gramerkagoj
বুধবার ● ২ জুলাই ২০২৫ ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
gramerkagoj

❒ অভয়নগরে জলাবদ্ধতার স্বীকার শ’শ’ পরিবার

পনিবন্দি ২০ গ্রামের মানুষ ভেসে গেছে মৎস্য ঘের
প্রকাশ : রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ০৯:২২:০০ পিএম
তাওহীদ হাসান উসামা, অভয়নগর (যশোর):
GK_2024-09-08_66ddc1877cdaa.jpg

যশোরের ভবদহ এলাকার ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় অভয়নগর উপজেলায় ২০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাছাড়া পানির তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে কয়েকশ’ মৎস্য ঘের। এতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি জলাবদ্ধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি-ঘরের উঠানে পানি থাকায় পরিবারের লোকজন ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় কাজে ঘরের বাইরে বের হতে পারছে না নারী ও শিশুরা। ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গবাদী পশু, হাঁস, মুরগী নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পানিবন্দি এলাকার মানুষ। জলাবদ্ধ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে কোটা, চলিশিয়া, বাগদাহ, আন্ধা, বলারাবাদ, বেতভীটা এবং স্বরখোলা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অভয়নগরের শ্রীনদীর ওপর পাকিস্তান আমলে নির্মিত ২১ ভেন্ট, ৯ ভেন্ট ও ৬ ভেন্টের স্লুইচ গেট দিয়ে পানি বের হতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ২১ ভেন্টের ওপর ১৩টি, ৯ ভেন্টের ওপর ৫টিসহ ৪টি পাওয়ার পাম্প। বর্তমানে ৩টি পাম্প ও ৪টি মোটর সচল আছে। বৃষ্টির পানি ও উজানের পানির চাপ জলাবদ্ধতা নিরসনের অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। বিগত সরকারের আমলে স্লুইচ গেট বন্ধ করে তার ওপর বৈদ্যুতিক পাম্প ও মোটর স্থাপন করে নদীর পানি নিষ্কাশনের বিকল্প উপায় তৈরি করা হয়। তবে, বর্তমানে বিকল্প ব্যবস্থাও অচল হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে পানি সরানোর সব পথ।
সত্তরের দশকে যে স্লুইচ গেট আশীর্বাদ হয়ে সাগরের নোনা পানি থেকে ফসল রক্ষার কবচ হয়েছিল তা আশির দশক থেকে অভিশাপ হিসাবে দেখা দিতে থাকে। এ অঞ্চলে প্রবাহিত টেকা-হরি-শ্রী-মুক্তেশ্বরী-ভদ্রা নদীর উৎস বা মুখ পদ্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় জোয়ারের সময় সাগর থেকে বয়ে আসা পলি নদী-খালে জমতে থাকে। শেষ অবধি ভরাট হয়ে নদী-খালের বুক বিলের থেকে উঁচু হয়ে যায়। দাবি ওঠে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) অর্থাৎ জোয়ারাধার ব্যবস্থার। জোয়ারের সময় উঠে আসা পলি বিলে পতিত হবে আর বিল উঁচু হলে সহজেই নদীর বুক দিয়ে পানি প্রবাহ ঠিক থাকবে। সেই সঙ্গে সংযুক্ত নদী-খাল খনন কর্মসূচি চলবে।
কোটা গ্রামের হোসেন দ্বীপের বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, ‘আমরা গত কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। সকালে শুকনা উঠান দেখে রান্না করতে গিয়ে দেখি চুলাই পানি উঠে গেছে’।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র থেকে জানা যায়, ভবদহ ২১ ভেন্ট ব্লুইচ গেট হয়ে শ্রী ও হরিনদীর পানি নিষ্কাশিত হতো। বছরের পর বছর টিআরএম চালু না থাকায় নদী দিয়ে আর পানি সেভাবে আগের মতো প্রবাহিত হচ্ছে না। শ্রীনদীর পাড়ের বাসিন্দা নরেশ বৈরাগী জানান, জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়েই চলেছে। এক দেড় ফুট উচ্চতা বাড়লেই এ অঞ্চলের জনপদ যেমন ডুবে যাবে, তেমনই ফসলি খেত আর মাছের ঘের তলিয়ে গিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আবু নওশাদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে ইতিমধ্যে নেটপাটা ও কচুরিপানা অপসারণ করা হয়েছে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার জানান, খুব শীঘ্রই সমাধানকল্পে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও খবর

🔝