শিরোনাম |
❒ যশোর শিক্ষা বোর্ড
গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরমপূরণের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। এই টাকার একটি অংশ দেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা বোর্ড থেকে দেয়া হবে আরেকটি অংশ। ফরমপূরণের পর যেসব বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি সেসব বিষয়ের ফিস বাবদ জমা নেয়া টাকা ফেরত দেয়া হবে। তবে, অনেকের প্রশ্ন-বোর্ডের নির্দেশনার পরও পরীক্ষার্থীদের হাতে টাকা পৌঁছাবেতো? নাকি কলেজেই থেকে যাবে?
২০২৪ সালে যশোর শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য এক লাখ ২৪ হাজার ১৪৮ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করে। ৫৭৪ টি কলেজের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা ২৩০ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ফরমপূরণ বাবদ প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে তত্ত্বীয় বিষয়ের প্রতি পত্রের জন্য ৪০ ও ব্যবহারিকে প্রতি পত্রে ৪৫ টাকা করে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছয়টি পত্রে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। বিজ্ঞান বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি আটটি পত্রে। এছাড়া, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি দু’টি পত্রে। সেই হিসেবে বিজ্ঞান বিভাগে তত্ত্বীয় ছয়টি পত্রে ৪০ টাকা করে ২৪০ ও ব্যবহারিক আটটি পত্রে ৪৫ টাকা করে ৩৬০ টাকা সর্বমোট ৬০০ টাকা প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে ফেরত দেয়া হবে। এরমধ্যে তত্ত্বীয় বিষয়ে টাকা ফেরত দেবে বোর্ড আর ব্যবহারিক বিষয়ের টাকা দেবে স্ব স্ব কলেজ।
গত বছর বিজ্ঞান বিভাগে ফরমপূরণ করে ২৩ হাজার ২১৬ জন পরীক্ষার্থী। প্রত্যেক পরীক্ষার্থী ৬০০ টাকা হিসেবে এক কোটি ৩৯ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা ফেরত পাবে। একইভাবে মানবিক বিভাগে প্রত্যেক পরীক্ষার্থী তত্ত্বীয় বিষয়ে ২৪০ ও ব্যবহারিকে ৯০ টাকা মিলে ৩৩০ টাকা ফেরত পাবে। সেই হিসেবে মানবিকের ৮৫ হাজার ৭৫২ পরীক্ষার্থী ফেরত পাবে দু’কোটি ৮২ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা। আর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ১৫ হাজার ১৮০ জন পরীক্ষার্থী ৩৩০ টাকা হিসেবে ৫০ লাখ নয় হাজার ৪০০ টাকা ফেরত পাবে। তিনটি বিভাগের অনিয়মিত পরীক্ষার্থীরাও একইভাবে অর্থ ফেরত পাবে বলে বোর্ডের পরীক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ডক্টর আব্দুল মতিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে বলা হয়েছে, যেসব বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি সেসব বিষয়ের ফরমপূরণের অর্থ ফেরত পাবে পরীক্ষার্থীরা। আর এই অর্থ গ্রহণ করতে হবে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। পরীক্ষা বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, তত্ত্বীয় বিষয়ের অর্থ বোর্ডের ফান্ডে জমা হয়। আর ব্যবহারিকের অর্থ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যদিও কোনো কোনো কলেজ ব্যবহারিকের ফিস কেন্দ্রে পাঠায়। সেখান থেকে তাদের অর্থ সংগ্রহ করে পরীক্ষার্থীদের ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বোর্ড। আর বোর্ডে জমা হওয়া অর্থ ফেরত দেয়া হবে প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট নম্বরে। তবে, কত তারিখের মধ্যে পরীক্ষার্থীরা তাদের অব্যয়িত অর্থ ফেরত পাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত পত্রে সেসম্পর্কে কোনো কিছু উল্লেখ নেই। ফলে, টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
এদিকে, বোর্ড থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফরমপূরণের অব্যয়িত অর্থ ফেরত পেলেও পরীক্ষার্থীরা তা যথাযথভাবে ফেরত পাবে কিনা তা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। অনেকের বক্তব্য, অধিকাংশ কলেজ কর্তৃপক্ষ টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করবে। ইতিপূর্বে এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে বলে তাদের দাবি।
শিক্ষাবোর্ড থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে খুলনা জেলায় ২৩ হাজার ৪৬৫, বাগেরহাটে ৮ হাজার ৬৬৩, সাতক্ষীরায় ১৩ হাজার ৯৪২, কুষ্টিয়ায় ১৬ হাজার ৩৫৯, চুয়াডাঙ্গায় ৭ হাজার ৭২২, মেহেরপুরে ৪ হাজার ৪০৫, যশোরে ২০ হাজার ৪৯০, নড়াইলে ৫ হাজার ৭২৯, ঝিনাইদহে ১৬ হাজার ৩৮৪ ও মাগুরায় ৬ হাজার ৯৮৯ জন পরীক্ষার্থী ফরমপূরণ করে।
২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্ধেক বিষয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।