Published : Thursday, 25 March, 2021 at 8:16 PM, Count : 246

পাঠক প্রিয় দৈনিক গ্রামের কাগজ ২৩ বছরে পদার্পণ করেছে। প্রায় দুই যুগের পথচলায় অন্যায়, অসঙ্গতি, দুর্নীতি, উন্নয়ন, প্রাপ্তি, প্রত্যাশা সমানভাবে গ্রামের কাগজ তুলে ধরছে। পাঠকের আগ্রহ আর সন্তুষ্টি বজায় রাখতে এ পথচলায় কাগজের পাতায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সংযুক্তি। আক্কেল চাচার চিঠি তার অন্যতম একটি। আঞ্চলিক ভাষায় প্রতিদিনের এ আয়োজনটি এখন হাজারো পাঠকের ‘ভালো থাকার ওষুধ’ হয়ে উঠেছে।
চার পৃষ্ঠা থেকে ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র ৮ পৃষ্ঠার দৈনিক হিসেবে পথচলা শুরু করে গ্রামের কাগজ। নতুন নতুন চিন্তার সমন্বয় ঘটাতে সে সময় গ্রামের কাগজের পাতায় যুক্ত হয় আক্কেল চাচার চিঠি। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তা পায় চিঠি। ‘আলাম কনে মলাম যে!’ এখন সকলের মুখে মুখে ফেরে। আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত এ চিঠি পড়ে ‘অভাগা আক্কেল চাচা’র ০১৭২৮৮৭১০০৩ নম্বরে প্রতিদিন নিজের অভিব্যক্তি জানাতে ভুল করেন না ‘চাচার’ শত শত ‘ভাইপো’, ‘ভাইঝি’সহ চিঠির পাঠকবৃন্দ।
গ্রামের কাগজের উদ্দেশ্য ছিলো আঞ্চলিক ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে সামান্য হলেও একটু প্রচেষ্টা রাখা। দিন দিন আঞ্চলিক ভাষা তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের অনেকে নিজের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে পারে না। এরকম চিন্তা থেকে চার বছর আগে গ্রামের কাগজের পাতায় আক্কেল চাচার চিঠি যুক্ত করার চিন্তা। সে থেকে নিয়মিত চিঠি লিখছেন তিনি।
গ্রামের কাগজ দপ্তরে প্রায়ই কেউ কেউ ভিড় করেন চাচার সাথে দেখা করতে ও কথা বলতে। যদিও গ্রামের কাগজের অনেক কর্মীও এখনো চাচার দেখা পাননি। খেটে খাওয়া সৃজনশীল সাধারণ মানুষ আক্কেল চাচা। হাস্যরসের ছলে আঞ্চলিক ভাষার মাধ্যমে চাচা অকপটে অনেক অপ্রিয় সত্যকে তুলে ধরেন। চেতনার খোরাক জোগাতে মাঝে মাঝে প্রশ্ন রাখেন আবার সমাধানও চান। যা হাজারো পাঠককে আন্দোলিত করে। সত্য অনুধাবনে দ্বিতীয়বার ভাবতেও বাধ্য করে।
শত সমস্যা অপ্রাপ্তির মাঝে আক্কেল চাচার চিঠি অনেকের কাছে ‘ভালো থাকার ওষুধ’ হয়ে উঠেছে। গ্রামের কাগজের প্রতিষ্ঠার ২৩ বছরের প্রাপ্তি অনুসন্ধানে গিয়ে পাঠকদের কাছ থেকে উঠে এসেছে এ মতামত। তারা জানিয়েছেন গতানুগতিক অন্যান্য সংবাদের পাশাপাশি প্রায় সকলেরই পছন্দের বিষয় ‘আক্কেল চাচার চিঠি’। একশ’জন পাঠকের উপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। পঞ্চাশ উর্ধ ১০ জন পাঠকের মধ্যে তিনজন জানিয়েছেন কাগজ হাতে নিয়ে তারা প্রথমেই ‘আক্কেল চাচার চিঠি’ পড়েন। ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী ৪০ জন তরুণ পাঠক জানান তারা অনলাইনে ‘চাচার চিঠি’ পড়েন। কাগজের ইউটিউব চ্যানেলে চাচার চিঠি পাঠও তাদের পছন্দ বলে জানান। দশজন সরকারি কর্মকর্তা চাচার চিঠি সম্পর্কে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ক্ষেত্র বিশেষে চাচার চিঠির ভাষা সাথে তাদের মনের কথারও মিল আছে। এদিকে ২৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী আরও ৪০ জন পাঠক জানিয়েছেন চিঠির ভাষার থেকে এর ভিতরকার বার্তাটা তাদের স্পর্শ করে বেশি। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট নারী ও পুরুষ পাঠকরা জানান, গ্রামের কাগজ নিরপেক্ষতার বিচারে তার স্বকীয়তা বজায় রেখেছে। আক্কেল চাচার চিঠি গ্রামের কাগজের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন তারা।
বিভিন্ন বয়সের ও শ্রেণি পেশার এ পাঠকরা এক কথায় স্বীকার করেন যে, ক্ষণিকের জন্য হলেও ভাবনার আড়ষ্টতা চাঙ্গা হয় এ চিঠি পড়লে। সমাজ, রাজনীতি, পরিবার, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক ভাবনা কোনো কিছুই চিঠির বিষয়ের বাইরে নয়। গভীরে গিয়ে ভাবলে যেমন এ চিঠি অনেক কিছু শেখায় বা জানায় তেমনি উপরিতলে সাধারণ অর্থে আনন্দের খোরাক জোগায়। প্রতিদিনের তিন কলাম চার ইঞ্চির এ বিষয়টি তাই সকলের ‘ভালো থাকার ওষুধ’।