শিরোনাম |
রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া বাজারসংলগ্ন একটি ঐতিহ্যবাহী খাল আজ দখল, দূষণ ও অবহেলার শিকার হয়ে ধ্বংসের পথে।
পাহাড়ি জনপদ বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের ডাক বাংলা পাড়ায় উৎপত্তি হওয়া এই খালটি প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং গড় প্রস্থ ১৫ মিটার। সর্পিল আকৃতির এই খালটি পাহাড়ি ঢল বয়ে এনে কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়নের নারানগিরি মতি পাড়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে মিলিত হয়। তবে এটি একটি মৌসুমি খাল হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রায় শুকিয়ে যায়, আর বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানির স্রোতে আশেপাশের এলাকা প্লাবিত হয়।
একসময় এই খালকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল রাজস্থলী উপজেলার প্রাচীন বাজার ‘বাঙ্গালহালিয়া’। খালটি ছিল মাছধরা, কৃষিকাজ ও যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে বর্জ্য ফেলে ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলার ফলে খালটির স্বাভাবিক রূপ হারিয়ে গেছে। বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, প্যাথলজি ও স্থানীয় বাসিন্দারা নিয়মিতভাবে খালে বর্জ্য ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং চলাচল দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন...
বহুমুখী পণ্য রপ্তানিতে বাড়ছে সম্ভাবনা : কৃষি উপদেষ্টা
ঐকমত্য কমিশনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি, তবে উদ্বেগ-হতাশাও স্পষ্ট
খালের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এতে খালের তীর ভেঙে জমি ও বসতবাড়ি বিলীন হচ্ছে। এই কাজ বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগ আশানুরূপ নয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
খালের একাধিক অংশ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে কিছু প্রভাবশালী। এমনকি খালের মধ্যে অবৈধভাবে বসতঘর গড়ে তোলা হচ্ছে বলে জানান কাকড়াছড়ি মৌজার ভারপ্রাপ্ত হেডম্যান চাথোয়াইমং মারমা। বর্ষায় এই দখলদারির ফলে খাল ভরে গিয়ে বাজার ও আশেপাশের এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়।
৭০ বছর বয়সী স্থানীয় সানুচিং জানালেন, তার শৈশবে এই খালে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত এবং এটি ছিল জীবিকার প্রধান উৎস। কিন্তু এখন দূষণের ফলে সেই মাছ আর দেখা যায় না। খালের পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
পরিবেশবিদ ও স্থানীয় সচেতন মহল খালটি রক্ষায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের দাবি, খালের স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পুনঃখনন করতে হবে এবং খাল দখলমুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে জনসচেতনতা গড়ে তুলে দূষণ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রাঙ্গামাটির ঐতিহ্যবাহী বাঙ্গালহালিয়া খাল এখন অস্তিত্ব সংকটে। এটি শুধু একটি খাল নয়, এটি একটি জীববৈচিত্র্যময় পরিবেশ, একটি সাংস্কৃতিক ইতিহাস এবং বহু মানুষের জীবন ও জীবিকার উৎস। তাই এই খালকে রক্ষা করা সময়ের দাবি।