শিরোনাম |
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের পদচারণা নতুন কিছু নয়। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত একটি অর্থনৈতিক বিল নিয়ে মাস্ক যে হুমকি দিয়েছেন—নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের—তা যেন দেশটির ভবিষ্যত রাজনৈতিক মানচিত্র পাল্টে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ পাস হলে ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের হুমকি দিয়েছেন মাস্ক।
ইলন মাস্ক এই বিলকে আখ্যা দিয়েছেন একটি ব্যয়বহুল ‘পাগলামি’ হিসেবে। তার মতে, এই প্রস্তাব স্পষ্ট করে যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রকৃতপক্ষে দুইটি দল নেই—ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান নয়, বরং এটি একদলীয় শাসনের প্রতিচ্ছবি। মাস্কের ভাষায়, “এই ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর দমন করছে।”
এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে একাধিক পোস্টে মাস্ক প্রস্তাবিত বিলটির কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগতভাবে ক্ষতিকর, বাজে খরচে ভরা এবং জাতীয় ঋণ বাড়াবে।” মাস্ক আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এর ফলে ভবিষ্যতবান্ধব সবুজ জ্বালানি প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে এবং পুরনো শিল্প খাতকে অপ্রয়োজনীয় সুবিধা দেওয়া হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “রিপাবলিকান পার্টি যদি এই বিল সমর্থন করে, তবে তা হবে রাজনৈতিক আত্মঘাত।”
আরও পড়ুন...
নতুন রূপে ফিরছে করোনা : জুনেই ২২ জনের মৃত্যু, বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি
বিলটি বর্তমানে মার্কিন সিনেটে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এতে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রবর্তিত করছাড় স্থায়ী করার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো, সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার এবং অবৈধ অভিবাসীদের ফেরতের জন্য বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে।
তবে সমালোচকদের মতে, এই বিল বাস্তবায়িত হলে জাতীয় ঋণ কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য চালু স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে বড় ধরনের কাটছাঁট আসবে।
বিল ইস্যুতে ইলন মাস্ক ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন স্পষ্টভাবেই শীতল। এক সময় ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে সরকারি ব্যয় কমানোর জন্য গঠিত Department of Government Efficiency (DGE)-এর প্রধান ছিলেন মাস্ক। কিন্তু বর্তমানে ট্রাম্প তাকে প্রকাশ্যে ‘অস্বাভাবিক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং তার মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরকারি চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছেন।
অবশ্য একইসঙ্গে ট্রাম্প গতকাল সোমবার মাস্ককে ‘অসাধারণ মানুষ’ বলেও প্রশংসা করেছেন, যা রাজনীতিতে সম্ভাব্য কৌশলগত দ্বৈত বার্তার দিকেই ইঙ্গিত দেয়।
ইলন মাস্কের ঘোষিত ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের হুমকিকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি নতুন রাজনৈতিক আন্দোলনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। এক্সে চালানো মাস্কের এক জরিপে অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশ মানুষ একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
এখন সবার চোখ সিনেটের দিকে। প্রশ্ন রয়ে গেছে—বিলটি পাস হলে মাস্ক কি সত্যিই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন, নাকি এটি কেবল প্রেসার পলিটিক্সের অংশ?