gramerkagoj
সোমবার ● ২৪ মার্চ ২০২৫ ১০ চৈত্র ১৪৩১
gramerkagoj
সাবেক মন্ত্রী এমপিদের দুই হাত পেছনে রেখে হাতকড়া পরানোর হেতু
প্রকাশ : বুধবার, ১২ মার্চ , ২০২৫, ০৭:০০:০০ পিএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2025-03-12_67d185c9a553f.jpg

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান,জুনায়েদ আহমেদ পলকসহসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, মেয়রদের দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে হাজতখানা থেকে আদালতে তোলা হচ্ছে। কিন্তু কেন এর কারণ এতোদিন বলা হয়নি। এ বিষয়ে মুখ খুললেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
তিনি জানান, মূলত বেশ কয়েকজন আসামি হাজতখানা থেকে আদালতে তোলার সময় হাত উঁচু করে চিৎকার করে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিতে চান। তারা যাতে হাত উঁচু করে এ ধরনের কথাবার্তা না বলতে পারেন, সে জন্য তাদের হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলা হচ্ছে।
আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর গ্রেফতার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ ২৭ জন মন্ত্রী । গ্রেপ্তার হয়েছেন হাসিনা সরকারের ৬ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রী। শেখ হাসিনার ৩ উপদেষ্টাও গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়া গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন ৪৩ সাবেক সংসদ সদস্য ও ১১ জন সাবেক আমলা। গ্রেফতারকৃত এসব সাবেক মন্ত্রী,প্রতিমিন্ত্রী,এমপি ও ভিআইপিদের প্রথমদিকে এক হাতে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলা হতো। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে বেশ কয়েকজনকে দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে হাজতখানা থেকে আদালতে তোলা হচ্ছে।
আজ ১২ মার্চ সকালেও ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সিএমএম) আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে তোলা হয় । দেখা যায় হাজতখানা থেকে বের করানোর সময় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সালমান এফ রহমান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তাদের দুই হাত পেছনে দিয়েই হাতকড়া পরানো।
এছাড়া ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য সুলাইমান সেলিম ও ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম। সাবেক সিনিয়র সচিব মহিবুল হক মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন একদিকে। তার বাঁ পাশে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে সাফি মুদ্দাসসির খান জ্যোতিও দাঁড়ানো ছিলেন। সকলেরই পেছনে রেখে দুই হাতেই পরানো ছিল হাতকড়া।
তবে, প্রত্যেককে কাঠগড়ায় তোলার সময়ে এক হাতের হাতকড়া পুলিশ খুলে দেয়। আদালতের শুনানি শেষ হলে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন। তখন পুলিশ আবার আগের নিয়মে কাঠগড়ায় সালমান, পলক, মহিবুল, সুলাইমান ও সাফির হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে দেয়।
সাবেক মন্ত্রী,প্রতিমন্ত্রী এবং উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের হাতকড়া পরিয়ে আদালতে তোলা বা পেছনে দু হাত রেখে হাতকড়া পরানো নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হতেও দেখা গেছে। তীব্র প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ।
এক সময়ের এসব মন্ত্রী ,জাদরেল নেতাদের এভাবে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে আদালতে আনাকেও অসম্মানজনক বলে দাবি করেন বন্দীরা। সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত ১০ মার্চ আদালত প্রাঙ্গণে অভিযোগ করে বলেন, ‘কথা বললেই রিমান্ড আর মামলার সংখ্যা বাড়ে, হাত পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটকে রাখে।’
১১ মার্চ দুপুরে কুষ্টিয়ার আদালতে একটি হত্যা চেষ্টা মামলায় হাজিরা দিতে এসেছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ।
এসময় তাদের হাতকড়া নিয়ে আপত্তি তুললে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানা তাদের হাতের হাতকড়া খুলে দেয়ার নির্দেশনা দেন। ইনুর হাতে হাতকড়া খুলে দেয়া হলেও ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ তার হাতে হাতকড়া খুলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। এরই মধ্যে আদালতে ওঠেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানা। এ সময় ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ আদালতের অনুমতি নিয়ে বলেন আজ আদালতের সামনে আমার হাতে যেমন হাতকড়া পরানো হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের পুরো জুডিশিয়ারির হাতে এমন হাতকড়া পরানো।

আসামি পক্ষের আইনজীবী আকরাম হোসেন দুলাল জানান, খোদ এজলাসে হাসানুল হক ইনু এবং ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জের হাতে হাতকড়া পরানো বেআইনি। আদালতের তোলার সময় তাদের হাতে হাতকড়া পরানোয় আদালতকে আপত্তি জানিয়েছি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। পরে আদালত তাদের হাতকড়া খুলে দেয়ার নির্দেশনা দেন।
দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাদের মধ্যেও পেছনে দুহাত রেখে হাতকড়া পরানো নিয়ে প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে।
১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে মানিকগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দিন আহম্মেদ যাদু বলেন, পুলিশ আমাদের ধরে দুই হাত পেছনে দিয়ে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশ যে আচরণ করে আমাদের সাথে! আমরা দেশের মানুষের মানবাধিকার, ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন করছি। সেই জন্য কী আমাদের অপরাধ হয়েছে? ‘আমরা কি চোর-ডাকাত? আমরা কী অন্যায় করেছি?’

 

 

আরও খবর

🔝