gramerkagoj
রবিবার ● ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
এক ঘরেই সব নিয়ে বসবাস মাছুমার
প্রকাশ : সোমবার, ১ মার্চ , ২০২১, ০৩:৪১:১৩ পিএম
দিনাজপুর সংবাদদাতা ::
1614592611.jpg
জন্ম থেকেই তার কষ্টের জীবন। জন্মগতভাবেই তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। এক পায়ে ভর করে পথ চলতে হয় তাকে। তবুও জীবনযুদ্ধে থেমে যাননি মাছুমা আকতার।জন্মের ৬ বছরের মাথায় বাবাকে হারিয়েছেন। প্রতিবন্ধী মেয়ে আর ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন মাছুমার মা মাজেদা বেওয়া। অভাবের সংসারে অন্যের দেয়া খাবারেই কোনোমতে চলত তাদের জীবন। এরপরও নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে ২০০৪ বিয়ে হয় মাছুমার।কিন্তু বিধির নির্মম পরিহাস, সেই সংসারও খুব বেশি দিন টেকেনি তার। এখন দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এক খুপড়ি ঘরে গরু-ছাগলের সঙ্গে বসবাস করছেন।দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর নাফানগর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী মাছুমা আকতারের সংসারের চিত্র এমনই। মাছুমা ওই গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের মেয়ে। মাছুমা আকতারের বর্তমান বয়স (৩৫)।মাছুমা আকতারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের মাঝখানে একটি টিনসেড ঘরের বারান্দায় এক পা দিয়ে সেলাই মেশিনের চাকা ঘুরিয়ে আপন মনে কাপড় সেলাই করছেন মাছুমা। ছোট মেয়ে লামীয়া বাইরে খেলা করছেন।ছেলে মাসুদ (১৩) পঞ্চম শ্রেণিতে এবং মেয়ে লামীয়া (৭) প্রথম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। যে ঘরে তারা বসবাস করেন সেই ঘরের একপাশে একটি গরু আর অন্যপাশে ৪টি ছাগল থাকে। অন্যদের গরু-ছাগল বর্গা নিয়ে পালন করেন।ঘরের বাইরে একটি চৌকি নিয়ে কয়েকটি বিস্কুটের প্যাকেট, চানাচুর, চকলেট আর চিপসের প্যাকেট নিয়ে বসে আছেন তার ছেলে মাসুদ।বাড়ির বারান্দায় বসে তার সঙ্গে কথা হয়। মাছুমা বলেন, আমি জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী। কষ্ট করে লাঠি নিয়ে হাঁটাচলা করি। এভাবেই আমি নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। আমার বিয়ে হয়েছিল ময়মনসিংহের জামালপুরে। স্বামী আমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছেন প্রায় তিন বছর আগে। আমি অনেক কষ্ট করে খাই। কখনো দর্জির কাজ করি। কাপড় হলে সেলাই করি না হলে মানুষের কাছে চেয়ে খাই।তিনি বলেন, বৃষ্টি হলে আমার ঘরে খুব পানি পড়ে। ঘরে থাকতে পারি না। তখন আমি ছেলে মেয়ে নিয়ে মানুষের বাসায় গিয়ে থাকি। এভাবেই দুই সন্তান নিয়ে আমি খুব কষ্টে জীবন পার করছি। সরকারতো গরিব অসহায় প্রতিবন্ধী মানুষদের বাড়ি করে দিচ্ছে। তাই আমার একটা অনুরোধ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন আমাকে একটা বাড়ি করে দেন। তাহলে হয়তো ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকমে জীবনটা কাটাতে পারব।জানতে চাইলে মাছুমার মা মাজেদা বেওয়া বলেন, জন্মের পর থেকেই আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী। মেয়েকে বিয়ে দিলেও জামাই মেয়ে ও নাতি-নাতনিকে রেখে পালিয়ে গেছে। এখন অনেক কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে মাছুমা। তার থাকার ঘরটি বৃষ্টি এলে পুরো ভিজে যায়। পাতিল ধরে রাত পার করতে হয় তাদের।প্রতিবেশী আক্তার আলী বলেন, দীর্ঘদিন থেকে মাছুমা কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করছে। লাঠিতে ভর দিয়ে চলে। কখনো কাপড় সেলাই আবার কখনো অন্যের দেওয়া খাবারেই অনেক কষ্টে দিন পার করে সে।বোচাগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর নাফানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ পারভেজ (শাহান) বলেন, আমার জানামতে মাছুমা অনেক কষ্ট করে জীবন যাপন করেন। ইতোমধ্যেই মাসছুাকে সরকারি সহায়তা হিসেবে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড প্রদান করা হয়েছে। তার একটি মাত্র ঘর। সেই ঘরে গরু ছাগলের সঙ্গে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকেন।

আরও খবর

🔝