শিরোনাম |
❒ পলাশের রঙে রঙিন মহাসড়ক
বসন্ত এবং পলাশ যেনো অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বসন্তের অন্যতম প্রতীক হলো পলাশ ফুল। বসন্ত এলেই প্রকৃতির রঙ বদলে যায়। গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়, বাতাসে মিশে যায় মৃদু মিষ্টি সুবাস, আর চারপাশ ভরে ওঠে ফুলের সমারোহে। আগুনরাঙা, উজ্জ্বল, প্রাণোচ্ছল পলাশের রঙে বিমোহিত প্রকৃতি ও মানব হৃদয়।
শীতের শেষে প্রকৃতি যখন ধূসর থেকে সবুজ হতে শুরু করে, তখনই পলাশ জানান দেয় তার আগমনী বার্তা, বসন্ত এসে গেছে। বনভূমি, পথের ধারে কিংবা শুকনো টিলায় যখন পলাশ ফোটে, মনে হয় আগুন জ্বলছে। অথচ এ আগুন কোনো ক্ষতি করে না; বরং প্রকৃতিকে আরও মোহনীয় করে তোলে। ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফোরলেন ডিভাইডারে রোপিত পলাশ ফুলের সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর দৃশ্য পথিকের নজর কেড়েছে।
পলাশ ফুল শুধু বসন্তের রূপকথাই নয়, এটি আমাদের শিল্প- সাহিত্যেরও অংশ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশসহ অনেক কবি-সাহিত্যিকের রচনায় পলাশের কথা এসেছে। বসন্তের সঙ্গে প্রেম, বিরহ, উচ্ছ্বাস সব অনুভূতিই জড়িয়ে থাকে, আর পলাশ যেন তার অনন্য প্রতীক হয়ে উঠে।
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের সঙ্গে প্রকৃতিতে লেগেছে তার ছোঁয়া। মহাসড়কেও তাই লেগেছে আগুনরাঙা পলাশ ফুলের ছোঁয়া। নান্দনিক সৌন্দর্যে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী বৃক্ষ প্রেমি, ফুল প্রেমি মানুষকে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকার সড়কের বিভাজকে রোপিত গাছে ফুটেছে আগুনরাঙা পলাশ ফুল। মহাসড়কে গাড়িতে চলতে চলতে ফুলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন যাত্রীরা। এই সুন্দর থেকে বঞ্চিত হন না পথচারীরাও। সড়ক ও জনপথ (সওজ) ময়মনসিংহের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শওকত আলী বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেন হওয়ার পর সড়ক ডিভাইডারে নানা প্রজাতির ফুলের গাছ লাগানো হয়। সৌন্দর্যবর্ধন ও বিভাজকের মাটি আটকে রাখার জন্য ওই গাছ লাগানো হয়। এর মধ্যে পলাশও আছে। বসন্তে পলাশ ফোটে। এ ছাড়া ঋতুভেদে এখানে ফোটে সোনালু, কৃষ্ণচূড়া সহ নানা ধরনের ফুল। মহাসড়কের ভালুকা অংশের জামিরদিয়া - মাস্টারবাড়ি, সিডস্টোর, ভালুকা, ভরাডোবা সহ পাশ্ববর্তী ত্রিশাল উপজেলায় পলাশ ফুল চোখে পড়ে। যত দূর চোখ যায়, শুধু রঙের বাহার পলাশ আর পলাশ।
ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, ভালুকা থেকে ময়মনসিংহে কলেজে যাই। গাড়ি থেকে রাস্তার ডিভাইডারে পলাশ ফুল গুলো দেখতে সুন্দর লাগে, মন খারাপ থাকলেও মন ভালো হয়ে যায়। পলাশ - শিমুলের রঙে রঙিন মহাসড়ক যেনো বসন্তের স্বর্গীয় ছোঁয়া।
এই সড়কপথে যাতায়াতকারী পাড়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শাহজাহান কবির বলেন, ফুল ভালোবাসে না পৃথিবীতে এমন মানুষ পাওয়া নেই বললেই চলে। ঘর থেকে গন্তব্য তথা কর্মস্থলে গমনে রাস্তায় যদি ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পরে তখন মনটা এমনিতেই সতেজ হয়ে উঠে। এমন চমৎকার সুখানুভূতির পরশ পাওয়া যায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকে ফুটে থাকা পলাশ ফুলের সমারোহ দেখে।
জানাযায় পলাশ ভারতীয় উপমহাদেশের ফুল এবং বাংলাদেশে এই ফুল বেশিই ফোটে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, পুরুলিয়া এলাকায় এই ফুলের দেখা মেলে। বেঙ্গালুরুতেও পলাশ ফুলের দেখা মেলে হরহামেশাই। পলাশ ফুল লাল, লালচে কমলা, হলুদ ও সাদা রঙের হয়ে থাকে। এই গাছের নানা ঔষধি গুণও আছে। বসন্তে গাঁটের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অনেকে এই ফুল ব্যবহার করেন। পলাশ গাছের ছাল, পাতা ও বীজ নানা রোগ সারাতে কাজে লাগে। চর্মরোগ, জ্বর, ডায়রিয়া, ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় এর ব্যবহার আছে। যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিক আর শিল্পীদের কথা-গান-কবিতায়-ছবিতে পলাশ ফুল এসেছে বারবার। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় পলাশ এসেছে এভাবে-
‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল/এনে দে এনে দে নইলে/বাঁধব না, বাঁধব না চুল...।
বসন্ত শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন নয়, মানুষের মনেও এর প্রভাব পড়ে। ফাগুনের হাওয়ায়, কোকিলের গানে, আর পলাশের রঙে যেন হৃদয়ও নতুন করে রঙিন হয়ে ওঠে। তাই বসন্ত মানেই প্রাণের উৎসব, আর পলাশ তার অনিবার্য অলংকার। ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের পলাশ-শিমুল- কৃষ্ণচুরা, সুনালোসহ নানান জাতের ফুলগাছ যেমন সড়কের শোভা বাড়িয়েছে তেমনি যাত্রী ও পথিকের মনে সঞ্চার করেছে আনন্দের ভিন্ন আবহ।