শিরোনাম |
❒ ৮০ হাজার টাকা তুলতে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ!
খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের আমতলা জামে মসজিদে টিআরের (টেস্ট রিলিফ) বরাদ্দের সাড়ে তিন লাখ টাকা তুলতে খরচ হয়েছে দু’ লাখ ৭০ হাজার টাকা! ওই মসজিদের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার মাহবুবুর রহমান ডাবলু এই হিসেব দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মুসল্লিরা। মুসল্লিদের অভিযোগ, ডাবলু মেম্বার বরাদ্দের পুরো টাকা হজম করার চেষ্টা করেন। এলাকার লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে তাকে চাপ দিলে প্রথমে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা আছে বলে স্বীকার করেন মেম্বার। এরপর চাপাচাপিতে ৮০ হাজার টাকা থাকার কথা স্বীকার করলেও আজ পর্যন্ত সেই টাকা মসজিদের ক্যাশে জমা দেননি বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। অথচ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা-পিআইও অফিসে কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে মাস্টাররোল করতে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন ডাবলু মেম্বার।
পিআইও অফিস এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমতলা জামে মসজিদে টাইলস করার জন্য টিআরের সাড়ে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ হয় এ বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি। ওই বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয় ২৭ মার্চ। অনুমোদনপত্রে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বিএম তারিকুজ্জামান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মামুনার রশিদ, খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল করিম ও খুলনার তৎকালীন জেলা প্রশাসক।
সূত্র জানিয়েছে, ডাবলু মেম্বার এপ্রিল মাসে টাকা উত্তোলন করলেও মসজিদ কমিটিসহ মুসল্লিরা তা জানতে পারেননি। অতিসম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন বরাদ্দের বিষয়ে ডাবলু মেম্বারের কাছে জানতে চান। তখন তিনি তাদেরকে জানান,‘সুইডেনের রানি আসার কারণে চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী বরাদ্দের পুরো টাকা খরচ বাবদ কেটে নিয়েছেন।’ তার এই কথার সত্যতা যাচাই করতে শাহজান সরদার নামে একজন মুসুিল্ল পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে কেটে নেয়ার বিষয়ে জানতে চান। তখন চেয়ারম্যান কোনো টাকা কাটা হয়নি বলে তাকে জানান বলে শাহজান গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন। এরপর ফের চাপ প্রয়োগ করলে ডাবলু মেম্বার তাদের জানান, ৮০ হাজার পেয়েছেন। বাকি টাকা বিভিন্ন দপ্তরে খরচ হয়েছে।
একাধিক ইউপি মেম্বারের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, টিআরের সাড়ে তিন লাখ টাকা উত্তোলন করতে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার বেশি খরচ হওয়ার কথা না। সেই হিসেবে ডাবলু মেম্বার আড়াই লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মসজিদের বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাতের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর আমতলাসহ আশপাশ গ্রামের মানুষের মধ্যে ছি! ছি! রব উঠেছে।
এ বিষয়ে ডাবলু মেম্বারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘বরাদ্দ এসেছিল মসজিদে টাইলস করার। আমি সেটি করেছি। মসজিদে আমি ছাড়া কাজ করে কে।’ তবে, ভিন্ন কথা বলছেন স্থানীয়রা। শাহজান নামে এক মুসল্লি বলেন,‘আমতলা খালের একটি অংশ মসজিদের নামে সেল দেয়া হয়। সেখান থেকে বছরে দু’ আড়াই লাখ টাকা আসে। এই বছরের শুরুতেই খাল বিক্রির টাকা দিয়ে ডাবলু মেম্বার এবং আমি আমাদী বাজারে গিয়ে টাইলসের অর্ডার দিই। টাইলেসর দাম হয় দু’লাখ টাকার মতো। তাৎক্ষণিকভাবে দোকানে এক লাখ টাকা দেয়া হয়। পরে বাকি টাকা দিয়ে ক্যাশিয়ার আনিছুর রহমান পলাশ ওই টাইলস এনে মসজিদে রাখেন। এরপর আমতলা গ্রামের নজরুলের জামাই রোজার ঈদে খুলনা থেকে এসে দু’কাতার টাইলস বসিয়ে দিয়ে যান। ফের কোরবানির ঈদে এসে বাকি টাইলস বসান তিনি। বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক না নেয়ায় সর্বসম্মতিভাবে তাকে পায়জামা, পাঞ্জাবি কাপড়, জায়নামাজ ও টুপি উপহার দেয়া হয়। আর বরাদ্দ আসে মার্চ মাসের শেষে। টাকা ওঠায় এপ্রিল মাসে।’ মসজিদের ক্যাশ থেকে কাজ করে সরকারি টাকা খরচ করার কথা বলায় ক্ষেপেছেন মুসল্লিদের। মসজিদের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে যারা মুখ খুলেছেন তাদেরকে ডাবুল মেম্বার দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ডাবলু মেম্বার বিগত সরকারের আমলে এমপি বাবুর লোক পরিচয় দিয়ে যা খুশি তাই করার চেষ্টা করেন। এলাকার বিভিন্ন স্থানে নিজের এবং এমপি বাবুর ছবি দিয়ে তোরণ নির্মাণ করে আলোচনার জন্ম দেন। একইসাথে নিজের প্রভাব দেখানোর চেষ্টা করেন ডাবলু মেম্বার। এমপি বাবুর বদান্যতায় তিনি প্যানেল চেয়ারম্যানও হন। যদিও পরে চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজের লোকজন দ্বারা মারপিটের শিকার হওয়ার পর দূরত্ব তৈরি হয় চেয়ারম্যানের সাথে।
সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পর এই ডাবলু মেম্বার বিএনপি নেতাদের ঘাড়ে ভর করার চেষ্টা করছেন। কেবল তাই না, বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করছেন, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি না কি জামায়াতের প্রার্থী হবেন। যুক্তি হিসেবে তিনি জামায়াত অফিসে ফ্যান দেয়ার প্রচার চালাচ্ছেন। তার এ ধরনের অপপ্রচারে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকেই বলছেন,‘জামায়াত কি এমন কোনো সংগঠন যেখানে ডাবলুর মতো একজন বিতর্কিত লোক স্থান পাবে। ডাবলুর ফ্যান দেয়ার প্রচার জামায়াত সমর্থকরা ভালোভাবে নিচ্ছে না বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা-পিআইও মামুনার রশিদ বলেন,‘বিষয়টি আমার জানা নেই। ছুটিতে আছি। অফিসে গিয়ে খোঁজখবর নেবো। মসজিদের বরাদ্দ যাতে মসজিদ পায় সেই ব্যবস্থা নেবো।’
মহেশ্বরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী বলেন,‘ওইসময় ঝামেলায় ছিলাম বলে দেখার সুযোগ পাইনি। সচিব ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। এলাকার লোক এখনো পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ দেয়নি।’