শিরোনাম |
❒ শাহ আলম চক্রে জিম্মি খাজুরাস্ট্যান্ডের অনেক ঘরমালিক
খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে হাউজিং এস্টেটের জায়গায় নিজেদের খরচে অস্থায়ী দোকান করে নেয়া গোলমার্কেটের সাবেক ব্যবসায়ী ও দোকানীদের এখনও প্রতি মাসে চাঁদা গুনতে হচ্ছে। এখান থেকে হাউজিং এস্টেট একটি টাকা না পেলেও কিংবা এ নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও বন্ধ হয়নি ওই অনৈতিক কারবার।
শাহ আলম নামে এক ব্যক্তি নেপথ্যে থেকে একটি রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে দোকানী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই অর্থ আদায় করাচ্ছেন বলে জোর অভিযোগ। শাহ আলম তার সাথে আরো ১০/১২ জন যুবককে ব্যবহার করে খাজুরা বাসস্ট্যান্ডের কমপক্ষে অর্ধশত দোকান থেকে ভাড়ার টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।
এর আগে উপশহরের আওয়ামী লীগ পন্থী একজনের নেতৃত্বে একটি চক্র ওই দোকানগুলো ভাড়া আদায়ের নামে চাঁদাবাজি করেছে। আর এখন সেখানে শাহ আলমের নেতৃত্বে চক্র মাঠে নেমেছে গত কয়েক মাস ধরে। তারা রাজনৈতিক নেতা ও হাউজিং এস্টেট কর্মকর্তার নাম ভাঙাচ্ছেন। অস্থায়ী দোকানের মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এই অনাচারের প্রতিকার দাবি করে আসলেও সমাধান হচ্ছে না। ওই চাঁদাবাজি ও দোকান ভাড়া আদায় সংক্রান্ত কোনো কাজে হাউজিংয়ের কেউ সম্পৃক্ত না থাকলেও একটি রাজনৈতিক পক্ষের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে যথেচ্ছা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও অভিযুক্ত পক্ষের শাহ আলমের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, বরং তারা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধেই কথা বলে আসছেন।
২০১৬ সালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সরকার ও অর্থ মন্ত্রনালয়ের সাথে আলোচনা করে উপশহরের গোল মার্কেটটি ভেঙে সময় উপযোগী মার্কেট করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়। এরপর ভেঙে দেয়া হয় মার্কেটটি। এদিকে সমস্যায় পড়ে যান ওই মার্কেটের ভাড়াটিয়া দোকানী ও ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া পরিবহন কাউন্টার কর্তৃপক্ষ। এসময় একদিকে শুরু হয় অত্যাধুনিক মার্কেটের পাইলিং কাজ, অপর মার্কেটের পূর্ব পাশের হাউজিংয়ের জায়গায় অস্থায়ীভাবে ঘর করে নেন গোল মার্কেটের দোকানী ও ভাড়াটিয়ারা। উপশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটুর নেতৃত্বে দোকানী ও ভাড়াটিয়াদের স্বার্থে তাদের টাকায় আধাপাকা অস্থায়ী ঘর করে দেয়া হয়। অর্ধশত ওই ঘরের অধিকাংশই বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টার হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এটা হাউজিংয়ের জায়গা আর হাউজিং এখান থেকে একটি টাকা না নিলেও বিগত ১০ বছর ধরে অর্ধেকের বেশি ভাড়া তুলে চাঁদা হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে অসাধু চক্র। বিগত ১০ বছর রাজনৈতিক সেল্টারে থাকা উপশহর এলাকার একটি অসাধু চক্র ভাড়া আদায়ের নামে চাঁদাবাজি করেছে। আর গত ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খাজুরা বাসস্ট্যান্ডের হাউজিং এস্টেটের অর্ধশত ঘরের উপর খবরদারি ও দখলদারিত্ব চাঁদাবাজির রুপ পাল্টে গেছে। গত ৪ মাস এখানে শাহ আলমের নেতৃত্বে টাকা আদায় কার্যক্রম চলছে বলে অভিযোগ। আবার কেউ বলছেন শাহ আলমের সাথে নেপথ্যে মধু নামে আরো একজন রয়েছেন, যিনিও এই কাজে যুক্ত।
পরিবহন কাউন্টার সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, কোনো পরিবহন কর্তৃপক্ষ ভাড়া হিসেবে ১৩ হাজার টাকা মাসে পেমেন্ট করেন। কিন্তু তা থেকে ঘর মালিক পান হয়তো মাত্র ৫ হাজার টাকা। বাকিটা শাহ আলমের নেতৃত্বে চলা যশোরের ঘোপ ও উপশহর এলাকার কয়েকজন মিলে নিয়ে নেন। এর আগে যে মুনসুর ভাড়া আদায় করতেন তিনি মূলত ঘর মালিক নন। তিনি এখন পলাতক। আবার এখন যে শাহ আলম ভাড়া আদায়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনিও মালিকের লোক নন। কিন্তু হাউজিংয়ের জায়গায় নিজেদের টাকায় দোকানীরা অস্থায়ী যে ঘর করে ব্যবহার করছেন কেউ ভাড়া দিয়েছেন। কিন্তু পুরো টাকা তারা পাচ্ছেন না, হাউজিং এস্টেটও একটি টাকাও নেয়না। অর্ধেকের বেশি টাকা চাপ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ঘোপ এলাকার এক ব্যক্তির নেতৃত্বে চলা শাহ আলম ও মধু চক্র। প্রতি মাসে দু’লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্রটি। তারা এর প্রতিকার দাবি করলেও সুরাহা হয়নি।
অস্থায়ী ওই ঘর মালিকদের অনেকের দাবি, টাকা নিলে হাউজিং কর্তৃপক্ষ নেবে। হাউজিংয়ের জমিতে দোকান, আর জমিদারি করছে দুষ্টু চক্র। মোট ভাড়ার ৩ ভাগের দ্’ুভাগই ওরা নিয়ে যাচ্ছে। আর যারা নিজেরা দোকান চালাচ্ছে তাদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। শাহ আলম, মধুসহ চিহ্নিত আরো কয়েকজন এই ঘটনায় জড়িত বলেও অভিযোগ অনেকের।
এদিকে, টাকা উত্তোলণের সাথে সম্পৃক্ত এক যুবক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, তিনিসহ একটি রাজনৈতিক দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা কর্মীদের কেউ কেউ আদায়কৃত ওই টাকা থেকে সুবিধাভোগী হচ্ছেন।
এদিকে অভিযুক্ত পক্ষের শাহ আলমের সাথে কথা বললে তিনি জানিয়েছেন, তাদের নামে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। ঘটনার সাথে তিনি সম্পৃক্ত নন। তবে একসময় মুনসুরের নেতৃত্বে চীমা, হাসানসহ কয়েকজন ওই সব দোকান থেকে টাকা আদায় করত বলে তিনি শুনেছেন। অথচ তার নামে অপপ্রচার করা হচ্ছে। তিনি স্বচ্ছতার সাথে ব্যবসা করেন এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কাজ করছেন বলেও দাবি করেছেন।