পাঠক মহলে সমাদৃত হতো। 'তালাক তো দে রহে হো নজর-এ-কেহর কে সাথ/ জওয়ানি ভি মেরা লৌটা দো মেহর কে সাথ' (বিদায় তো দিচ্ছ এক চোখ রাগ নিয়ে, কিন্তু খোরপোষের সঙ্গে আমার যৌবনও ফিরিয়ে দাও)? না নিছক কোনো শায়রি নয়? ১৯৬৪ সালে তার থেকে বয়সে পনেরো বছরের বড় স্বামী কামাল আমরোহির সঙ্গে ডিভোসের্র পর এই পংক্তিগুলো লিখেছিলেন মীনা কুমারী? আর বিয়ে করেননি মীনা? বলা হয়, বিবাহ-বিচ্ছেদের পর থেকে, এমন সব আহত, ক্ষত-বিক্ষত পংক্তি লেখার পর থেকে নিজেকে মদে ডুবিয়ে ফেলেন তিনি? মদ থেকেই সিরোসিস অফ লিভার?
১৯৭২ সালের ৩১ মার্চ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন মিনা কুমারী।

আরও খবর

🔝