শিরোনাম |
স্বপ্ন পূরণের আশায় কুয়েতে গিয়েছিলেন যশোর সদর উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন। চাকরি নিয়েছিলেন আবু হালিফা এলাকার আমনকো কোম্পানিতে। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। চাকরির পাশাপাশি করছিলেন ব্যবসাও। কিন্তু সেই ব্যবসায় যেন কাল হল আনোয়ারের। সহকর্মীর হাতে খুন হয়ে শনিবার নিজবাড়িতে লাশ হয়ে ফেরেন তিনি। এসময় এলাকায় কান্নার রোল পরে। আনোয়ার হোসেনের অকাল মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না স্বজনসহ স্থানীয়রা।
নিহতের পরিবার জানায়, আনোয়ার হোসেন ছিলেন হতদরিদ্র। একছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসারের বোঝা টানতে না পেরে আত্মীয়দের দারস্ত হন। পরে আত্মীয়দের আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে আট বছর আগে পাড়ি দেন কুয়েতে। সেখানে চাকরির পাশাপাশি শুরু করেন গ্যাসের ব্যবসা। ওই ব্যবসা দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন সহকর্মী মানিকগঞ্জের রুবেলকে। কিন্তু বিশ^াসঘাতক রুবেল ব্যবসার টাকা আত্মসাৎ করেন। অক্টোবরের ২৬ তারিখে ওই টাকা ফেরৎ চাওয়ায় তাদের বাসভবনের ১০ তলায় কৌশলে আনোয়ারকে নিয়ে যান রুবেল। সাথে আরও কয়েকজন আফ্রিকান যোগ হন। এরপর তারা রুবেলের হাত ও পায়ের রগ কাটেন। পরে গলা কেটে হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যান সবাই। তিনদিন পর বিষয়টি নজরে আসে কুয়েত পুলিশের।
পুলিশ ঘাতক রুবেলসহ পাঁচজনকে আটক করে। পরে পুলিশ ঘাতক রুবেলকে নিয়ে যায় সেই দশতলা ভবনের ছাদে। কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা দেখানোর ছলে ঘাতক রুবেল দশতলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন। শেষ মেষ রুবেলেরও ঠাই হয় কুয়েতের মর্গে আনোয়ারের পাশে। একমাস পর দুইজনেই একই বিমানে পাশাপাশি শুইয়ে ফেরেন বাংলাদেশে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের মরদেহ হস্তান্তর করে। শুক্রবার ভোরে চাঁদপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে পৌঁছায় আনোয়ারের মরদেহ। এসময় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনেরা আরও জানান, আট মাস আগে তিনি দেশে এসে মেয়ের বিয়ে দিয়ে ফিরে যান কুয়েতে। স্থানীয়রা জানান, আনোয়ার ছিলেন পরোপকারী। বিদেশে থেকে এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন তিনি।
আনোয়ারের মরদেহ নিজ গ্রামের আনার পর শেষ বারের মত দেখতে বাড়িতে ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। শুক্রবার দুপুরে নিজবাড়ির সামনেই জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে আনোয়ারের দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজায় অংশ নেন, ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, বিএনপি নেতা আরিফ হোসেন, হাফিজুর রহমান, রুহুল আমিন, আক্তার হোসেনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।