gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ১ জুলাই ২০২৫ ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
gramerkagoj

❒ জুলাইয়ের প্রথম প্রহর

যশোরের বৈছাআ আহ্বায়ক রাশেদ খানের পদত্যাগ

❒ দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রকাশ : মঙ্গলবার, ১ জুলাই , ২০২৫, ১০:২২:০০ এএম
কাগজ সংবাদ:
GK_2025-07-01_686362702f836.jpg

একটি মাত্র ফেসবুক পোস্ট। তাতে লেখা কিছু শব্দ। অথচ তার প্রভাব যেন ছড়িয়ে পড়েছে যশোরের ছাত্র রাজনীতির পরিসরে বিস্ফোরণের মতো।

রাশেদ খান—যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কোটা আন্দোলনের সময় থেকে যশোরে ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য নেতা, ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার আহ্বায়ক। সোমবার (১ জুলাই) রাত ২টার দিকে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে তিনি জানিয়ে দেন, তিনি দায়িত্ব ছাড়ছেন।

পোস্টে তিনি লেখেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার আহ্বায়ক পদ থেকে আমি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিচ্ছি। একই সঙ্গে এনসিপি ও এর ছাত্র কিংবা যুব উইংয়ের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”

আরও পড়ুন...

দেশজুড়ে বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াতের ৩৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা


এই এক ঘোষণায় স্তব্ধ হয়ে যায় তাঁর সহকর্মীরা। কারণ, এটা কোনো পূর্বাভাস ছিল না, কোনো আলোচনার প্রসঙ্গও নয়। বরং, এই পদত্যাগ এমন এক সময়ে এলো, যখন গোটা দেশে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনে আলো জ্বলছিল মোমবাতিতে।

রাশেদের নামটি পরিচিত হয়ে ওঠে ২০২৩ সালের কোটা আন্দোলনের সময়। রাজনৈতিকভাবে তিনি বাম ঘরানার ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসেন। নেতৃত্ব দেন যশোরে ব্যাপক ছাত্র সমাবেশ ও মিছিলের। তাঁর নেতৃত্বগুণ ও সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁকে যশোর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ঘোষণা করে।

তার সঙ্গে সদস্যসচিব হন জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তি। ঘোষিত কমিটিতে ১০১ জন সদস্য ছিল। কিন্তু এই কমিটি ঘিরেই শুরু হয় সংকটের সূচনা।

কমিটি ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুগ্ম আহ্বায়ক-১ মাসুম বিল্লাহ পদত্যাগ করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, “নৈতিক স্খলনের অভিযোগ রয়েছে কমিটির অনেকের বিরুদ্ধে।” এরপর ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীদের কমিটিতে পুনর্বাসনের অভিযোগ এনে আরও ৭ জন নেতা পদত্যাগ করেন।

পরবর্তীতে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ‘অনৈতিক কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগে সদস্যসচিব জেসিনা প্রাপ্তির পদ স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি।

এইসব পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে সংগঠনের ভেতরে আস্থাহীনতা, দ্বন্দ্ব ও বিভক্তি গড়ে ওঠে। অনেকেই অভিযোগ করেন, নেতৃত্বে অস্বচ্ছতা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি দলে গভীরভাবে ঢুকে পড়েছে।

আরও পড়ুন...

গাজায় ক্যাফে ইসরায়েলি হামলা, স্কুল ও ত্রাণকেন্দ্রে নিহত ৯৫


রাশেদ খান পদত্যাগের পর পরই অনেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তবে তিনি সাড়া দেননি। পরে এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর ইনবক্সে লিখেছেন: “সারাক্ষণ কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি। এসব আর ভালো লাগছে না।”

এই বক্তব্য থেকেই অনুমান করা যায়, দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক রাজনীতির চাপ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তিনি নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের 'গোপন দলাদলি' ও 'ক্যাম্পবাজি' ছাত্র সংগঠনগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্থায়িত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। রাশেদের মতো একজন সক্রিয় ও জনপ্রিয় নেতার পদত্যাগ সেই দৃষ্টান্তই তুলে ধরছে।

বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, রাশেদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা অন্তত ডজনখানেক নেতাকর্মী খুব শিগগিরই পদত্যাগ করতে পারেন। তাঁদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

যদি এই দলীয় ধস সত্যি হয়, তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর কমিটি কার্যত ভেঙে পড়তে পারে। নতুন নেতৃত্ব খুঁজে বের করাটাও কেন্দ্রীয় কমিটির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

আরও পড়ুন...

ইতিহাসের ভয়াল রাত আজও জাতির মনে দগদগে ক্ষত


ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সংগঠনের মূল শক্তি হলো আদর্শ ও নেতৃত্ব। কিন্তু যশোর জেলা কমিটির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দেখাচ্ছে, আদর্শের জায়গা দখল নিচ্ছে দ্বন্দ্ব, আর নেতৃত্ব হারাচ্ছে বিশ্বাস।

রাশেদ খানের পদত্যাগ শুধু একটি পদ ছাড়ার ঘটনা নয়—এটি একটি আন্দোলনের ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। একইসঙ্গে, তা ছাত্র রাজনীতির মূল্যবোধ, ঐক্য এবং জবাবদিহিতার ওপরও আলোকপাত করছে।

একটি আন্দোলন তখনই টিকে থাকে, যখন নেতৃত্ব বিশ্বাসযোগ্য হয়, নীতি থাকে সুদৃঢ়, আর দলীয় অভ্যন্তরীন সংকটের সমাধান হয় অন্তর্মুখী সংলাপের মাধ্যমে।
রাশেদ খানের পদত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নেতৃত্ব শুধু প্রতীক নয়, এটি দায়িত্ব ও চাপের সমন্বয়। সেই ভার বহন করার মতো শক্ত ভিত না থাকলে যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে আন্দোলনের পুরো কাঠামো।

আরও খবর

🔝