শিরোনাম |
চট্টগ্রাম নগরীর তলিয়ে গেছে অলিগলি, মূলসড়ক। কোথাও কোমর সমান আবার কোথাও হাঁটু পানি। পানি মাড়িয়ে কাকভেজা শরীরে কর্মজীবীরা সকাল সকাল পৌঁছেছেন কর্মস্থলে। তবে যানবাহন সংকটে রিকশা-সিএনজি অটোরিকশায় পকেট খসেছে তাদের। নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়ি দোকানপাটও পানিতে একাকার। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সবাই।
বুধবার (৩১ জুলাই) রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে নগরীর পাঁচলাইশ, বহদ্দারহাট, কাতালগঞ্জ, চকবাজার, মুরাদপুর, শোলকবহর, ২ নম্বর গেট, জিইসি, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, হালিশহর, আগ্রাবাদ ও সল্টগোলাসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, ২৪ ঘণ্টায় ১১৪ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। আগামীকালও বৃষ্টির এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কোমর পানি মাড়িয়েই কর্মস্থলে ছুটছেন অনেকে। সকালের ভারী বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েছেন কর্মজীবী মানুষজন। জলাবদ্ধতার কারণে খানিক দূরত্বেও যেতে চাইছিলেন না রিকশাওয়ালা। আর কেউ যেতে রাজি হলেও ৫ মিনিটের পায়ে হাঁটা দূরত্বে ভাড়া হাঁকাচ্ছিলেন ৫০ টাকা। আশেপাশের দোকানপাটও ছিল পানিতে টইটম্বুর।
নগরীর মুরাদপুরের বেসরকারি চাকরিজীবী কামরুজ্জামান বলেন , ‘প্রচণ্ড বৃষ্টিতে হেঁটেই অফিসের দিকে যাচ্ছি। দেখছেন তো একেবারে কাকভেজা হয়ে গেছি। তাই এই টং দোকানে একটি বিশ্রামের জন্য দাঁড়ালাম। আর যে পরিমাণ পানি উঠছে মনে হচ্ছে বন্যা হয়েছে।’
চকবাজারের বাসিন্দা অপু বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টিতেই এই এলাকায় পানি উঠে যায়। সেখানে কাল রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। অবস্থা এতই খারাপ যে কর্মস্থলে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
উত্তর পাঠানটুলী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল আলিম বলেন, ‘আমার বাসার নিচেই হাঁটু সমান পানি। আজ কর্মস্থলে যেতে পারিনি। এখন ঘরে বসেই বৃষ্টি দেখছি। যাদের বাসা নিচতলায় তাদের বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। তারা সেচে কোনোমতে পানি নিষ্কাশন করছে।’
বাকলিয়ার ডিসি রোডের বাসিন্দা আইনজীবী নাবিল হোসেন বলেন, কিছু এলাকা উঁচু হওয়ায় সেখানে পানি কম। তবে যেসব এলাকা উঁচু করা হয়নি সেখানে হাঁটু পানি উঠেছে। আজ আদালতে যেতে খুবই বেগ পেতে হয়েছে। গণপরিবহন ছিল না।’
খাতুনগঞ্জের ডাল ব্যবসায়ী পরিতোষ জানান, ভারী বৃষ্টিতে নিচু এলাকার আড়ত ও দোকানে পানি ঢুকেছে। তবে যারা আড়ত ও গুদামের মেঝে উঁচু করতে পেরেছেন, সামনের ও পেছনের অংশে পানিরোধক দেয়াল দিতে পেরেছেন তারা রক্ষা পেয়েছেন।
এদিকে, ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও বান্দরবন জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কাও রয়েছে।
পতেঙ্গা আবহা অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আলী আকবর খান বলেন, 'উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। এর কারণেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে চট্টগ্রামে। আরও দুই একদিন এমন বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দর সমূহের উপর দিয়ে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সমুদ্র বন্দর সমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।'