শিরোনাম |
ফিলিস্তিনের গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা সংঘাতের অবসানে হামাস ও দখলদার ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক মাস আলোচনার পর উভয়পক্ষ এই চুক্তিতে পৌঁছায়।
এদিকে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুমোদন করবে। ইহুদিবাদী এই দেশটির সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এমন তথ্যই জানিয়েছে। যদিও যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘিরে ভাঙনের শঙ্কায় পড়েছে নেতানিয়াহুর সরকার।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুমোদনের জন্য ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা শুক্রবার সকালে বৈঠকে বসবে বলে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএন জানিয়েছে। আগামী রোববার (১৯ জানুয়ারি) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে চলেছে।
দীর্ঘ কয়েক মাস আলোচনার পর এই চুক্তিতে পৌঁছায় উভয়পক্ষ, যার অন্যতম মধ্যস্থতাকারী ছিল কাতার। কাতার গত বুধবার জানায়, গাজা উপত্যকায় ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলার অবসান ঘটবে। বর্বর এই আগ্রাসনে ৪৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু।
এছাড়া যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী এই দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি বলেছেন, ইসরায়েলের পার্লামেন্টে অনুমোদন পাওয়ার পর এই চুক্তি কার্যকর হবে।
আনাদোলু বলছে, যুদ্ধবিরতির এই চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সেই বৈঠকটি পরে স্থগিত করা হয়। কারণ প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার অতি-কট্টর ডানপন্থি মিত্রদের কাছ থেকে চুক্তির অনুমোদনকে ঘিরে বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরায়েলি ও আমেরিকান কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে ইসরায়েলি দৈনিক ইয়েদিওথ আহরনোথ বলেছে, “কাতারের আলোচনাকে ঘিরে সর্বশেষ মতবিরোধের সমাধান করা হয়েছে।”
ইসরায়েলের শাস পার্টির নেতা নেসেট সদস্য আরিয়েহ ডেরিকেও উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, শাসক জোটের একটি অংশ বলেছে- সমস্ত বাধা অতিক্রম করা হয়েছে এবং চুক্তি (কার্যকর) হতে চলছে।”
তারা আরও বলেছে, “এখন তারা চূড়ান্ত কৌশলগত কিছু শব্দ নিয়ে ব্যস্ত।”
আগামী রোববার থেকে কার্যকর হতে যাওয়া তিন ধাপের এই চুক্তিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি, সেখান থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার এবং হামাসের হাতে আটক থাকা বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও এখনও গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা আসার পর ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৮৭ জনেরও বেশি নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, হামাসের হাতে আটক ৩৩ বন্দির মুক্তির পরিবর্তে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের অনেককে ছেড়ে দেওয়া হবে।
গাজার ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি বাহিনী আরও পূর্ব দিকে সরে যাবে। এর ফলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন। এছাড়াও ত্রাণবাহী শত শত ট্রাক প্রতিদিন গাজায় প্রবেশের সুযোগ পাবে।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় স্থান পাবে বাকি বন্দিদের মুক্তি এবং “টেকসই শান্তির” জন্য ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি। তৃতীয় ও চূড়ান্ত ধাপে আসবে গাজার পুনর্গঠন। এর জন্য অনকে বছর লেগে যেতে পারে। তবে হামাসের হাতে আর কেউ বন্দি থাকলে তাদের মুক্তির বিষয়টিও আলোচনায় আসবে এই ধাপে।
শেখ মোহাম্মদ আল থানি বলেন, চুক্তির বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার পর কয়েকদিনের মধ্যেই এটি বিস্তারিত জানানো হবে। তিনি আরও জানান, কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর এই চুক্তি করার বিষয়ে সহায়তা করেছে এবং তারা ইসরায়েল ও হামাস যেন চুক্তির সব শর্ত মেনে চলে সেজন্যও সচেষ্ট থাকবে।