শিরোনাম |
হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহণের নাটক সাজিয়ে ধর্ষণ ও প্রতারণা মামলায় জামিন নিয়ে ফের প্রতারণায় লিপ্ত হয়েছেন সেই উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস ওরফে উজ্জ্বল হোসেন। যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের একটি ক্লিনিক কর্মচারীকে (৩৪) বিয়ে করে ধর্ষণ এবং প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাকে গত ১৯ আগস্ট যশোর শহর থেকে আটক করে পলিশ। পরে আদালত থেকে জামিন নিতে বিয়ের প্রতারণা সাজায়। ধর্ম নিয়েও প্রতারণা করে। উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস থেকে উজ্জ্বল হোসেন নামও ধারণ করেন নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে। সেই উজ্জ্বলের এবারের প্রতারণায় ফুটফুটে এক শিশু পিতৃহারা হতে চলেছে।
উজ্জল কুমার যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডস্থ মেডিল্যাব নামক একটি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কলেজ রোডের শিবপদ বিশ্বাসের ছেলে। বর্তমানে তিনি যশোর শহরের বেজপাড়া পূজা মন্ডপের পেছনে ভাড়া বাড়িতে থাকেন।
ওই নারী এজাহারে উল্লেখ করেন, তার বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ফরিদপুর গ্রামে। তিনি বর্তমানে শহরের পুরাতন কসবা আজিজ সিটি সংলগ্ন একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। চাকরির সুবাদে উজ্জল কুমার বিশ্বাসের (৪৭) সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২১ সালের ২০ জুন এভিফডেভিটের মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হিসেবে ধর্মান্তরিত হন উজ্জল। দেড় লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়। এরই মধ্যে ব্যবসার কথা বলে ওই নারীর কাছ থেকে নানা কৌশলে ১১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন উজ্জল।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে উজ্জল তার সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ডাকযোগে তালাকের নোটিশও পাঠান। এই ঘটনার পর তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন উজ্জল তার পূর্বের স্ত্রী এবং দুটি সন্তান নিয়ে সংসার করছেন। ওই ক্লিনিকে গিয়ে ফের উজ্জল তাকে নানাভাবে বুঝাতে থাকেন।
গত ১৬ জুন জেলা আইনজীবী সমিতি কার্যালয়ের নীচে একটি ঘরে তাকে বসিয়ে একটি নীল কাগজে সাক্ষর করিয়ে নেন। সেসময় বলেন তাদের মধ্যে ফের বিয়ে হয়ে গেছে। এরপর তিনি আবারও বিয়ের নাটক করে বাসায় গিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরমধ্যে নিয়মিত সংসার করার দাবি করলে উজ্জল অস্বীকৃতি জানান এবং গত ১ আগস্ট পুণরায় হিন্দু হয়ে আগের স্ত্রী-সন্তানদের সাথে সংসার করছেন বলে জানিয়ে দেন। তাছাড়া সব সম্পর্ক ছিন্ন করারও ঘোষণা দেন উজ্জল। এই ঘটনায় নিরুপায় হয়ে তিনি যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পিটিশন মামলা দায়ের করেন। মামলাটি কোতোয়ালি থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়।
এই মামলায় কোতোয়ালি থানার এসআই জুম্মান খান গত ১৯ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের টাউন হল ময়দান থেকে উজ্জলকে আটক করেন।
এই আটকের পর ফের প্রতারণা শুরু করেন উজ্জ্বল। তিনি জামিন নিতে ফের নোটারি পাবলিক করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি যে মুসলিম হয়েছেন, এই মর্মে তার পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে অঙ্গীকার নামা পেশ করেন। এভাবে জামিন নিয়ে ফের আগের স্ত্রী বাদ দিয়ে ছোট স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার শুরু করেন। ইমিধ্যে তাদের একটি সন্তান হয়, যার বর্তমান বয়স প্রায় এক বছর।
কিন্তু আবারও তিনি পুরোনো সংসারে ফিরে গেছেন। সেই সাথে তিনি তার ছোটো স্ত্রীকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তার ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি মেনে চলা সম্ভব নয়, তিনি হিন্দু ধর্মেই থাকছেন। উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস ওরফে উজ্জ্বল হোসেন পূণরায় বেজপাড়ায় আগের সংসারে যাতায়াত করে চলেছেন। ছোটো বউ এসব অনাচারে আপত্তি করায় এবং ধর্ম নিয়ে ‘ছেলে খেলা’ না করতে বলায় তিনি কাজীপাড়ার বাসায় যাতায়াত বন্ধ করে দেন। ছোট স্ত্রী তার ব্যাপক খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করার মাঝেই গত ২২ অক্টোবর ডাকযোগে পূণরায় তালাকনামা পান।
এসব বিষয় নিয়ে ছোট স্ত্রীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, তিনি শুধুমাত্র তার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বার বার উজ্জ্বলের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এখন তার সন্তান কোন পিতৃ পরিচয় নিয়ে বড় হবে?
তিনি আরও বলেন, উজ্জ্বল শুধু আমার সাথেই প্রতারণা করছে না, ধর্ম নিয়ে ছেলে খেলা করে মহান আল্লাহর সাথেও প্রতারণা করে চলেছে। তিনি এসব অনাচারের বিচার চান।
এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস ওরফে উজ্জ্বল হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।