gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
লালমনিরহাটে সার নিয়ে কৃষকের হাহাকার
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর , ২০২৪, ০৫:২৩:০০ পিএম
আজিজুল ইসলাম বারী,লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
GK_2024-11-28_67484ac7c4093.jpeg

রবি মৌসুমের শুরুতে লালমনিরহাটের বাজারে সার সংকট দেখা দেয়ায় কৃষকদের মাঝে হাহাকার উঠেছে। নভেম্বর মাস শেষ দিকে এসেও চলতি মাসের বরাদ্ধের সারের ২০-২৫ শতাংশ সার পৌছেনি বাফার গুদামে।
এ ছাড়াও অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে কোন রকম বরাদ্ধ দেয়নি বিসিআইসি। ফলে সার সংকটে পড়েছে চাষিরা। রবি চাষাবাদ নিয়েও দুঃচিন্তা কৃষক পরিবারে।
কৃষকরা জানান, নভেম্বর মাসে রবি মৌসুম শুরু হয়। চলে ডিসেম্বর পর্যন্ত। আলু ভুট্টা সরিষা গমসহ নানান সবজি চাষাবাদ হয় রবি মৌসুমে। রবি মৌসুমের শুরুতে জমিতে পর্যাপ্ত সার প্রয়োগ করেন চাষিরা। ফলে রবি মৌসুমে সারের চাহিদা তুলনা মুলক ভাবে বেশি থাকে। বর্তমানে কৃষকরা রবি ফসল বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৌসুমের শুরুতে চাহিদা মত সার ন্যায্যমুল্যে না পেয়ে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় কোথাও কোথাও অধিক মুল্যে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
বর্তমান সময় জেলার পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায় পুরোদমে চলছে ভুট্টা বীজ বুনন কার্যক্রম। বীজ বুননের আগে জমি তৈরী করতে পর্যাপ্ত পরিমানে সার প্রয়োগ করতে হচ্ছে চাষিদের। সেই মৌসুমে সার সংকট সৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন এ দুই উপজেলার ভুট্টা চাষিরা। একই সাথে চলছে আলু রোপনের মৌসুম। সব মিলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বাজারে সার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের কতিপয় অসাধু বিক্রেতা অধিক মুল্যে সার বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ কৃষকদের। যার বেশির ভাগই অনিবন্ধিত ব্যবসায়ী। এসব বিক্রেতা মৌসুম শুরুর আগে ডিলারদের কাছ থেকে ক্রয় করে গুদাম জাত করে এ কৃত্রিম সংকট তৈরী করে সুযোগ বুঝে বর্তমানে বেশি দামে বিক্রি করছে। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়ে অধিক দামে সার কিনে চাষাবাদ করছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন চাষিরা।
হাতীবান্ধার ভুট্টা চাষি আসাদুজ্জামান বলেন, ভুট্টা চাষাবাদ শুরু হতেই বাজার থেকে সার উধাও হয়েছে। গোপনে বেশি টাকা দিলে সার মিলছে প্রান্তিক বিক্রেতাদের কাছ থেকে। ডিলাররা সরবরাহ নেই অজুহাতে সার নেই বলেও ফিরে দিচ্ছেন। চাষাবাদ করতে অধিকমুল্যে সার কিনতে হচ্ছে। বাংলা টিএসপি প্রতিবস্তা ১৩৫০ টাকার স্থলে ১৫০০ টাকা এবং বাংলা ডিএপি ১০৫০ টাকার স্থলে দুই হাজার টাকা দামে কিনতে হচ্ছে অনিবন্ধিত বিক্রেতাদের কাছ থেকে। শুরুতে এমন ধাক্কা খেয়ে উৎপাদন খরচ যেমন বাড়ছে তেমনি চাষাবাদ নিয়েও শ্বঙ্কা দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত সার সরবরাহ নিশ্চিত ও অসাধু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানান তিনি।
আদিতমারীর দেওডোবা গ্রামের কৃষক সাদেকুল ইসলাম বলেন, তামাক চাষ করতে প্রচুর পরিমান সার লাগে। শুরুতেই সারের সংকট দেখা দিয়েছে। অনিবন্ধিত বিক্রেতারা বাংলা টিএসপি ও ডিএপি সার বস্তা প্রতি দুইশত থেকে ৬ শত টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে। নিবন্ধিত বিক্রেতাদের গুদামে কোন সার নেই। তারা দাবি করছেন বাফার গুদামে না কি সার পৌছেনি। তাই সংকট তৈরী হয়েছে। কতদিনে বাফার গুদামে সার পৌছবে? মৌসুম শেষে চাষাবাদ করলে ফলন কম হওয়ারও আশংকা রয়েছে। সার নিয়ে বড় চিন্তায় আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডিলার বলেন, লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ৩টিতে ব্যাপক হারে তামাক চাষ হয়। বাকী পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধায় ব্যাপক ভাবে চাষ হয় ভুট্টা। তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করতে তামাকের জন্য কোন সার বরাদ্ধ চায় না কৃষি বিভাগ। তামাক চাষেও প্রচুর পরিমান সার লাগে। যার বরাদ্ধই দেয় না কৃষি বিভাগ। ফলে তামাকের জমির বিপুল পরিমান সার সরবরাহ করতে এ রবি মৌসুমে সারের এ ঘাটতি থেকে যায়। সংকট দুর করতে হলে যেহেতু তামাক চাষ হয় এবং চাষিরা এসব সার তামাক ক্ষেতে প্রয়োগ করেন। তাই তারও চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে বরাদ্ধে দেয়া উচিৎ। নচেদ সংকট থেকে যাবে।
নিবন্ধিত সার বিক্রেতারা জানান, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে কোন সার বরাদ্ধ দেয়নি বিসিআইসি। এ ছাড়াও নভেম্বর মাসে বিএডিসি যে পরিমান সার কাগজ কলমে বরাদ্ধ দিয়েছে তার ২০/২৫ শতাংশ সার এখন পর্যন্ত বাফার গুদামে এসে পৌছেনি। গুদামে সরবরাহে ঘার্টতির কারনে বাজারে কিছুটা সংকট পড়েছে। সামনের সপ্তাহে ডিসেম্বর মাসের বরাদ্ধে পৌছে গেলে এ সংকট কেটে যাবে। প্রান্তিক পর্যায়ে অনিবন্ধিত কিছু অসাধু সার বিক্রেতা আগাম সার কিনে মজুদ করে সুযোগ বুঝে এখন বেশি দামে বিক্রি করছে। অনিবন্ধিতদের মজুদদারীর কারনে এ কৃত্রিম সংকট তৈরী হতে পারে। যা মনিটরিং করে দ্রুত আইগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তবে সামনের সপ্তাহে সংকট কেটে যাবে বলেও তারা দাবি করেন।
বিএডিসি'র আদিতমারী বুড়িরবাজারের ডিলার ফরহাদ আলম সুমন বলেন, নভেম্বর মাসের বরাদ্ধ চলতি মাসের ৩ তারিখে উত্তোলন করেছি। রবি মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রি শেষ হয়েছে। আগামী মাসের বরাদ্ধ তুললে তবে সার বিক্রি করতে পারব। ডিসেম্বর মাসের ২/৩ তারিখের মধ্যে ডিসেম্বর মাসের সার পৌছতে পারে। বরি মৌসুমের ব্যাপক চাহিদা আর অপর দিকে গত দুই মাস বিসিআইসি এ অঞ্চলে সার বরাদ্ধ না দেয়ায় এ সংকট তৈরী হয়েছে। তবে তা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংকট হয়তো থাকবে না। বিচলিত হয়ে অসাধু বিক্রেতাদের কাছে বেশি দামে সার না কিনে ৫/৭ দিন অপেক্ষা করতে কৃষকদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, রবি মৌসুমের জন্য নভেম্বর মাসে লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলা ও দুইটি পৌরসভায় বরাদ্ধ আসে টিএসপি এক হাজার ৯২৬ মেঃটন, ডিএপি ৩হাজার ৪১২ মেঃটন, ও এমওপি দুই হাজার ৭০ মেঃটন। যা উপজেলা ভেদে ৩০ ও ৪০ শতাংশ সার এখন পর্যন্ত বাফার গুদামে পৌছেনি। পর্যাক্রমে আসছে এবং তা ডিলারদের মাঝে বিতরন করা হচ্ছে। গত দুই মাসে বিসিআইসি কোন রকম সার বরাদ্ধ দেয়নি। তবে ডিসেম্বর মাসের জন্য বিসিআইসি ও বিএডিসি'র সার বরাদ্ধের চিঠি এসেছে। সেই চিঠি মতে ডিসেম্বর মাসে লালমনিরহাটের চাষিরা পাবেন দুই হাজার ৭৯ মেঃটন টিএসপি, ৩হাজার ৯১২ মেঃটন ডিএপি এবং দুই হাজার ৬৭০ মেঃটন এমওপি সার। ডিসেম্বর মাস পরলেই সার পর্যাপ্ত হবে জেলার বাজারে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. সাইফুল আরেফিন বলেন, গত দুই মাসে বিসিআইসি'র সার আসেনি এবং নভেম্বর মাসের বরাদ্ধের কিছু অংশ এখন পর্যন্ত বাফার গুদামে পৌছেনি। যে পরিমান আসছে তা তাৎক্ষনিক ডিলারদের মাঝে বিতরন করা হচ্ছে। সারের কোন সংকট নেই। কিছু অসাধু ব্যাক্তি গুজব সৃষ্টি করে সংকট তৈরী করছে। এসব অসাধু ব্যাক্তি ও বিক্রেতার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।
আগামী সপ্তাহে ডিসেম্বর মাসের বরাদ্ধে এলে জেলায় সারের কোন সংকট থাকবে না। তাই গুজবে কান না দিয়ে ডিলারদের কাছে কৃষকদের নির্ধারীত মুল্যে সার কেনার আহবান জানান তিনি। তামাকের জমির জন্য সারের বরাদ্ধে নেয়া হয় বলেও দাবি তার।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝