gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
প্রবীণদের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ
প্রকাশ : সোমবার, ৭ অক্টোবর , ২০২৪, ০২:৪৯:০০ পিএম
সফিউল্লাহ আনসারী:
GK_2024-10-07_67039f6b8a358.jpg

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই মানুষ তার জীবনের কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে বার্ধক্যে উপনীত হয়। এই সময়টিকেই প্রবীণ বয়স হিসেবে ধরা হয়। অসহায়ত্বের আরেক নাম বয়স্ক -প্রবীণ ব্যাক্তি।প্রবীণরা আমাদের সম্পদ, আমাদের গর্বের জায়গা। শারীরিক দুর্বলতা বা অনেক ক্ষেত্রে অক্ষমতা একজন বয়স্ক মানুষকে অসহায় করে তোলে। এ অবস্থায় যদি আবার পরিবারের সদস্যদের অবহেলা-অসহযোগিতা কপালে জোটে, তবে নিদারুণ কষ্টকর জীবন ভোগ করতে হয় প্রবীণকে মৃত্যু অবধি। তখন আমাদের মাথার ওপর বটবৃক্ষ এই বৃদ্ধ মানুষগুলোর আর করার কিছুই থাকে না। অন্যের উপর নির্ভরশীল বয়োবৃদ্ধ মানুষগুলোর পাশে থাকার লোক পাওয়া কঠিন হয়ে পরে।
অসহায় এসব প্রবীণের কথা ভেবেই বিশ্ব প্রবীণ দিবসের সূচনা হয়। এই দিবস নির্দিষ্ট তারিখে পালিত হলেও এটি একটি দিনে সীমাবদ্ধতার জন্য নয়। প্রবীণ ব্যক্তিদের গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিতেই এই দিবস সারা বছর আমাদের সেবার মনোভাবে উৎসাহী এবং অনুপ্রাণিত করে। আমাদের ভরসার স্থল এই প্রবীণ মানুষগুলোকে ভালো রাখা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শেষ বয়সে বৃদ্ধাশ্রম যেন কোনো প্রবীণের ঠিকানা না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি আমাদেরই রাখতে হবে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দিবসটির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমাদের দেশেও প্রবীণ দিবস পালিত হয় ১ অক্টোবর। ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় প্রতিবছর এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ‘মর্যাদাপূর্ণ বার্ধক্য: বিশ্বব্যাপী প্রবীণ পরিচর্যা ও সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’।। জাতিসংঘ চার্টার অনুযায়ী, ৬০ বছর বয়সী মানুষকে প্রবীণ হিসেবে গণ্য করা হয়। নানা আয়োজনে এ দিবসটি পালিত হলেও একাকিত্ব আর অক্ষম জীবন নিয়ে আমাদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ এই প্রবীণসমাজ অনেকটা সমাজ-সংসারে বোঝা হয়ে জীবনধারণ করে থাকেন, যা মোটেই ঠিক নয়। এ ধরনের দিবস পালনে কোনোই সার্থকতা নেই, যদি আমরা প্রবীণদের প্রতি আমাদের কর্তব্যে অবহেলা করি।
জীবনের এই পর্যায়ে একজন বয়স্ক মানুষ পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েন, যা স্বাভাবিকএবং মানুষ মাত্রই এই পরিস্থিতি হতে পারে। তবে একজন প্রবীণ যতই অসহায় বা দুর্বল হয়ে পড়ুন না কেন, তার অভিজ্ঞতার সঞ্চয় অনেক বেশি। একজন তরুণ বা যুবকের বুদ্ধির অপরিপক্বতার তুলনায় শারীরিক দুর্বল প্রবীণ ব্যক্তির বুদ্ধির পরিপক্বতা পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রের নানা সঙ্কটে উত্তরণের পথ দেখায়, সসহস জোগায়। কেবল অধিকারের প্রশ্নে নয়, একজন প্রবীণ ব্যক্তি আমাদের পরিবারের বাইরের কেউ নন; বরং কেউ আমাদের দাদা-দাদি, নানা-নানি, বাবা-মা বা অন্য কেউ, যারা আমাদের আপনজন; আমাদের পরিবারের দায়িত্বশীল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ভালো আচরণ কিংবা সব ক্ষেত্রে তাদের মূল্যায়ন শুধু তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধই নয়, বরং এটা তাদের অধিকার। অধীকারের প্রশ্নেই প্রবীনদের প্রতি মানবিক ও আন্তরিকতা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
একটা সময়ে আমাদের সমাজ-সংসার-রাষ্ট্র, এমনকি পৃথিবীটা বাসযোগ্য হয়েছে এই প্রবীণ মানুষগুলোর পরিশ্রমে, তাদের প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তায়। এই প্রবীণরা একটা মানবিক পৃথিবীর জন্য জীবন উৎসর্গ করলেন, অথচ শেষ বয়সে তাদের প্রতি অনাদর-অবহেলা কাম্য হতে পারে না। এই প্রবীণরাই একদিন আমাদের মতো শিশু থেকে তরুণ, যুবক অবস্থা পার করে এসেছেন। একদিন আমাদেরও ওই বয়সে উপনীত হতে হবে। সেই দিনের কথা স্মরণে নিয়ে প্রবীণদের সঙ্গে আমাদের আচরণ ও কর্তব্য হওয়া উচিত।
চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়নের সঙ্গেই মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বয়স্কদের মৃত্যুহার একদিকে যেমন কমেছে, অন্যদিকে গড় আয়ুও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। কেননা আগেই বলেছি, এই বয়স্কদের কাছ থেকে আমরা সমাজজীবনের নানা সঙ্কট মুহূর্তে শিক্ষা- পরামর্শ পেতে পারি। যা আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয়-অনুসরণীয় এবং তাদের জীবনকে সহজ-সুন্দর করতে পারে। তাদের চিন্তার গভীরতা এবং সুদূরপ্রসারী ভাবনা ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্রের মঙ্গল বয়ে আনে।
করুণা নয়, ভালোবাসা আর সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে আমরা প্রবীণদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করব আমাদের মঙ্গলের জন্যই এবং এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্বও বটে। সন্তানের মঙ্গল কামনায় যে পিতা-মাতা তাদের জীবনকে প্রৌঢ়ত্বে নিয়ে এসেছেন, সেই প্রবীণ মানুষগুলোর সুস্থ জীবনযাপনের জন্য তাদের বার্ধক্যকে সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়াও আমাদের কর্তব্য। বর্তমান সময়ে সরকারিভাবে বয়স্কভাতা প্রদান কর্মসূচি এই অসহায় বৃদ্ধ মানুষগুলোকে তাদের পরিবারে সম্মান বয়ে এনেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক বয়স্ক প্রবীণের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, সরকার প্রদত্ত এই ভাতা যেন বৃদ্ধি করা হয়। কারণ যে পরিমাণ ভাতা দেওয়া হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই। তবুও এই ভাতা প্রাপ্তিতে তারা খুশি। সমাজের অসহায়, দুস্থ প্রবীণদের সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা জরুরি।
শুধু প্রবীণদের অধিকারের প্রশ্নে নয়, তাদের জীবনের শেষভাগ যেন স্বাচ্ছন্দ্যময় হয় এবং আপনজনের সান্নিধ্যে কাটে তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। শিশুদের মতো প্রবীণরাও যে সরল এবং অন্যের মুখাপেক্ষী। আসুন আমরা প্রবীণদের নিয়ে ভালো কিছু করার জন্য তাদের সন্তান হিসেবে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করে তুলি। সামাজিক সম্মানবোধ আর মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখতে আমাদের জীবনের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি এই প্রবীণদের সম্মান দিতে শিখি। পরিবারের সদস্যদের আন্তরিকতাপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে আমাদের পরিবারের প্রবীণদের জীবনের শেষ মূহুর্ত হয়ে উঠুক শান্তি, স্বস্থি এবং আনন্দময়।
লেখক : গণমাধ্যম কর্মী, কবি

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝