
শিক্ষা বোর্ডের নাম ভাঙিয়ে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা অব্যাহত রেখেছে। শিক্ষাবোর্ড কিছুই না জানলেও চক্রটি বিভিন্ন ব্যক্তির মোবাইলে ফোন করে ও মেসেজ দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পিনকোড চাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকে প্রতারণার শিকার হয়ে অর্থ খুইয়েছেন। আবার কেউ প্রতারণা বুঝতে পেরে প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে অভিভাবকদের পক্ষে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, যশোর কেতোয়ালি থানা ও পত্রিকা দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডের পক্ষেও থানায় জিডি করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
করোনা সংকটের দু’বছরে নানা ক্যাটাগরির ডিজিটাল প্রতারণার মধ্যে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা দেয়া আলোচিত ডিজিটাল প্রতারণা। শতাধিক প্রতারিত অভিভাবকের অভিযোগ পড়েছে বিভিন্ন দপ্তরে। বিভিন্ন ফোন নাম্বারে ফোন করে ও মেসেজ দিয়ে বলা হচ্ছে উপবৃত্তির ৪ হাজার ২শ’ টাকা দেয়া হচ্ছে। ওই টাকা নেয়ার জন্য শিক্ষা বোর্ডের নাম ভাঙিয়ে ০১৯১১-৮৩২৫১৬, ০১৬১৪-২৫৫২০৮ ও ০১৮৩৬-৬৭৮৬৭৬ এই নাম্বারে কথা বলতে বলা হচ্ছে এবং গোপন নাম্বার ১৯৫৮ শিক্ষামন্ত্রী এবং একটি ওয়েবসাইট নাম্বার দেয়া আছে, যা সবই ভুয়া। সাধারণ মানুষ বা অভিভাবক উপবৃত্তির বিষয় সত্য মনে করে ওই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে তাদের চাহিদা মত বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন ভার্সনের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পিন কোড দিয়ে দিচ্ছেন চক্রের কাছে। আর তারা সহজেই টাকা বের করে নিচ্ছে ওই সব একাউন্ট থেকে।
ওই চক্রের প্রতারণার শিকার একজন যশোর উপশহরের গোলাম মর্তুজা রাঈন। তার ব্যবহৃত ০১৭১১-৩৬৫৯৮৭ নাম্বারে গত ১০ মে একটি মেসেজ আসে। তাতে লেখা রয়েছে প্রিয় শিক্ষার্থী কোভিড ১৯ এর কারণে তোমাদের উপবৃত্তির ৪২০০ টাকা দেয়া হচ্ছে। তা গ্রহনের জন্য ০১৯১১-৮৩২৫১৬ ও ০১৬১৪-২৫৫২০৮ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। বিষয়টি সেরেফ প্রতারণা বলে পরিস্কার হন গোলাম মর্তুজা। এরপর তিনি এ ব্যাপারে প্রথমে যশোর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানান। এছাড়া শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও যশোর কেতোয়ালি থানায় করা অভিযোগে গোলাম মর্তুজা জানিয়েছেন, শিক্ষাবৃত্তির মত একটি কমসূচির অর্থ সরকার কর্তৃক এভাবে মেসেজ করে দেয়া হয় কিনা। যদি তা না হয় তাহলে এটা একটি প্রতারক চক্রের কাজ। দ্রুত তদন্ত করে ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে প্রতারনার শিকার হন যশোর সিটি কলেজ পাড়ার পুরোনো পার্টস গাড়ি ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান। তাকেও একই ধরণের মেসেজ ও ফোন করা হয়। চাওয়া হয় পিন কোড। তার বিকাশ একাউন্ট থেকে তুলে নেয়া হয় ১০ হাজার টাকা। একইভাবে যশোর আর আর এফ কর্মচারী চৌগাছা এবিসিডি কলেজের ছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বীণার মোবাইলে পরপর কয়েক দিন ফোন করা হয় এবং মেসেজ দেয়া হয়। বলা হয় উপবৃত্তির ৫ হাজার টাকা এসেছে। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফোন করা হয়। বলা হয় বিকাশ একাউন্টের পিন কোড দিয়ে ৩ দিয়ে গুন করে যা হয় তা মেসেজ করতে। ভ্যাট কাটতে হবে। প্রতারণার শিকার হন তিনি। তার একাউন্ট থেকে ৯ হাজার টাকা তুলে নেয় চক্রটি। দৈনিক গ্রামের কাগজের সার্কুলেশন ম্যানেজার বাউলিয়ার আব্দুল কুদ্দুসের ০১৭৯১৩৩৪২৩৩ নাম্বারে মেসেজ করে ৪ হাজার ৫শ’ টাকার উপবৃত্তি দেয়া হবে বলে জানানো হয়। তার কাছেও পিন কোড চাওয়া হয়। তিনি প্রতারণা বুঝতে পেরে পিন কোড দেননি। এভাবে প্রতারিত হয়েছেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মচারী যশোর উপশহরের শারমিন সুলতানা। তিনিও প্রতারণার শিকার হয়ে ৬ হাজার টাকা খুইয়েছেন।
এভাবে অনেক প্রতারণার বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানায় এ সংক্রান্ত জিডি হচ্ছে, অভিযোগ হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম সেল কিছু জিডির উপর তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে টাকা উদ্ধার করে দিয়েছে। এছাড়া যশোর শিক্ষা বোর্ডের কাছেও প্রতিনিয়ত অভিযোগ যাচ্ছে। বোর্ড কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে পরিস্কার হচ্ছেন চক্রটি বোর্ডের কেউ নয়, সেরেফ প্রতারক।
যশোর কোতোয়ালি থানা সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে যশোর শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সহজ সরল মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে অভিযোগ করেছেন, কেউ জিডিও করেছেন। কৃষক, গৃহবধূ, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ছাত্র, এমনকি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যও রয়েছেন। আইটি প্রতারক চক্রটি নানা প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আহসান হাবীব গ্রমের কাগজকে জানিয়েছেন, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র বোর্ডের নাম ভাঙিয়ে ডিজিটাল প্রতারণা করে চলেছে। প্রতিনিয়তই বোর্ডে এ সংক্রান্ত তথ্য আসছে। মূলত ওই চক্রের কেউই বোর্ডের কেউ নয়। ওই নাম্বারগুলোও বোর্ডের কারো নয়। এ ব্যাপারে বোর্ডের পক্ষে যশোর কোতোয়ালি থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশ এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছে। দ্রুতই ওই চক্রের মূলোৎপাটন দাবি করেন তিনি।