gramerkagoj
বুধবার ● ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ১ কার্তিক ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒ বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তির যথেচ্ছ ব্যবহার, দ্বিতীয়পক্ষের বাণিজ্য আয়-ব্যয় নিয়ে লুকোচুরি
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ১২:১০:০০ এএম
এম. আইউব:
GK_2024-09-05_66d8a3d0e13da.jpg

যশোর সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোটি কোটি টাকা মূল্যের জমি যে যার মতো দখল করে ব্যবসা করছে। মূল্যবান এই সম্পত্তি দেখভালের কেউ নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ দামি সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য গত ৪৪ বছরেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। দখলদাররা যাতে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে এ জন্য স্কুলকে নামমাত্র ভাড়া দিচ্ছে। লুটপাট হচ্ছে সেই ভাড়ার টাকাও। আয়-ব্যয়ের হিসেব দিতে পারছেন না প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার। যদিও এই স্কুলে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি মোটা! এখানে প্রধান শিক্ষকের তুলনায় দাপট বেশি তানিয়া জামান তমা নামের এক সহকারী শিক্ষকের। সরেজমিন গিয়ে তারই প্রমাণ মিলেছে।
বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২২ সালে। এরপর ১৯৮০ সাল থেকে এই স্কুলের রাস্তার পাশের জমি দখল শুরু হয়। যে যার মতো করে দখল করে নেয় দামি ওই জমি। এরপর কাঁচা, টিনশেড ও সেমিপাকা দোকান তৈরি করে দখলদাররা। সময়ের ব্যবধানে তারা হাজার হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে তৃতীয়পক্ষের কাছে ঘর ভাড়া দেয়। প্রতি মাসে ঘরভাড়া আদায় করে সর্বনিম্ন দেড় হাজার থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। আর স্কুল নিচ্ছে সর্বনিম্ন ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০০ টাকা। এসব তথ্য ব্যবসায়ীরাই দিয়েছেন। যদিও এসব টাকার স্বচ্ছ কোনো হিসেব নেই। যখন যিনি সভাপতি হয়েছেন তখন তিনি প্রধান শিক্ষককে ম্যানেজ করে লুটপাট করেছেন।
এ অবস্থায় ওই স্কুলের ১৯৯৮-২০০০ সেশনের সভাপতি আবু বক্কর কয়েকদিন দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছেন। জেলা শিক্ষা অফিসার এই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে। উপজেলা কর্মকর্তা তদন্তের চিঠি পেয়েছেন। আগামী সপ্তাহে তদন্ত করবেন বলে জানিয়েছেন এই প্রতিবেদককে।
সাবেক সভাপতি জানিয়েছেন স্কুল মার্কেটে বর্তমানে ৪৪ টি দোকান ঘর রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে আরও ১১ টি বসতঘর। যারা এসব ঘর করে ভাড়া দিয়েছেন তাদের কাছ থেকে নামমাত্র ভাড়া নিচ্ছে স্কুল। স্কুল ৪১ টি দোকান ঘর থেকে ৬০০, দু’টি দোকানঘর থেকে ১৪০০ এবং একটি দোকানঘর থেকে ৮০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে। এর বাইরে ১০ টি বসতঘর থেকে ৪০০ এবং একটি বসতঘর থেকে এক হাজার টাকা করে পাচ্ছে স্কুল। এই হিসেবে প্রতি মাসে ভাড়া আদায় হচ্ছে ৩৩ হাজার ২০০ টাকা। বছরে আদায় হচ্ছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০। বর্তমান প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার ২০০৭ সালে এই স্কুলে যোগদান করেন। সেই থেকে কর্মরত রয়েছেন তিনি। তার এই সময়ে আদায় হয়েছে ৬৭ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকা। সাবেক এক সভাপতি দীর্ঘদিন ধরে এই ভাড়া আদায় করছেন বলে দোকানিরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গেলে এলাকার লোকজন জানান, স্কুলের যে জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মিত হয়েছে তার বাজার মূল্য কোটি কোটি টাকা। পরিকল্পিতভাবে এখানে মার্কেট করা গেলে স্কুল প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করতে পারবে। প্রতিটি ঘর থেকে গড়ে পাঁচ লাখ টাকা করে অগ্রিম নিলে সেখান থেকেও আসতে পারে দু’কোটি ২০ লাখ টাকা। এখন শুধু দখলমুক্ত করে উদ্যোগ নিতে হবে।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনোকিছু বলার আগেই কথা বলেন সহকারী শিক্ষক তানিয়া জামান তমা। তমা এই প্রতিবেদককে শুনিয়ে উগ্র ভাষায় বলেন,‘আপা উনাকে বসতে বলেন। ভাইকে খবর দিয়েছি। ভাই আসার পরে কথা হবে।’ তার কথামতো প্রধান শিক্ষক গ্রামের কাগজের টিমকে বসিয়ে রাখেন। বেশ কিছু সময় পরে স্কুলে আসেন সদ্য সাবেক সভাপতি সোহেল রানা। তিনি শুরু করেন কথা বলা।
সোহেল রানা তার মতো করে দোকান থেকে ভাড়া আদায়ের বিষয়টি বলার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, সাবেক একজন সভাপতি ভাড়া আদায় করে ব্যাংকে জমা দেন। যদিও ওই সভাপতি স্কুলের জমি দখল করে দু’টি দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। তার দোকানের কারণে বিদ্যালয়ের প্রবেশ গেটের ডানপাশে প্রাচীর করা সম্ভব হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রাচীর নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ আসে। জায়গা খালি না করায় বরাদ্দ ফিরে যায় বলে সূত্র জানিয়েছে।
এই খাত থেকে স্কুলের আয়-ব্যয়ের লিখিত কোনো হিসাব আছে কিনা প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি আছেন বললেও দেখাতে ব্যর্থ হন। আয়ের টাকা কোন কোন খাতে খরচ হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন আয়াকে মাসে ৩ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। এর বাইরে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ ও খেলাধুলায় ব্যয় করা হয় বলে জানান প্রধান শিক্ষক। যদিও বিদ্যালয় উন্নয়ন কাজে আলাদা বরাদ্দ আসে প্রতিবছর। তাছাড়া, প্রতিমাসে এমন কী উন্নয়ন কাজ হয় জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে, ব্যাংকে এ খাতের টাকা জমা রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। আয়-ব্যয়ের দালিলিক কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি দু’দিন সময় নেন। পরবর্তীতে ফোন করলে প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার বলেন,‘ডিপার্টমেন্ট তদন্ত করছে। যা দেখানোর সেখানে দেখাবো। আপনি পারলে সেখান থেকে দেখে নেবেন।’

 

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝