শিরোনাম |
❒ বালিয়াডাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
এবার যশোর সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মান্দিয়া মৌজায় লাগানো শতাধিক মেহগনী গাছ বিক্রির টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই গাছ বিক্রির ২০ লক্ষাধিক টাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক, এক সহকারী শিক্ষক ও প্রগতি হাইস্কুলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এলাকার লোকজন জানিয়েছে, বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশকিছু জমি প্রগতি হাইস্কুলের সীমানার মধ্যে রয়েছে। ওই জমির পরিবর্তে প্রগতি হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মান্দিয়া মৌজায় ১৪ শতক জমি দেয়। সেই জমিতে ২০০০ সালে শতাধিক মেহগনি গাছ লাগায় প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘদিন পরে এসে বর্তমান প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার, সহকারী শিক্ষক তানিয়া জামান তমা ও তৎকালীন সভাপতি আঁতাত করে ২০২২ সালে সব গাছ বিক্রি করে দেয়। ওইসময় ২০ লক্ষাধিক টাকায় গাছ বিক্রি করা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
কেবল তাই না, ইচ্ছেমতো প্রগতি স্কুলের কাছ থেকে এওজবদলে পাওয়া ১৪ শতক জমি প্রগতি স্কুলকে ফিরিয়ে দিয়েছে বলে সূত্রের দাবি। সূত্র জানিয়েছে, ‘ডেসপ্যারেড’ বলে পরিচিত সহকারী শিক্ষক তানিয়া জামান তমার কুপরামর্শে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার সবকিছু করে আসছেন।
এদিকে, দৈনিক গ্রামের কাগজে বালিয়াডাঙ্গা স্কুলের জমি যে যার যার মতো দখল করে ব্যবসা করেছে এবং প্রায় কোটি টাকার হিসেব নিয়ে লুকোচুরির সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের তথ্য আসছে গ্রামের কাগজে। ইতিমধ্যে বিষয়টির তদন্তে কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার-ডিপিইও। তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমানকে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। যদিও রোববার পর্যন্ত তদন্ত কার্যক্রম শুরুই হয়নি।
অভিযোগকারী আবু বক্কর রোববার গ্রামের কাগজকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা রোববার পর্যন্ত তার সাথে কথা বলেননি। এ কারণে তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এদিকে, মূল্যবান জমি ব্যবহার করে দখলদাররা যাতে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে এ জন্য স্কুলকে নামমাত্র ভাড়া দিচ্ছে। লুটপাট হচ্ছে সেই ভাড়ার টাকাও। আয়-ব্যয়ের হিসেব দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার।
বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২২ সালে। এরপর ১৯৮০ সাল থেকে এই স্কুলের রাস্তার পাশের জমি দখল শুরু হয়। যে যার মতো করে দখল করে নেয় দামি ওই জমি। কাঁচা, টিনশেড ও সেমিপাকা দোকান তৈরি করে দখলদাররা। সময়ের ব্যবধানে তারা হাজার হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে তৃতীয়পক্ষের কাছে ঘর ভাড়া দেয়। প্রতি মাসে ঘরভাড়া আদায় করে সর্বনিম্ন দেড় হাজার থেকে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। আর স্কুল নিচ্ছে সর্বনিম্ন ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০০ টাকা। এসব তথ্য ব্যবসায়ীরাই দিয়েছেন। যদিও এসব টাকার স্বচ্ছ কোনো হিসেব দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষিকা। একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্কুলের মার্কেটে ৪৪ টি নয়, ৬৬ টি দোকানঘর রয়েছে।
তবে, সাবেক সভাপতি আবু বক্কর জানিয়েছেন, ৪১ টি দোকান ঘর থেকে ৬০০, দু’টি দোকানঘর থেকে ১৪০০ এবং একটি দোকানঘর থেকে ৮০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে। এর বাইরে ১০ টি বসতঘর থেকে ৪০০ এবং একটি বসতঘর থেকে এক হাজার টাকা করে পাচ্ছে স্কুল। এই হিসেবে প্রতি মাসে ভাড়া আদায় হচ্ছে ৩৩ হাজার ২০০ টাকা। বছরে আদায় হচ্ছে ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০। বর্তমান প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার ২০০৭ সালে এই স্কুলে যোগদান করেন। তার সময়কালে আদায় হয়েছে ৬৭ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকা। প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তার ও সহকারী শিক্ষক তানিয়া জামান তমার মদদে সাবেক এক সভাপতি দীর্ঘদিন ধরে তার মতো করে এই ভাড়া আদায় করছেন বলে দোকানিরা জানিয়েছেন।
দ্বিতীয় দফায় সরেজমিনে গেলে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, স্কুলের যে জায়গা দখল করে যেনতেনভাবে মার্কেট নির্মিত হয়েছে ওই জমির বাজার মূল্য কোটি কোটি টাকা। পরিকল্পিতভাবে এখানে মার্কেট করা হলে স্কুল প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করতে পারবে। আর এ কাজ করতে এখন শুধু দখলমুক্ত করে উদ্যোগ নিতে হবে। যেহেতু সরকারি জায়গা, এ কারণে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস উদ্যোগ নিলেই দখলমুক্ত করা সম্ভব বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।
এ ব্যাপারে জানতে প্রধান শিক্ষক জেসমিন আক্তারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।