শিরোনাম |
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য সচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনের অন্যতম সংগঠক সুহাইল মাহদীন (সাদী)। মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকাল ৭টায় নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি আবেগঘন ও দীর্ঘ স্ট্যাটাসে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি।
সুহাইল বলেন, “সংগঠনের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং নিজের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়েই পদত্যাগ করছি। এটি কোনো ক্ষোভ বা বিরোধ থেকে নয়, বরং দায়িত্ববোধ থেকে নেয়া সিদ্ধান্ত।” তিনি বলেন, “নেতৃত্ব মানে শুধু পদে থাকা নয়, বরং ত্যাগ, বিশ্বাস ও চেতনার নামই প্রকৃত নেতৃত্ব।”
সুহাইলের পোস্ট থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। কোটা প্রথার বিরোধিতায় জ্বলতে থাকা আগুনকে সামনে রেখে শুরু হওয়া এই আন্দোলন আজ ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন...
যশোরের বৈছাআ আহ্বায়ক রাশেদ খানের পদত্যাগ
তিনি বলেন, “এই আন্দোলন শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি একটি চেতনা, একটি আদর্শ এবং দীপ্ত প্রতিজ্ঞা।”
‘জুলাই বিপ্লব’ মূলত দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ন্যায্যতার দাবি তোলার আন্দোলন। এতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা নানা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন এবং তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন।
২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনে সাতক্ষীরা জেলা শাখায় গঠন করা হয় ১৬৯ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি। আহ্বায়ক: আরাফাত হুসাইন, সদস্য সচিব: সুহাইল মাহদীন (সাদী), মুখ্য সংগঠক: আল শাহরিয়ার, মুখপাত্র: মোহেনী পারভীন।
এই কমিটি সাতক্ষীরার শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্দোলনের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ও কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছে।
পদত্যাগের পরও সুহাইল বলেন, “আমি পদ ছেড়েছি কিন্তু প্রেম নয়। এই মাটি, এই স্বপ্ন, এই বিপ্লব আমার বুকের ভিতর গেঁথে থাকবে।” তিনি আশ্বাস দেন, আগামীতেও আন্দোলনের চেতনা ধারণ করে সক্রিয় থাকবেন এবং সাতক্ষীরার প্রতিটি প্রান্তে ‘জুলাই বিপ্লবের’ বার্তা পৌঁছে দিতে কাজ করবেন।
আরও পড়ুন...
শত্রু রাষ্ট্রের সহযোগিতায় মৃত্যুদণ্ড
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমার কারো সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। বরং সংগঠনের গতিশীলতা বাড়াতেই এই পদত্যাগ।”
স্ট্যাটাসের শেষ লাইনে তিনি লিখেছেন, “জুলাই বিপ্লব জিন্দাবাদ। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।”
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কোটা প্রথা দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কিত বিষয়। ছাত্র-ছাত্রী ও বিভিন্ন জনমত কোটা প্রথাকে বৈষম্যমূলক ও অবৈজ্ঞানিক বলে উল্লেখ করে পরিবর্তনের দাবি তুলেছে।
২০১৮ সালের পর থেকে কোটা সংস্কারের জন্য বিভিন্ন শিক্ষার্থী সংগঠন আন্দোলন করে আসছে, যার ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বৃহত্তর মাত্রা লাভ করে।
এই আন্দোলন দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে একটি সংগঠিত আদর্শ হিসেবে গড়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক ও শিক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন আলো ছড়াচ্ছে। ছাত্রদের দাবি ও আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থায় ন্যায় ও সমতার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
আরও পড়ুন...
সাতক্ষীরার এই পদত্যাগ একটি সাংগঠনিক পরিবর্তনের অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে যা আন্দোলনের গতিশীলতা এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে তারা মনে করেন।
সাতক্ষীরা জেলা শাখা ও কেন্দ্রীয় কমিটি সুহাইলের পদত্যাগকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে। তারা আশা করে নতুন নেতৃত্বে আন্দোলনের শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে এবং আগামী দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আরও বড় প্রভাব ফেলবে।
সুহাইল মাহদীন নিজেও তাঁর ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য রোধে অবদান রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য সচিব পদ থেকে সুহাইল মাহদীনের পদত্যাগ একদিকে ‘জুলাই বিপ্লব’ আন্দোলনের এক বছরের সাফল্য ও স্বীকৃতির সাক্ষর, অন্যদিকে নতুন নেতৃত্ব ও তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণের সম্ভাবনার ইঙ্গিত।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনা বুকে নিয়ে তারা আগামী দিনেও দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ন্যায় ও সমতার জন্য লড়াই অব্যাহত রাখবে।