শিরোনাম |
আজ পহেলা বৈশাখ। আজ ১৪৩২ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। আজ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির প্রাণে প্রাণ মেলানোর দিন। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে নতুন আশায় বুক বেধে, চোখে নতুন স্বপ্ন নিয়ে বাঙালি বরণ করবে নতুন বছরকে। চিরাচরিত ঐতিহ্য অনুযায়ী ধর্ম, বর্ণ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলে মিলে মেতে উঠবে বৈশাখী উৎসবে। আজ বাঙালির সেই উৎসবে মাতার দিন।
করোনার কারণে টানা দু’বছর সেইভাবে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন করা না গেলেও গত দু’বছর প্রভাতী অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়েই যশোরে সাড়ম্বরে উৎসব শুরু হয়। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার সুতিকাগার যশোরে আজ সকালে আবারও ঢাক ঢোল বাদ্যের সাথে শোভাযাত্রা বের হবে। বাংলা ১৩৯২ বঙ্গাব্দে, অর্থাৎ ১৯৮৫ সালে যশোরের চারুপীঠ বর্ষবরণে শোভাযাত্রা বের করে। এর পরের বছর ১৩৯৩ বঙ্গাব্দে মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন পর্ষদের ব্যানারে যশোরের সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমম্বয়ে দল-মত নির্বিশেষে বের হয় মঙ্গল শোভা যাত্রা। যশোরের সেই আয়োজকদের উদ্যোগেই এর দু’বছর পর ঢাকায় চারুকলা ইন্সটিটিউট বের করে মঙ্গল শোভাযাত্রা। যার স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। অথচ এর সূতিকাগার যশোরের মঙ্গল শোভাযাত্রার স্বীকৃতি মেলেনি আজও। সেদিনকে স্মরণ করেই আজ সকালে সবার সমন্বয়ে বের হবে বর্ণাঢ্য শোভা যাত্রা। এছাড়াও এবার পৌরপার্কের ঐতিহ্যবাহী প্রভাতী অনুষ্ঠানসহ উৎসব হবে মুসলিম একাডেমি, টাউন হল মাঠ, জেলা পরিষদ মিলনায়তন চত্বর, ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ মাঠ, নবকিশলয় স্কুল প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন স্থানে। সেসব প্রাণের উৎসবে মেতে উঠবে যশোরের সর্বস্তরের মানুষ।
আজ পুরাতনকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিন। বাঙালি আশা করতেই পারে, আজ দেশের সব মানুষ যে প্রাণে প্রাণে এক সারিতে মিলবে, সেই মিলন যেনো লোক দেখানো না হয়।
আজ শুধু মহানন্দের দিনই নয়, প্রত্যয় ঘোষণার দিনও। ঢাকার রমনার বটমূলে সেই বর্ষবরণ উৎসবে বোমা হামলার রক্ত শুকিয়ে গেলেও আজও বুকের ভেতর ক্ষত রয়ে গেছে। যদিও এবার সব শঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়ে আশার কথা জানিয়েছে পুলিশ। আজ একদিনের বাঙালি সাজবার দিন নয়, সারাজীবন মনে-প্রাণে বাঙালি থাকার শপথ নেয়ার দিন আজ। সেই প্রত্যয়কে ঘিরেই, বাংলা নববর্ষে মহামিলনের এই আনন্দ থেকেই বাঙালি মাত্রই আজ ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট-ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করার, আর কুসংস্কার ও কুপমন্ডুকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা নেবে, ঐক্যবদ্ধ হবে। নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। তেমনি বুকভরা প্রত্যাশা নিয়ে নতুন উদ্যমে ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি আজ আবার সোচ্চার হবে নতুন বাংলাদেশ দেখার।
আজ মুখে মুখে যেমন উচ্চারিত হবে কবি গুরুর ‘এসো হে বৈশাখ’ তেমনি থাকবে বিদ্রোহী কবি নজরুলের সেই গান-‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল বৈশাখীর ঝড়’। এই সুরধ্বনির মধ্যদিয়েই বাঙালি পুরনো বছরের সকল অপ্রাপ্তি ভুলে গিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েই বাঙালি পালন করবে বৈশাখী উৎসব।