gramerkagoj
মঙ্গলবার ● ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
চিংড়ি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে পারে আইওটি ডিভাইস
প্রকাশ : শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪, ১০:৩৮:০০ পিএম
আকবর কবীর, শ্যামনগর:
GK_2024-02-09_65c6553ec191a.jpg

‘আগে চিংড়ি ঘেরে মাছ মারা গেলে সবাই বলতো ভাইরাস, এখন জানতে পেরেছি খাদ্য, অক্সিজেন ও লবণপানি ঠিকঠাক মতো না পেলে অথবা তাপমাত্রা পরিবর্তন হলে মাছ মারা যায়।’ এমনটাই বললেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার চিংড়ি চাষি রিনা রানী মন্ডল।
তিনি আরও বলেন, ঘের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সবসময় সেখানে থাকতে হতো। কিন্তু আইওটি ডিভাইস হাতে পাবার পর থেকে এর মাধ্যমেই তিনি ঘেরে কখন কী লাগবে তা ঘরে বসে জানতে পারছেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এতে অন্য সময়ের চেয়ে বর্তমানে তার ঘেরে মাছ উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুন।
বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই আইওটি ডিভাইস দেশের মৎস্য উৎপাদনকারী জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
শুধু রিনা রানী মন্ডলই নন, পারুল রানী মন্ডল, নয়ন মন্ডলসহ বেশ কয়েকজন চিংড়ি চাষিও সুখবর শুনিয়েছেন। তারা বলছেন, নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ঘেরের সঠিক পরিচর্যা সম্ভব হচ্ছে। ঘেরের গভীরতা কতটুকু দরকার, পর্যাপ্ত পানি আছে কিনা, লবণের মাত্রা কম না বেশি, অক্সিজেন দেয়া লাগবে কিনা-এ সবই এই ডিভাইস বলে দেয়। এজন্য তাৎক্ষণিকভাবে ঠিকঠাক ব্যবস্থা নিলে মাছ মরে না উপরন্তু উৎপাদন বেড়ে যায়।
মৎস্য অধিদপ্তরের এই প্রকল্পটির নাম ‘আইওটি বেজড স্মার্ট অ্যাকোয়াকালচার ফর শ্রিম্প কালচার টেকনোলজি ইনোভেশন, পাইলটিং অ্যান্ড কমার্শিয়ালাইজেশন সাব-প্রজেক্ট’। এতে অর্থায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন সাসটেইনেবল মেরিন অ্যান্ড ফিশারিজ প্রজেক্ট। এছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
নতুন এই প্রযুক্তির সাথে মাছ চাষিদের পরিচিত করাতে শুক্রবার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে সুশীলন গেস্টহাউজে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাইয়ুম। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা মৎস্য অফিসার আনিসুর রহমান, মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক জিয়া হায়দার চৌধুরী ও সরোজ কুমার মিস্ত্রী।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘দেশ বাঁচাতে হলে আগে কৃষিকে বাঁচাতে হবে। আর মৎস্য ছাড়া কৃষি হয় না। তাই সরকার মাছ উৎপাদনের চতুর্থ বিপ্লব ঘটাতে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত করতে চায়। উন্নত দেশগুলোতে আরও উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে। যেমন রোবটের মাধ্যমে মাছের ক্ষুধা লাগলে খাবার স্প্রে করা, মাছের অসুখ হলে তাৎক্ষণিক তা ছবিতে দেখতে পাওয়াসহ নানাবিধ প্রযুক্তি রয়েছে। ধাপে ধাপে এগুলোও দেশের চাষিদের হাতে চলে আসবে।’
স্মার্ট বাংলাদেশ বানাতে হলে চাষিদেরকেই আগে স্মার্ট হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা মৎস্য অফিসার আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, আইওটি ডিভাইসের সুফল ইতিমধ্যেই চাষিরা পেয়েছেন এবং তার সুফল ভোগ করছেন। এর ব্যবহার যত বেশি হবে মাছ উৎপাদন ততই বাড়বে বলে জানান তিনি।
কর্মশালায় উপস্থিত মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন, বেশকিছু ডিভাইস ইতিমধ্যেই চাষিদেরকে দেয়া হয়েছে। চাষিদের পক্ষে সবসময় ঘের তদারকি করা সম্ভব হয় না। তারা অনেকেই অন্যান্য পেশার সাথেও জড়িত। দূরবর্তী স্থানে থাকার সময় ঘেরের অবস্থা তারা এই ডিভাইসের মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছেন। পানির পরিমাণ কতটুকু আছে, অতিরিক্ত পানি লাগবে কিনা, লবণের মাত্রা কম না বেশি, পানিতে ফাইটোপ্ল্যাংটন (মাছের খাবার) কি পরিমাণে আছে, তাপমাত্রা কত আছে এসব তথ্য চাষিরা ঘরে বসে পাচ্ছেন।
অপর এক চিংড়ি চাষি নীলকান্ত মন্ডল বলেন, অতি শীত বা অতি গরম অথবা কোনো প্রতিকূল আবহাওয়ায় মাছ মারা যায়। এটি তারা আগে বুঝতে পারতেন তবে তা অনেক দেরীতে। এখন নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা অগ্রিম তথ্য পাচ্ছেন যা আসলেই সুফল বয়ে এনেছে।

আরও খবর

🔝