
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কৃষি আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বর্তমান সরকারের আমলে কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ ও তৎপরতা নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে জনগণের নিকট এদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা সবসময় ক্ষমতা পাকাপোক্ত নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে বলেই জনকল্যাণে কোন কাজ করে না। যার ফলে তাদের শাসন আমলে বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষি খাত সবসময় বঞ্চিত ও অবহেলিত, উপেক্ষিত থাকে।
আজ মঙ্গলবার (১৭ মে) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সবাই সবসময় বলে থাকি কৃষি আমাদের মেরুদন্ড কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জিয়াউর রহমান পরবর্তীতে খালেদা জিয়া ছাড়া কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বর্তমান সরকার সেই কাজগুলোই হাতে নেয় যেখানে তাদের নিজস্ব মুনাফা হয়, কমিশন পাবে। কৃষি ক্ষেত্রে কৃষকদের স্বার্থে তারা এক ধরনের কার্ড নির্ধারণ করেছিল কিন্তু তা কৃষকের হাতে পৌঁছে দিতে পারেনি, এমন কি কৃষি উপকরণ মেশিন শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি বছরে সুনামগঞ্জ জেলায় বাঁধ নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ছিল ১২২ কোটি টাকা এবং গত ৫ বছরে এই টাকার পরিমাণ ছিল ৬২১ কোটি টাকা, যা বাঁধ রক্ষায় তেমন কোন কাজে আসেনি। বরং এই বরাদ্দকৃত টাকা ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী-এমপি, সরকারি কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকতারা এই টাকা হরিলুট করেছে। যে সমস্ত বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তা এতই দুর্বল যে, মাত্র ২৪ ঘণ্টার পানির চাপ সামলাতে পারেনি। প্রতি বছর এভাবে বাঁধ নির্মাণের নামে হাওড় অঞ্চলে সরকারি অর্থ লুটের মহোৎসব চলে। এর ফলে কৃষকরা হয় সর্বশান্ত, অপরদিকে সরকারি দলের লোকজন ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা হয় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।
'শুধু দেশের হাওড় অঞ্চলই নয়, এই চিত্র দেশের সার্বিক কৃষি সেক্টরে। বর্তমান অবৈধ সরকারের আমলে সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।'
অনিয়ম ও দুর্নীতি করার লক্ষ্যে যে যে ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত সেই বিবেচনা করেই সরকারের মন্ত্রণালয়ও নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব।
সরকারি দুর্নীতিরোধ, হাওড়ের কৃষকদের দুর্দশা লাঘব ও শষ্য নিরাপত্তা রক্ষায় জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সুপারিশগুলো হলো-
হাওড় রক্ষা বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ করতে হবে। এই দুর্নীতির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে; বছর বছর বাঁধ নির্মাণ না করে সিমেন্ট ও বালু দিয়ে তৈরীকৃত ব্লক ফেলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে; ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনা সুদে বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে; ঋণগ্রস্ত কৃষকের ঋণের সুদ মওকুফ এবং স্বাভাবিক অবস্থা না ফেরা পর্যন্ত ঋণের কিস্তি নেয়া বন্ধ করতে হবে; হাওড় অঞ্চলে শষ্য বীমা চালু করতে হবে; হাওড় অঞ্চলের কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য গণমূখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে; দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ানপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দীন আলম, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, জামাল উদ্দিন খান মিলন,খলিলুর রহমান ইব্রাহিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, ইশতিয়াক নাসির, দফতর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলম, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক কাদের সিদ্দিকী প্রমুখ।